এনবি নিউজ : হঠাৎ রাজধানীর বাজারগুলো থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চিনি উধাও। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-দেশে চিনির কোনো খাটতি নেই। ট্যারিফ কমিশন বলছে-দেশে যে পরিমাণ চিনির মজুত আছে তা দিয়ে আরও তিন মাস চলে যাবে। তবে বাজার ও পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানের চিত্র উলটো। দশ দোকান ঘুরে চিনি কিনতে পারছেন না ক্রেতা। কোথাও পাওয়া গেলেও বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি সর্বোচ্চ ১২০ টাকা। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন ক্রেতা।
এদিকে দেশে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। এর মধ্যে এখন সরকারি মিলে আখ থেকে উৎপাদন হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টন। বাকিটা আমদানি করা র-সুগার থেকে পরিশোধন করে বেসরকারি কোম্পানিগুলো সরবরাহ করে। অর্থাৎ চিনির বাজার ৯৫ শতাংশের বেশি তাদের নিয়ন্ত্রণে। পরিবেশক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা অভিযোগ করছেন-মিল থেকে চিনির সরবরাহ নেই। চিনির দাম বাড়ানোর জন্য তারা বাজারে সরবরাহ করছেন না।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, দেশে বর্তমানের সুগারের (অপরিশোধিত চিনি) কোনো ঘাটতি নেই। যে পরিমাণ চিনি মজুত রয়েছে, তাতে তিন থেকে চার মাস চাহিদা পূরণ সম্ভব। সরকারি নির্দেশনায় গত ২৩ অক্টোবর তথ্য অনুযায়ী গতকাল পর্যন্ত বেসরকারি চিনি কারখানাগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি গ্রুপের মিলে এখন পর্যন্ত অপরিশোধিত ৩৮ হাজার টন চিনি মজুত রয়েছে। এ ছাড়া পাইপলাইনে আছে আরও ৬১ হাজার টন। মেঘনা গ্রুপে ২৩ হাজার টন অপরিশোধিত মজুত ও পাইপলাইনে আছে ৫৫ হাজার টন। একইভাবে এস আলম গ্রুপের কাছে ৬৬ হাজার টন মজুত এবং এক লাখ ১০ হাজার টন পাইপলাইনে। আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারির কাছে মজুত আছে ২২ হাজার টন, আর পাইপলাইনে রয়েছে ৫০ হাজার টন এবং দেশবন্ধুর কাছে চার হাজার টন মজুত এবং ৫৫ হাজার টন পাইপলাইনে রয়েছে। অর্থাৎ দেশে এখন এক লাখ ৫৪ হাজার টন অপরিশোধিত চিনির মজুত রয়েছে। এ ছাড়া দুই লাখ ২১ হাজার টনের মতো আমদানির চিনি পাইপলাইনে রয়েছে। অর্থাৎ দেশে পর্যাপ্ত চিনির মজুত আছে।
গত ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের তুলনায় এ বছর চিনি সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। শিগগিরই আরও এক লাখ টন চিনি আমদানি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে ১৭ লাখ মেট্রিক টন চিনি আমদানি করা হয়েছিল। এ বছর প্রথম নয় মাসে সাড়ে ১৬ লাখ মেট্রিক টন চিনি আমদানি করা হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লার একাধিক দোকান ঘুরে চিনি পাওয়া যায়নি। দশ দোকান ঘুরে এক দোকানে মিললেও বিক্রি হয়েছে ১১০-১২০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগে ৮৪-৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শনিবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে-এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৮.৪২ শতাংশ বেড়েছে। আর মাসের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম বেড়েছে ২৯.৩১ শতাংশ।
রাজধানীর কাওরানবাজারে চিনি কিনতে আসা মো. নাঈম বলেন, তেজকুনি পাড়ার কোনো মুদি দোকানে চিনি নেই। এখানে এসেও ১০-১২ দোকান ঘুরে চিনি পেয়েছি। তবে সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় ৩০ টাকা বেশি। বাজারের লক্ষীপুর স্টোরের কামরুল হাসান বলেন, চিনি নেই। কখন পাব ঠিক নেই। পাইকারি ব্যবসয়ীরা দুই সপ্তাহ থেকে শুধু বলছেন চিনি দেবেন। কিন্তু তাদের কাছে এখনো চিনি নেই। তাই পাইকারি দোকান থেকে চিনি না পেয়ে বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, চলতি মাসের প্রথম দিকে চিনি রিফাইনারি মিল মালিক ও সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা কেজি বিক্রির ঘোষণা দিলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। ডিলাররা চিনি পেলে আমরাও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করতে পারব। কিন্তু ডিলাররাই তো পাচ্ছে না।
পাইকারি বিক্রেতারা জানান, দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে মিলাররা। তারা সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। মিল থেকে কোনো কোম্পানি চিনি দিচ্ছে না। যে কারণে বাজারে চিনি নেই। তারা মনে হয় সরকারকে চাপে ফেলার জন্য এমনটা করছে। দাম বাড়িয়ে বিক্রির জন্য চিনি মজুত করেছে।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাজারে চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। যে চিনি নিয়ে কারসাজি করছে তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। দোষী যে পক্ষ হোক ভোক্তাকে নাজেহাল করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দরকারে অসাধুদের জেলে দেওয়া হবে। কারণ দেশে চিনিরি কোনো সংকট নেই।
এ টি