শিশুরা কার অভিভাবকত্বে বা জিম্মায় থাকবে- আইন অনুসারে এই সিদ্ধান্ত সাধারণত নেওয়া হয় পারিবারিক আদালতে। আর শিশুদের মা হাই কোর্টে যে রিটটি করেছিলেন, সেটি হেবিয়াস করপাস রিট।
কাউকে বেআইনিভাবে আটক করা হলে তাকে আদালতের সামনে হাজির করার জন্য এ ধরনের রিট মামলা হয়।
হাই কোর্ট রিটটি চলমান রেখে যে আদেশ দিয়েছিল, সেটি কার্যত বাবার পক্ষে গিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করেছিলেন শিশুদের মা। সেই আপিল আবেদনের নিষ্পত্তি করে রোববার রায় হল।
রায়ে দুই শিশুকে বাবার হেফাজতে রাখাকে অবৈধ ঘোষণা করেছে আপিল বিভাগ।
মামলার পারিপার্শ্বিকতা ও শিশুদের স্বার্থ বিবেচনায় কথা উল্লেখ করে আদালত বলেছে, এ আদালতের এখতিয়ারাধীন এলাকার বাইরে এই শিশুদের নেওয়া যাবে না।
এই আদেশের ফলে শিশু দুটিকে এখন বাংলাদেশের বাইরে নেওয়ার সুযোগ থাকছে না জাপানি মায়ের জন্য।
দুই শিশুর জিম্মা নিয়ে বাবার করা একটি মামলা ঢাকার পারিবারিক আদালতে বিচারাধীন। সেই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছে থাকবে বলে রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ। তবে এ সময়ে বাবা শিশুদের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবেন।
একইসঙ্গে এই আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পারিবারিক আদালতকে ওই মামলার নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।
এ বিষয়ে হাই কোর্ট যে আদেশ এর আগে দিয়েছিল, তা বাতিল করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।
মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গতবছর জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী। তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলে বিচারক।
কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাই কোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সাথে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেয়।
রোববার আপিল বিভাগের রায়েও দুই শিশুকে মায়ের কাছে রাখার অনুমতি দেওয়া হল।