• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩১ অপরাহ্ন

বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর এখন ঢাকা

Avatar
সেন্ট্রাল ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সংবাদটির পাঠক ১৫ জন

এনবি নিউজ : বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর এখন ঢাকা। ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০টির বেশি শহরে যান চলাচলের গতি বিশ্লেষণে এই চিত্র উঠে এসেছে। যান চলাচলে এই ধীরগতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তিন লাখের বেশি মানুষের বসবাস রয়েছে, এমন সব শহরে গাড়িতে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে কত সময় লেগেছে, সেই তথ্য গুগল ম্যাপ থেকে সংগ্রহ করে গবেষণায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহের বিভিন্ন দিন এবং দিনের বিভিন্ন সময়ে যাতায়াতের তথ্য নেওয়া হয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গতির ১০০ শহরের মধ্যে ৮৬টিই যুক্তরাষ্ট্রের। প্রতিবেদনে সবচেয়ে দ্রুতগতির যে ২০টি শহরের নাম এসেছে, তার মধ্যে ১৯টি যুক্তরাষ্ট্রের। একটি কানাডার অন্টারিও অঙ্গরাজ্যের উইন্ডসর।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় গবেষণাটি করেছেন ফিনল্যান্ডের আলটো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনব্যবস্থার অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রত্যয় আমান আকবর, কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক ভিক্টর কুচিও, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিয়েল এস্টেট বিভাগের অধ্যাপক গিলেস ডুরানটন এবং যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক অ্যাডাম স্টোরিগার্ড।

গবেষণায় সবচেয়ে বেশি গতির শহর হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্ট শহরের নাম এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গতির ১০০ শহরের মধ্যে ৮৬টিই যুক্তরাষ্ট্রের। প্রতিবেদনে সবচেয়ে দ্রুতগতির যে ২০টি শহরের নাম এসেছে, তার মধ্যে ১৯টি যুক্তরাষ্ট্রের। একটি কানাডার অন্টারিও অঙ্গরাজ্যের উইন্ডসর।

সবচেয়ে ধীরগতির ২০টি শহরের তালিকায় ঢাকার পরে রয়েছে নাইজেরিয়ার দুই শহর—লাগোস ও ইকোরোদু। এরপরে রয়েছে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা। ধীরগতির শহরের তালিকায় ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশের দুই শহর—ময়মনসিংহ (৯ম) ও চট্টগ্রাম (১২তম) রয়েছে। ভারতের কলকাতা, মুম্বাইসহ আটটি শহর রয়েছে এই তালিকায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ধনী দেশগুলোর শহরে গাড়িতে চলাচল দরিদ্র দেশগুলোর তুলনায় ৫০ শতাংশের মতো দ্রুত হয়। এটা সম্ভব হয় ধনী দেশের শহরগুলোতে বড় বড় রাস্তা এবং অনেক ফাঁকা জায়গা থাকার কারণে। এর ফলে রাস্তায় বেশি গাড়ি নেমেও যানজট ছাড়া চলতে পারে।

রাস্তায় যানবাহনের চাপ কম থাকার পরেও সবচেয়ে ধীরগতির ২০টি শহরের তালিকাও করা হয়েছে গবেষণায়। সেখানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা। তালিকায় বাংলাদেশের আরও চারটি শহর রয়েছে—খুলনা (৪র্থ), ময়মনসিংহ (৫ম), চট্টগ্রাম (১৮তম) ও কুমিল্লা (১৯তম)।

মানুষের চলাচল একটি জরুরি বিষয়। শহর গড়ে উঠেছে এ কারণে যে অল্প জায়গায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনোদনের সুবিধা থাকবে। মানুষ দ্রুত চলাচল করে সেই সুবিধা নিতে পারবে। তিনি বলেন, ঢাকায় দ্রুত চলাচলের সুবিধা নেই।

গবেষণাটির ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী টাইম গত বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতি ও দ্রুতগতির দুই শহরে চলাচলে কেমন সময় লাগে, তার একটি উদাহরণ দেওয়া হয়। বলা হয়, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৯ মাইল দূরের গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে গাড়িতে যেতে সময় লাগে গড়ে ৫৫ মিনিট। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্ট শহরে একই দূরত্ব যেতে সময় লাগে মাত্র ৯ মিনিট। দুই কোটি মানুষের শহর ঢাকা আর চার লাখ মানুষের শহর ফ্লিন্টে যাতায়াতে সময়ের এই ব্যবধান শুধু গাড়ির চাপের কারণে নয়, এখানে অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। যার ফলে মধ্যরাতেও ঢাকায় ওই দূরত্বে চলাচল করতে আধা ঘণ্টা লাগে, যা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির শহরে প্রয়োজনীয় সময়ের তিন গুণ বেশি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাস্তায় চলাচলের গতি ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়াতে পারলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১০ শতাংশ বাড়ে।

গবেষকেরা দেখেছেন, ৩৮টি ধনী দেশের জোট অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সদস্যদেশগুলোর মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতে গাড়ি ও মানুষের গতি বেশি। ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির গতি গড়ে ২৭ শতাংশ বেশি। আবার দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের শহরে গতি কম। অন্যান্য দরিদ্র দেশের তুলনায় বাংলাদেশে গতি কম গড়ে ২০ শতাংশ।

কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন গবেষকেরা। তাঁরা দেখেছেন, ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোর পার্থক্য অনেক বেশি। ওই সব ধনী দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোর জনসংখ্যা ২৪ শতাংশ কম, শহরগুলো প্রায় ৭২ শতাংশ বড়। যুক্তরাষ্ট্রের শহরে বড় বড় রাস্তা বেশি ৬৭ শতাংশ।

একইভাবে বাংলাদেশের শহরে (একই আয়তনের) অন্যান্য দেশের শহরের তুলনায় জনসংখ্যা ৪০ শতাংশ বেশি এবং বড় রাস্তা ৪২ শতাংশ কম। এ কারণে বাংলাদেশের শহরগুলো ধীরগতির।

এক দশক ধরেই ময়মনসিংহ নগরে যানজট বাড়ছে। বর্তমানে তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্থানীয় নাগরিক সংগঠনের নেতারা বলেন, নগরের প্রধান প্রধান সড়কসহ প্রায় সব সড়কই সরু। নগরে মানুষ বাড়লেও সড়ক উন্নয়ন হয়নি।

শহরে হেঁটে যাতায়াতের চিন্তা মধ্যযুগীয়

গবেষকেরা বলছেন, তিনটি কারণে তাদের এই অনুসন্ধান গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, সারা বিশ্বে নগর যাতায়াত নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই গবেষণার ফলাফল নীতি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। নাগরিক গতির একটি নির্ধারক বড় রাস্তা। বড় রাস্তা ভিড় কমায় বিষয়টি এমন নয়, বরং বড় রাস্তা গতি বাড়ায়।

দ্বিতীয়ত, শহরে বহু মানুষ কর্মক্ষেত্র, স্কুল ও বিনোদনকেন্দ্রের হাঁটার দূরত্বে বসবাস করে না। তারা দ্রুতগতির এবং বিশ্বস্ত যাতায়াতব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে চায়। আধুনিক মহানগরের প্রয়োজনীয় শর্ত হচ্ছে দ্রুতগতির যান্ত্রিক যান। জটিল উৎপাদন নেটওয়ার্ক ও বিচিত্র ভোগের বর্তমান শহরে হেঁটে যাতায়াতের চিন্তা মধ্যযুগীয়।

তৃতীয়ত, পরিবার ও সরকার প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করে নগর যাতায়াতের ক্ষেত্রে। কিন্তু একটি শহর ভ্রমণ বা চলাফেরার জন্য কতটা সুন্দর, তা কমই জানা থাকে। নগর–পরিকল্পনাবিদেরা খুব কমই জানেন যে একই ধরনের শহরের তুলনায় তাদের শহরটি কতটা পিছিয়ে বা কেন পিছিয়ে।
যানজট বেড়েছে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে

চট্টগ্রামে গত এক দশকে সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়নে ১২ হাজার কোটি টাকায় অন্তত ২৩টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর বেশির ভাগ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও যানজট না কমে বেড়েছে। নগরের বিভিন্ন এলাকায় দিনের বিভিন্ন সময়ে যানজট লেগে থাকে।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও সড়ক পরিবহনবিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, যানজটের মূল কারণ চিহ্নিত না করে শুধু সড়ক সম্প্রসারণ, উড়ালসড়ক ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করলে যানজট দূর হবে না। নগরের যানজট নিরসন করার জন্য যা যা প্রয়োজন, তা না করে ইচ্ছামতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও এর জন্য যে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দরকার ছিল, তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

এক দশক ধরেই ময়মনসিংহ নগরে যানজট বাড়ছে। বর্তমানে তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্থানীয় নাগরিক সংগঠনের নেতারা বলেন, নগরের প্রধান প্রধান সড়কসহ প্রায় সব সড়কই সরু। নগরে মানুষ বাড়লেও সড়ক উন্নয়ন হয়নি। এ ছাড়া অবৈধ যানবাহন চলাচল ও রেললাইন যানজটের বড় কারণ।

ময়মনসিংহের নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বলেন, যানজট নিরসনের জন্য সড়কগুলো প্রশস্ত করা এবং যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
যানজটের ক্ষতি

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গত বুধবার এক জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরে জানায়, ঢাকাবাসীকে সড়কে প্রতি ২ ঘণ্টায় ৪৬ মিনিট কাটাতে হয় যানজটে বসে। বছরে জনপ্রতি গড়ে ২৭৬ ঘণ্টা নষ্ট হয় যানজটে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক বলেন, মানুষের চলাচল একটি জরুরি বিষয়। শহর গড়ে উঠেছে এ কারণে যে অল্প জায়গায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনোদনের সুবিধা থাকবে। মানুষ দ্রুত চলাচল করে সেই সুবিধা নিতে পারবে। তিনি বলেন, ঢাকায় দ্রুত চলাচলের সুবিধা নেই। দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনা বদলে স্বল্প মেয়াদে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা এখানে করা হয়েছে। এখন বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনা ছাড়া শুধু উন্নয়ন প্রকল্প দিয়ে সমস্যার সমাধান হয় না।

সামছুল হক আরও বলেন, ‘ঢাকার ওপর চাপ কমাতে বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। শহরে ছোট গাড়ি, রিকশা ও মোটরসাইকেল কমাতে হবে। তা না করে আমরা কাজ করছি উল্টো। এর ফলে বিপুল ব্যয়ে প্রকল্প হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা যাচ্ছে না।’এনবি নিউজ : বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর এখন ঢাকা। ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০টির বেশি শহরে যান চলাচলের গতি বিশ্লেষণে এই চিত্র উঠে এসেছে। যান চলাচলে এই ধীরগতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তিন লাখের বেশি মানুষের বসবাস রয়েছে, এমন সব শহরে গাড়িতে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে কত সময় লেগেছে, সেই তথ্য গুগল ম্যাপ থেকে সংগ্রহ করে গবেষণায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহের বিভিন্ন দিন এবং দিনের বিভিন্ন সময়ে যাতায়াতের তথ্য নেওয়া হয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গতির ১০০ শহরের মধ্যে ৮৬টিই যুক্তরাষ্ট্রের। প্রতিবেদনে সবচেয়ে দ্রুতগতির যে ২০টি শহরের নাম এসেছে, তার মধ্যে ১৯টি যুক্তরাষ্ট্রের। একটি কানাডার অন্টারিও অঙ্গরাজ্যের উইন্ডসর।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় গবেষণাটি করেছেন ফিনল্যান্ডের আলটো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনব্যবস্থার অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রত্যয় আমান আকবর, কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক ভিক্টর কুচিও, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিয়েল এস্টেট বিভাগের অধ্যাপক গিলেস ডুরানটন এবং যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক অ্যাডাম স্টোরিগার্ড।

গবেষণায় সবচেয়ে বেশি গতির শহর হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্ট শহরের নাম এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গতির ১০০ শহরের মধ্যে ৮৬টিই যুক্তরাষ্ট্রের। প্রতিবেদনে সবচেয়ে দ্রুতগতির যে ২০টি শহরের নাম এসেছে, তার মধ্যে ১৯টি যুক্তরাষ্ট্রের। একটি কানাডার অন্টারিও অঙ্গরাজ্যের উইন্ডসর।

সবচেয়ে ধীরগতির ২০টি শহরের তালিকায় ঢাকার পরে রয়েছে নাইজেরিয়ার দুই শহর—লাগোস ও ইকোরোদু। এরপরে রয়েছে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা। ধীরগতির শহরের তালিকায় ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশের দুই শহর—ময়মনসিংহ (৯ম) ও চট্টগ্রাম (১২তম) রয়েছে। ভারতের কলকাতা, মুম্বাইসহ আটটি শহর রয়েছে এই তালিকায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ধনী দেশগুলোর শহরে গাড়িতে চলাচল দরিদ্র দেশগুলোর তুলনায় ৫০ শতাংশের মতো দ্রুত হয়। এটা সম্ভব হয় ধনী দেশের শহরগুলোতে বড় বড় রাস্তা এবং অনেক ফাঁকা জায়গা থাকার কারণে। এর ফলে রাস্তায় বেশি গাড়ি নেমেও যানজট ছাড়া চলতে পারে।

রাস্তায় যানবাহনের চাপ কম থাকার পরেও সবচেয়ে ধীরগতির ২০টি শহরের তালিকাও করা হয়েছে গবেষণায়। সেখানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা। তালিকায় বাংলাদেশের আরও চারটি শহর রয়েছে—খুলনা (৪র্থ), ময়মনসিংহ (৫ম), চট্টগ্রাম (১৮তম) ও কুমিল্লা (১৯তম)।

মানুষের চলাচল একটি জরুরি বিষয়। শহর গড়ে উঠেছে এ কারণে যে অল্প জায়গায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনোদনের সুবিধা থাকবে। মানুষ দ্রুত চলাচল করে সেই সুবিধা নিতে পারবে। তিনি বলেন, ঢাকায় দ্রুত চলাচলের সুবিধা নেই।

গবেষণাটির ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী টাইম গত বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতি ও দ্রুতগতির দুই শহরে চলাচলে কেমন সময় লাগে, তার একটি উদাহরণ দেওয়া হয়। বলা হয়, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৯ মাইল দূরের গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে গাড়িতে যেতে সময় লাগে গড়ে ৫৫ মিনিট। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্ট শহরে একই দূরত্ব যেতে সময় লাগে মাত্র ৯ মিনিট। দুই কোটি মানুষের শহর ঢাকা আর চার লাখ মানুষের শহর ফ্লিন্টে যাতায়াতে সময়ের এই ব্যবধান শুধু গাড়ির চাপের কারণে নয়, এখানে অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। যার ফলে মধ্যরাতেও ঢাকায় ওই দূরত্বে চলাচল করতে আধা ঘণ্টা লাগে, যা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির শহরে প্রয়োজনীয় সময়ের তিন গুণ বেশি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাস্তায় চলাচলের গতি ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়াতে পারলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১০ শতাংশ বাড়ে।

গবেষকেরা দেখেছেন, ৩৮টি ধনী দেশের জোট অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সদস্যদেশগুলোর মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতে গাড়ি ও মানুষের গতি বেশি। ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির গতি গড়ে ২৭ শতাংশ বেশি। আবার দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের শহরে গতি কম। অন্যান্য দরিদ্র দেশের তুলনায় বাংলাদেশে গতি কম গড়ে ২০ শতাংশ।

কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন গবেষকেরা। তাঁরা দেখেছেন, ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোর পার্থক্য অনেক বেশি। ওই সব ধনী দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোর জনসংখ্যা ২৪ শতাংশ কম, শহরগুলো প্রায় ৭২ শতাংশ বড়। যুক্তরাষ্ট্রের শহরে বড় বড় রাস্তা বেশি ৬৭ শতাংশ।

একইভাবে বাংলাদেশের শহরে (একই আয়তনের) অন্যান্য দেশের শহরের তুলনায় জনসংখ্যা ৪০ শতাংশ বেশি এবং বড় রাস্তা ৪২ শতাংশ কম। এ কারণে বাংলাদেশের শহরগুলো ধীরগতির।

এক দশক ধরেই ময়মনসিংহ নগরে যানজট বাড়ছে। বর্তমানে তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্থানীয় নাগরিক সংগঠনের নেতারা বলেন, নগরের প্রধান প্রধান সড়কসহ প্রায় সব সড়কই সরু। নগরে মানুষ বাড়লেও সড়ক উন্নয়ন হয়নি।

শহরে হেঁটে যাতায়াতের চিন্তা মধ্যযুগীয়

গবেষকেরা বলছেন, তিনটি কারণে তাদের এই অনুসন্ধান গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, সারা বিশ্বে নগর যাতায়াত নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই গবেষণার ফলাফল নীতি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। নাগরিক গতির একটি নির্ধারক বড় রাস্তা। বড় রাস্তা ভিড় কমায় বিষয়টি এমন নয়, বরং বড় রাস্তা গতি বাড়ায়।

দ্বিতীয়ত, শহরে বহু মানুষ কর্মক্ষেত্র, স্কুল ও বিনোদনকেন্দ্রের হাঁটার দূরত্বে বসবাস করে না। তারা দ্রুতগতির এবং বিশ্বস্ত যাতায়াতব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে চায়। আধুনিক মহানগরের প্রয়োজনীয় শর্ত হচ্ছে দ্রুতগতির যান্ত্রিক যান। জটিল উৎপাদন নেটওয়ার্ক ও বিচিত্র ভোগের বর্তমান শহরে হেঁটে যাতায়াতের চিন্তা মধ্যযুগীয়।

তৃতীয়ত, পরিবার ও সরকার প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করে নগর যাতায়াতের ক্ষেত্রে। কিন্তু একটি শহর ভ্রমণ বা চলাফেরার জন্য কতটা সুন্দর, তা কমই জানা থাকে। নগর–পরিকল্পনাবিদেরা খুব কমই জানেন যে একই ধরনের শহরের তুলনায় তাদের শহরটি কতটা পিছিয়ে বা কেন পিছিয়ে।
যানজট বেড়েছে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে

চট্টগ্রামে গত এক দশকে সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়নে ১২ হাজার কোটি টাকায় অন্তত ২৩টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর বেশির ভাগ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও যানজট না কমে বেড়েছে। নগরের বিভিন্ন এলাকায় দিনের বিভিন্ন সময়ে যানজট লেগে থাকে।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও সড়ক পরিবহনবিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, যানজটের মূল কারণ চিহ্নিত না করে শুধু সড়ক সম্প্রসারণ, উড়ালসড়ক ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করলে যানজট দূর হবে না। নগরের যানজট নিরসন করার জন্য যা যা প্রয়োজন, তা না করে ইচ্ছামতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও এর জন্য যে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দরকার ছিল, তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

এক দশক ধরেই ময়মনসিংহ নগরে যানজট বাড়ছে। বর্তমানে তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্থানীয় নাগরিক সংগঠনের নেতারা বলেন, নগরের প্রধান প্রধান সড়কসহ প্রায় সব সড়কই সরু। নগরে মানুষ বাড়লেও সড়ক উন্নয়ন হয়নি। এ ছাড়া অবৈধ যানবাহন চলাচল ও রেললাইন যানজটের বড় কারণ।

ময়মনসিংহের নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বলেন, যানজট নিরসনের জন্য সড়কগুলো প্রশস্ত করা এবং যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
যানজটের ক্ষতি

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গত বুধবার এক জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরে জানায়, ঢাকাবাসীকে সড়কে প্রতি ২ ঘণ্টায় ৪৬ মিনিট কাটাতে হয় যানজটে বসে। বছরে জনপ্রতি গড়ে ২৭৬ ঘণ্টা নষ্ট হয় যানজটে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক বলেন, মানুষের চলাচল একটি জরুরি বিষয়। শহর গড়ে উঠেছে এ কারণে যে অল্প জায়গায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনোদনের সুবিধা থাকবে। মানুষ দ্রুত চলাচল করে সেই সুবিধা নিতে পারবে। তিনি বলেন, ঢাকায় দ্রুত চলাচলের সুবিধা নেই। দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনা বদলে স্বল্প মেয়াদে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা এখানে করা হয়েছে। এখন বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনা ছাড়া শুধু উন্নয়ন প্রকল্প দিয়ে সমস্যার সমাধান হয় না।

সামছুল হক আরও বলেন, ‘ঢাকার ওপর চাপ কমাতে বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। শহরে ছোট গাড়ি, রিকশা ও মোটরসাইকেল কমাতে হবে। তা না করে আমরা কাজ করছি উল্টো। এর ফলে বিপুল ব্যয়ে প্রকল্প হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা যাচ্ছে না।’


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

নামাজের সময় সূচি

    Dhaka, Bangladesh
    শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪
    ওয়াক্তসময়
    সুবহে সাদিকভোর ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ
    সূর্যোদয়ভোর ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ
    যোহরদুপুর ১২:০৩ অপরাহ্ণ
    আছরবিকাল ৩:৩০ অপরাহ্ণ
    মাগরিবসন্ধ্যা ৬:১৩ অপরাহ্ণ
    এশা রাত ৭:২৯ অপরাহ্ণ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!