প্রথম বন্দুকযুদ্ধ হয় সোমবার রাতে। এতে দুজন নিহত হন। দ্বিতীয় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে বুধবার রাতে। এতে কাউন্সিলর হত্যা মামলার প্রধান আসামি নিহত হন।
নিহত শাহ আলম নগরের সুজানগর বউ বাজার এলাকার প্রয়াত জানু মিয়ার ছেলে। শাহআলমের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, মাদক, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ নানা অভিযোগে কোতোয়ালি মডেল থানায় অন্তত ছয়টি মামলা আছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি আইনজীবী নাজমুল আলম চৌধুরী নোমান এনবি নিউজকে বলেন, ‘দেশে স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকা অবস্থায় এই ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ক্রসফায়ার নামে এই নাটক করে পুলিশ কাকে রক্ষা করতে চাচ্ছে? কেন জনগণ জানতে পারল না এই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য কী? কোন সত্যকে ধামাচাপা দিতে দুই দিনের মধ্যে এমন ক্রসফায়ার! ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সুষ্ঠু সমাজ গঠন করা যায় না। অপরাধও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এর সঙ্গে পূজামণ্ডপের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত।’
বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাব্বির ও সাজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে অন্তত তিনটি করে মামলা রয়েছে। তাঁরা দুজন শাহ আলম বাহিনীর সদস্য ছিলেন।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক গতকাল রাতে এনবি নিউজকে বলেন, ‘রাজনীতিসচেতন মানুষ হিসেবে আমি মনে করি, ক্রসফায়ার কোনো সমস্যার সমাধান নয়। বিচারবহির্ভূত কাজ নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে। আবার এটাও সত্যি, কাউন্সিলর সোহেলকে ওরা প্রকাশ্যে দিনের বেলায় ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে মাথায় পরপর দুটি গুলি করে হত্যা করল। মৃত্যু নিশ্চিত করতে আরও গুলি করল। এটাও সহ্য করতে পারছি না। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহান সরকার এনবি নিউজকে বলেন, কাউন্সিলর হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার যে তিনজন নিহত হয়েছেন, তাঁরাই পরিকল্পনাকারী, হত্যাকারী। এই মামলার প্রাথমিক তদন্ত, সাক্ষী, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ১৬৪ ধারায় দেওয়া কয়েকজনের জবানবন্দিতে বিষয়টি স্পষ্ট। তাঁরা সবাই শাহ আলম, সাব্বির ও সাজনের নাম বলেছেন। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা তো ছোটখাটো কেউ নন। তাঁদের ঘটনা সমাজে বার্তা দিল, অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না।
পুলিশের ভাষ্যমতে, গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, কয়েকজন অস্ত্রধারী দুষ্কৃতকারী গোমতী নদীর চানপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় অবস্থান করছে। খবর পেয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশের সমন্বয়ে একাধিক দল অভিযান চালায়। রাত আনুমানিক সোয়া একটার দিকে পুলিশের সদস্যরা গোমতী নদীর বেড়িবাঁধের কাছে পৌঁছালে পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় দুষ্কৃতকারীরা। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির একপর্যায়ে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই ব্যক্তির হাতে একটি আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তি কাউন্সিলর সোহেল ও সহযোগী হরিপদ সাহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম। গোলাগুলির সময় দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। তাঁদের কুমিল্লা পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও এক আসামি গ্রেপ্তার
কাউন্সিলর সোহেল হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে ইমরান খন্দকার (২০) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বুধবার রাত ১১টায় কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বাড়ি নগরের সুজানগর এলাকায়। গতকাল দুপুর ১২টা ৪৪ মিনিটে কুমিল্লা জেলা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ জানায়, গত ২২ নভেম্বর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ইমরান খন্দকারের মামাতো ভাই ও হত্যা মামলার ৮ নম্বর আসামি জিসান তাঁকে ফোনে বাসায় ডেকে আনেন। সেখানে যাওয়ার পর জিসানের বাসায় শাহ আলম, সাব্বির, জেল সোহেল, সাজন, মাসুমসহ অজ্ঞাতনামা আরও দু-তিনজনকে দেখতে পান ইমরান খন্দকার। তাঁরা তিনটি কালো ব্যাগে অস্ত্র ও হাতবোমা ঢোকান। ইমরান ও জিসানও ব্যাগে অস্ত্র ও হাতবোমা ভরার কাজে হাত লাগান। তারপর ব্যাগ তিনটি ইমরান ও জিসানকে দিয়ে তাঁরা পালিয়ে যান। পরে তাঁরা অস্ত্র ও বোমাভর্তি ব্যাগ তিনটি সংরাইশ এলাকায় রহিম ডাক্তারের গলিতে একটি বাসার ভেতরে ফেলে দিয়ে চলে যান। গতকাল বিকেলে ইমরানকে কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে ইমরান অস্ত্র বহনের কথা স্বীকার করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।