করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন নিয়ে অনেক আগে থেকেই শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন বরিশালের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। পিরোজপুর ও বাগেরহাটে তা শনাক্ত হওয়ায়, বিষয়টি এখন তাঁদের কাছে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, সম্প্রতি পিরোজপুর, বাগেরহাটসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়ার কথা জানায়, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইডিএসএইচআই)।
বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের ১৬ মে থেকে ৫ জুন—এই ২১ দিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই বিভাগে সংক্রমণের হার ৫ থেকে ২০–এর মধ্যে ওঠা-নামা করেছে। তবে এরপর সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এই ২১ দিনে বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫৬ জন, যা মোট রোগীর ৪ দশমিক ১৭ ভাগ। আর মারা গেছেন ১৫ জন। তবে এই ২১ দিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে শুধু বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ২৬ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশালে সর্বোচ্চ ১৯ জন। এ নিয়ে এই জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৯৪ জন। পটুয়াখালীতে নতুন শনাক্ত হয়েছেন ৬ জন। এ নিয়ে এই জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩২৪ রোগী। ভোলায় নতুন ৬ রোগীসহ মোট শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৪৭ জন। পিরোজপুরে নতুন ৩ জনসহ মোট শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৯২ জন, বরগুনায় নতুন ৫ জনসহ মোট রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৯৭ জন। তবে ঝালকাঠিতে শনিবার নতুন কোনো রোগী শনাক্ত হননি। এ জেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৪৭। এ নিয়ে বিভাগে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ হাজার ৭০১।
স্বাস্থ্য বিভাগের উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বরিশাল বিভাগে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এরপর করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। মার্চে বিভাগে করোনা শনাক্ত হয় ৫১৬ জনের। এর মধ্যে ৮ জন মারা যান। এপ্রিলে শনাক্ত হওয়া ৩ হাজার ২৯৬ জনের মধ্যে মারা যান ৫২ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের উপাত্তে দেখা যায়, মার্চ থেকে গত ১৫ মে আড়াই মাসে বরিশাল বিভাগে ৪ হাজার ৩৪০ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিলেন, যা বিভাগের মোট সংক্রমণের ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। এই আড়াই মাসে করোনায় মারা গিয়েছিলেন ৭২ জন, যা বিভাগে করোনায় মোট মৃত্যুর ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ।
গত বছর ৯ এপ্রিল বিভাগে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন। ওই বছরের জুন পর্যন্ত প্রায় তিন মাসে এই বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছিল ২ হাজার ৮৪৮ জনের, যা মোট সংক্রমণের ১৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এই সময়ে মারা গেছেন ৬০ জন, যা মোট মৃত্যুর ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
তবে করোনা রোগীর চেয়ে অনেক বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে করোনার লক্ষণ নিয়ে। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে শনিবার সকাল পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৬৬৯ জনের। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ ছিলেন ১৯৬ জন। অন্য ৪৭৩ জনই মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে।
ভারতীয় ধরন পিরোজপুরে শনাক্ত হওয়ার খবরে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল শনিবার এনবি নিউজকে বলেন, ‘পিরোজপুরে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও বিভাগের আর কোথাও এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়িয়েছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটা নিশ্চিত হতে সময় লাগবে। এই ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায় এবং মৃত্যুহারও বাড়ায়। আমরা আগেই ভারতীয় এই ধরন নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলাম। তবে এখন এলাকাভিত্তিক লকডাউনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটা খুব বেশি কার্যকর।