এদিকে, সুপরিচিত মডেল তারকা তিন্নির মরদেহ শনাক্তের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করে তিন্নির স্বামী শাফাকাত হোসেন পিয়াল, এবায়দুল্লাহ ওরফে স্বপন গাজী ও গাজী শরিফ উল্লাহ ওরফে তপন গাজীকে। তখনও প্রধান আসামি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। পরে আরও আটঘাট বেঁধে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বেরিয়ে আসতে থাকে নতুন নতুন তথ্য, ঘুরতে থাকে তদন্তের মোড়।
তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির নাম।
জিজ্ঞাসাবাদে ইমন পুলিশকে জানান, তিনি যখন ভারতে পালিয়ে ছিলেন, তখন অভির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সে সময় অভি কথা প্রসঙ্গে বলেন, মডেল তারকা তিন্নির সঙ্গে তাঁর ভালোবাসা ও প্রেমের সম্পর্ক হয়। অভি তিন্নিকে দিয়ে তাঁর স্বামী পিয়ালকে ডিভোর্স দেওয়ান এবং অভি তিন্নিকে বিয়ের আশ্বাস দেন। এমনকি, বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তিন্নির সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন ও তিন্নির বাসায় রাত্রিযাপন করেন।
ইমন আরও জানান, ‘তাগিদ দিয়েও বিয়ে না করায় অভির গোপন তথ্য মিডিয়াতে ফাঁসের হুমকি দেন তিন্নি। হত্যাকাণ্ডের দিন এমন হুমকিতে দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে, অভি তিন্নির মাথা ধরে ধাক্কা দেন। তখন তিন্নি মাথায় আঘাত পান ও মারা যান। পরে অভি তাঁর গাড়িতে করে তিন্নির মরদেহ বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচে ফেলে রাখেন। এরপর ভারতে পালিয়ে যান।’
ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তিন্নি হতাকাণ্ডের মোড় ঘুরতে থাকে। দীর্ঘ সময় পর ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর তদন্তকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোজাম্মেল হক আলোচিত এ মামলাটির ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা তিন্নির স্বামী শাফাকাত হোসেন পিয়াল, এবায়দুল্লাহ ওরফে স্বপন গাজী, গাজী শরিফ উল্লাহ ওরফে তপন গাজীকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন। অপরদিকে, প্রধান আসামি গোলাম ফারুক অভিকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
আলোচিত এই মামলাটি ২০ বছর পার করলেও রায়ের মুখ দেখেনি। সর্বশেষ গত বছরের ১৫ নভেম্বর এই মামলায় রায়ের দিন নির্ধারণ করেন ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কেশব রায় চৌধুরী। কিন্তু, সেদিন তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহাবুব করিম ও চাচা সৈয়দ রেজাউল করিমের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নতুন করে আবেদন করায় মামলার রায় স্থগিত হয়ে যায়। বিচারক পুনরায় রায় থেকে উত্তোলন করে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নিয়ে আসে। এরপর আদালতে তিন্নির বাবা ও চাচার সাক্ষ্যগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়। চলতি মাসের ৩১ তারিখ এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন নির্ধারণ রয়েছে।
এ বিষয়ে আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ভোলানাথ দত্ত এনবি নিউজকে বলেন, ‘সানজিদুল ইসলাম ইমন এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। রাষ্ট্রপক্ষ মনে করছে, এই সাক্ষীর সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সাক্ষী ও কয়েদি আসামি সানজিদুল ইসলাম ইমনের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। বাকি সাক্ষীদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষ্য নিলে মামলায় সঠিক রায় পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’