এনবি নিউজ : পাঁচ বছর আগে ট্রাকচালক সেকুল মিয়া বিয়ে করেন। চার বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। সেকুলের দাবি—বিবাহবিচ্ছেদের পরও তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। পুনরায় বিয়ে করার কথাও ছিল তাঁদের।
বিয়ের নামে বিছিন্ন সময়ে সেকুল মিয়ার কাছ থেকে তাঁর সাবেক স্ত্রী পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে দাবি সেকুলের। কিন্তু, মাসখানেক আগে তাঁর সাবেক স্ত্রী আরেকজনকে বিয়ে করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন সেকুল, প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠেন, পরিকল্পনা করেন সাবেক স্ত্রীকে হত্যার।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার ভোরে সেকুল চলে যান মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং এলাকায়। সেখান থেকে বোরকা পরে তাঁর সাবেক স্ত্রী একটি রিকশায় উঠেন। সেকুল তাঁর পিছু নেন।
একপর্যায়ে রাস্তার একটি রিকশার গতিরোধ করেন সেকুল। ওই রিকশায় আয়েশা সিদ্দিকা (২৬) নামের এক নারী ছিলেন৷ তিনিও বোরকা পরে ছিলেন৷ সেকুল নিজের কাছে থাকা কাঁচি দিয়ে ওই নারীকে একের পর এক আঘাত করেন। একপর্যায়ে ওই নারী রিকশা থেকে নিচে পড়ে যান।
আয়েশা নিচে পড়ে গেলে সেকুল বুঝতে পারেন, তিনি তাঁর স্ত্রী ভেবে অন্য নারীকে কুপিয়েছেন! কিন্তু, ততক্ষণে সব শেষ। সে সময় সেকুলের সাবেক স্ত্রী পাশের আরেকটি রিকশায় ছিলেন।
পরে গুরুতর আহত আয়শাকে ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেওয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ঘটনার পরই স্থানীয় লোকজন সেকুল মিয়াকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
শুক্রবার রাতে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ সেকুলের বরাত দিয়ে বলেন, ‘সেকুল এখন মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের হেফাজতে আছেন। তবে, সেকুলের দাবির বিষয়ে তদন্ত করে ঘটনার সত্য-মিথ্যা যাচাই করছি আমরা। ছুরিকাঘাতের পর সেকুল বুঝতে পারেন, তিনি অন্য মানুষকে কুপিয়েছেন।’
ভুক্তভোগী পরিবারের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, ‘ঢামেকে যিনি মারা গেছেন তাঁর নাম আয়েশা সিদ্দিকা। তিনি পেশায় একজন পোশাককর্মী। তাঁর স্বামী একজন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। তাঁদের পাঁচ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। তাঁরা নবোদয় হাউজিং এলাকায় থাকতেন। তিনি ‘সাইনেক্স’ নামের একটি পোশাক কারখানার অপারেটর ছিলেন। প্রতিদিনের মতো গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তিনি কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর জেলার ভবানীপুরে।
আব্দুল লতিফ বলেন, সেকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তিনি সাবেক স্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। আয়েশাকে কাঁচি দিয়ে আঘাত করার পর তিনি দেখতে পান, তাঁর সাবেক স্ত্রী সামনের রিকশায়। আয়েশা এবং সেকুল মিয়ার সাবেক স্ত্রী একই রঙের বোরকা পরেছিলেন।
ওসি বলেন, ‘সেকুলের সঙ্গে তাঁর সাবেক স্ত্রীর কী লেনদেন, পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছিলেন কি না এনং পুনরায় বিয়ের কথা ছিল কি না—এসব বিষয় সেকুলের সঙ্গে কথা বলছি। তিনি এখন থানাতেই আছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার হত্যা মামলা করবে।’