গতকাল বুধবার পঞ্চম ধাপে ৭০৮ ইউপিতে ভোট চলার মধ্যে বগুড়ায় পাঁচজন, চাঁদপুরে দুইজন এবং চট্টগ্রাম ও গাইবান্ধায় একজন করে মোট নয়জনের প্রাণহানির তথ্য দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। একই দিন সহিংতায় আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশত।
এ ছাড়া সহিংসতার কারণে অন্তত নয়টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। গোলযোগের কারণে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। একটি কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদের উপর হামলার ঘটনাও ছিল ভোটের দৃশ্যে। অনিয়মের কারণে ভোট চলাকালে মাঠ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণাও আসে কয়েকজন প্রার্থীর কাছ থেকে।
সকাল ৮টায় এসব ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে একটানা চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। পরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটগণনা শুরু হয়। ১ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার ১৯৫ জন ভোটারের এসব ইউপির মধ্যে ৪০টিতে ইভিএমে ভোট হয়েছে; বাকিগুলোতে ভোটগ্রহণ হয়েছে ব্যালট পেপারে।
এর আগে চার ধাপের ভোটে বেশ কিছু এলাকায় সহিংসতা ও গোলযোগ হয়েছে। ভোটের আগে, ভোটের দিন ও পরে ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক লোকের প্রাণহানির তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে। এবারও সেই ধারাবাহিকতা থেকে গেল।
বিভিন্ন জেলা থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চাঁদপুর
হাইমচর ও কচুয়া উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় দুই জন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তিনি হলেন কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নের হাতিরবন্ধ গ্রামের শহীদ উল্লাহর ছেলে শরীফ হোসেন। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশের ধারণা, ওই যুবক বহিরাগত।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মিলন মাহমুদ বলেন, ”কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নের একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় শরীফকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তিনি মারা যান।”
অপরদিকে হাইমচর থানার ওসি মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নে বাহেরচর এলাকায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় অজ্ঞাত এক যুবককে ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। নিহত যুবক বহিরাগত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম
আনোয়ারা উপজেলায় চাতরী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই প্রার্থীর কর্মীদের সংঘাতের মধ্যে অংকুর দত্ত (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি ইউনিয়নের সিংহরা দত্ত বাড়ি এলাকার নেপাল দত্তের ছেলে।
সকালে সিংহরা রামকানাই উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার সময় অংকুর সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন বলে জানান আনোয়ারা থানার পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান জানান।
পরিদর্শক বলেন, ওই কেন্দ্রের এক কিলোমিটার দূরে সদস্য পদের দুই প্রার্থীর সমর্থকরা মারামারিতে জড়ায়। এ সময় পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয় অংকুরকে। প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানান, চাতরী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদের প্রার্থী ধনঞ্জয় বিশ্বাস ও রঘুনাথ সরকারের সমর্থকদের সংঘর্ষের মধ্যে একপক্ষের লোকজন ইট ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে অংকুরকে জখম।
বগুড়া
গাবতলী উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়নে জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন আরও অন্তত দুই জন।
বালিয়াদীঘি ইউনিয়নে কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষে বুধবার রাতে স্থানীয় জনতার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই সংঘর্ষ হয় বলে গাবতলী মডেল থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম জানান।
নিহতরা হলেন কালাইহাটা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেনের স্ত্রী কুলকুস বেগম (৪৫), একই গ্রামের আব্দুর রশিদ (৪৮), খোরশেদ আলী (৭০) ও মো. আলমগীর (৪০)।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের দুলুখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বোমা বিস্ফোরণ, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে
আহত কালাইহাটা গ্রামের রাকিব (১৫) ও আব্দুল্লাহ্কে (৪৫ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্বাচনের ফলাফল কেন্দ্রের বাইরে অন্যত্র ঘোষণা করা হবে – এমন সন্দেহ থেকে বুধবার ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর পরই বিক্ষুব্ধ জনতা কালাইহাইটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘেরাও করে। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে।
ওসি লতিফুল বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিবৃত্ত করত গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে গুলি চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গুলিতে চারজন নিহত হন।
গাবতলীর রামেশ্বরপুর ইউনিয়নে একজন নিহত
গাবতলী উপজেলায় রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের জাইগুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকির হোসেন (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
জাকির জাইগুলী উত্তর পাড়ার মৃত লয়া মিয়ার ছেলে। তিনি সদস্য পদপ্রার্থী সাইদুল ইসলামের (টিউবওয়েল প্রতীক) সমর্থক ছিলেন।
ভোটের সংঘাত, গাবতলীতে নিহত ৪
গাবতলী মডেল থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম বলেন, ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের কাছে টিউবওয়েল মার্কায় ভোট চাইছিলেন জাকির। এ সময় তাকে আরেক সদস্য পদপ্রার্থী মিঠু মিয়ার (ফুটবল প্রতীক) কর্মী- সমর্থকদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়; এতে সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে একদল লোক জাকিরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার জুম্মারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট চলাকালে একটি কেন্দ্রের বাইরে আবু তাহের (৪০) নামে এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করেছে একদল লোক। তিনি ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের মো. ওমর আলীর ছেলে।
গাইবান্ধায় একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে একজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়
ওমর আলী বলেন, ”ভোটকেন্দ্রে টিউবওয়েল মার্কার সদস্য পদপ্রার্থী আইজল মিয়ার সমর্থকদের সঙ্গে ফ্যান প্রতীকের প্রার্থী রাসেল আহমেদের সমর্থকদের কথা কাটাকাটি হয়। তাহের ছিল আইজল মিয়ার সমর্থক। এর জের ধরে বিকালে আবু তাহেরকে একা পেয়ে একদল লোক ধারালো হাসুয়া দিয়ে তার গলা কেটে ফেলে।”রাসেলকে উদ্ধার করে পাশের বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয় বলে জানান বাবা ওমর আলী।
সাঘাটা থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে।