বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মতো দুই দেশের সয়াবিন তেলও এ দেশে বিক্রি হচ্ছে দেদার। তবে সয়াবিন তেলে রাজত্ব আর্জেন্টিনারই। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আর্জেন্টিনা বাংলাদেশে ৫৫ কোটি ডলারের ৩ লাখ ৯০ হাজার টন সয়াবিন তেল রপ্তানি করেছে। ব্রাজিল রপ্তানি করেছে ৩৮ কোটি ডলারের দুই লাখ ৫৭ হাজার টন সয়াবিন তেল।
বাংলাদেশে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারলেও বাজার দখলে ব্রাজিল ভিন্নপথ ধরেছে। সয়াবিন তেলের কাঁচামাল সয়াবীজ রপ্তানিতে বাংলাদেশে শীর্ষে আছে দেশটি। তবে আর্জেন্টিনার মনোযোগ নেই এই সয়াবীজের বাজারে। তাই সয়াবীজ রপ্তানি দিয়ে একদিন হয়তো সয়াবিন তেলে আর্জেন্টিনাকে হটিয়ে দিতে পারে ব্রাজিল।
আবার সয়াকেক রপ্তানিতেও ব্রাজিলের চেয়ে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। গত অর্থবছরে বাংলাদেশে ১৫ কোটি ডলারের ২ লাখ ৮১ হাজার টন সয়াকেক পাঠিয়েছে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিল ১০ কোটি ডলারের সয়াকেকের বাজার ধরতে পেরেছে। রপ্তানি করেছে ১ লাখ ৮৬ হাজার টন সয়াকেক।
ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য এমন হতাশার খবরের পাশাপাশি আছে খুশির খবরও। বাংলাদেশে তুলা রপ্তানিতে এগিয়ে আছে ব্রাজিল। গত অর্থবছরে ব্রাজিল প্রায় ৫২ কোটি ডলারের ২ লাখ ৪১ হাজার টন তুলা রপ্তানি করেছে বাংলাদেশে। আর্জেন্টিনা করতে পেরেছে মাত্র ৩০ লাখ ডলারের ১ হাজার ২২৮ টন।
আর্জেন্টিনা যেসব পণ্য রপ্তানি করে না বা বাজার দখলে নেই, সেখানে ব্রাজিলের একচেটিয়া কারবার। তেমনি একটি পণ্য চিনি। ব্রাজিল একচেটিয়া বাজার দখল করে আছে এই পণ্যটির। মাঝেমধ্যে ভারত কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়ালেও বাজারটি ব্রাজিলের হাতেই। তার মানে, ব্রাজিলের চিনির স্বাদ নিতেই হবে আর্জেন্টিনার সমর্থকদেরও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বাজার দখলে ব্রাজিলের অবস্থান সপ্তম। আর্জেন্টিনা ১৯তম। চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্রাজিল ২৪০ কোটি ডলারের ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার টন পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশে। আর্জেন্টিনা করতে পেরেছে ৯০ কোটি ডলারের সাড়ে ১২ লাখ টন পণ্য।
সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম থেকে দুই দেশের দূরত্ব কম নয়। ব্রাজিলের সমুদ্রবন্দর সান্তোস থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব প্রায় ১০ হাজার ৮০৬ নটিক্যাল মাইল। আর্জেন্টিনা থেকে এ দূরত্ব ১০ হাজার ৫৬৪ নটিক্যাল মাইল। এই পথ পাড়ি দিয়ে একেকটি জাহাজ আসতে সময় লাগে এক মাসের বেশি। তবু বাজার দখলে বিশাল দূরত্ব যেন কিছু নয়।
ব্রাজিল শুধু বাজার দখল করে বাংলাদেশে নিজেদের ব্যবসা বাড়ায়নি। বরং আর্জেন্টিনার চেয়ে ব্রাজিলের লোকজন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, জার্সি গায়ে চাপতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এমন তথ্যই দিচ্ছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে ব্রাজিলে, যার সিংহভাগই তৈরি পোশাক। জার্সিও কম নয়। সেখানে আর্জেন্টিনা এখনো কোটি ডলারের ঘর পেরোয়নি।
কাতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে ছয় লাখ পিস অফিশিয়াল টি–শার্ট। এর বাইরে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার নিজ নিজ দেশের সমর্থকদেরও গায়ে চাপছে টি–শার্ট, জার্সি। সেখানেও আছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। মেড ইন বাংলাদেশ টি–শার্ট বা জার্সিতে ব্রাজিলের পাল্লাটা আর্জেন্টিনার চেয়ে একটু বেশি।