এনবি নিউজ : দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাতে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৫৩৭ জন। একদিনে আড়াই হাজারের রোগীর পাশাপাশি এদিন শনাক্ত হওয়া রোগী সংখ্যা গত দেড় মাসের মধ্যেও সর্বোচ্চ।
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল দুই হাজার ৯৫৫ জন একদিনে শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা বিষয়ক বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ( ৮ জুন সকাল আটটা থেকে ৯ জুন সকাল আটটা) বিভাগ ভিত্তিক বিশ্লেষনে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে তার আগের ২৪ ঘণ্টায় চেয়ে সংক্রমণ বেড়েছে। কমেছে কেবল রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের শনাক্তের হার।
আর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি শনাক্তের হার রংপুর বিভাগে।
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষনে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে শনাক্তের হর হার সাত দশমিক শূন্য এক, যা কিনা তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ছয় দশমিক শূন্য চার শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে শনাক্তের হার ১০ দশমিক শূন্য সাত, যা তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল সাত দশমিক ৯৭ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ, আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ১১ দশমিক শূন্য এক শতাংশ, রংপুর বিভাগে শনাক্তের হার ৩২ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ, আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ২৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর সিলেট বিভাগে শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, আগে ২৪ ঘণ্টায় ছিল ১১ দশমিক শুন্য পাঁচ শতাংশ।
শনাক্তের হার কমা বিভাগের মধ্যে রাজশাহী বিভাগে রয়েছে ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ, যা তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ আর খুলনা বিভাগে শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ, যা কিনা তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ৩৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
এদিকে, তার আগের দিন (৭ জুন) বিভাগ ভিত্তিক বিশ্লেষনে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে শনাক্তের হার ছিল পাঁচ দশমিক শূন্য শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ২১দশমিক ৩১ শতাংশ. খুলনা বিভাগে ৩০ দশমিক ৩৩ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ আর সিলেট বিভাগে ছিল ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞরা আগেই জানিয়েছিলেন এপ্রিলের শেষ নাগাদ দেশে সংক্রমণের যে নিম্নগতি ছিল সেটা ঈদের পর বেড়ে যাবে। আর এখন তার সঙ্গে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যুক্ত হয়ে দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আবারও শঙ্কার মুখে ফেলেছে। আর এবারে সংক্রমণ বৃদ্ধি শুরু হয়েছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। তবে ধীরে ধীরে সে সংক্রমণ পুরো দেশই ছড়িয়ে পরছে বলে জানিয়েছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতর। এছাড়া সরকারের রোগতত্ত্ব , রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে দেশে প্রাপ্ত নমুনার ৮০ শতাংশ ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। তাদের ধারণা দেশে ভারতীয় এই ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে।
এদিকে, দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ আরোপের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে শিথিলতার পরিচয় দিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
চার জুন থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এবং সেটা গতকাল (৮ জুন) পর্যন্ত বেড়ে ১২ শতাংশের বেশি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী কিছু জেলায় স্বাস্থ্য প্রশাসনের পরামর্শে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করছে। এটা সবার মঙ্গলের জন্য করা হচ্ছে।
আর এই বিধিনিষেধে জনগণের সহায়তার জন্যই করা মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোনও জায়গায় শিথিলতার পরিচয় দিলে সেটি আমাদের জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না।
কোভিড -১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাসহ যেসব জায়গাতে সংক্রমণের হার বাড়ছে সেসব জায়গায় ‘অন্যরকম ব্যবস্থা’ নিতে হবে।
তিনি বলেন, জনসংখ্যা কত সে বিবেচনা নিয়ে সংক্রমণ পরিস্থিতি দেখতে হবে। কারণ, রাজধানী ঢাকায় যে পরিমাণ মানুষ থাকেন রাজশাহী শহরে তার চেয়ে অনেক কম লোকের বাস। সে হিসেবে সংক্রমণের হারে অনেক তফাৎ। তাই সেভাবেই ধরতে হবে সংক্রমণের হার।
অধ্যাপক সহিদুল্লা বলেন, ঢাকাতে সংক্রমণের হার সাত দশমিকের কিছুটা বেশি, মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যা সীমান্তবর্তী এলাকাতে। যেখানে শনাক্তের হার ১৩ থেকে শুরু করে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে।
তাই আমাদের (জাতীয় পরামর্শক কমিটি) পরার্মশ ছিল, পুরো বাংলাদেশেই বিধিনিষেধ চলুক কিন্তু সীমান্তবর্তী এলাকাতে ভিন্ন লকডাউন দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকার লকডাউন কঠোর হতে হবে। যেখানে শুধু জরুরি সেবার সঙ্গে জড়িত যেমন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যমকর্মী, প্রশাসন ছাড়া সবাই ঘরে থাকবে, কেউ বের হতে পারবে না। এমনকী কোনও দোকানেও যেতে পারবে না, কেবলমাত্র খুব জরুরি কিছু না হলে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, অনেকটা কার্ফিউয়ের মতো। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, যেসব জেলাগুলো সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে সেখানে অন্তত দুই সপ্তাহ কার্ফিয়ের মতো চলা যায় তবে সংক্রমণ ১০ এর নিচে চলে আসবে। কিন্তু এটা যদি না করা হয়, যদি ঢিলে ঢালা লকডাউন হয় তাহলে সংক্রমণের কমার হার হবে ধীরগতির। বিধিনিষেধ না থাকলে সংক্রমণ স্ফুলিংগের মতো ছড়াতে থাকবে।
তিনি জানান, আমাদের জোর সুপারিশ সীমান্তবর্তী এলাকাতে অন্যরকম লকডাউন দিতে হবে এবং তাতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারিসহ সব ধরনের মানুষের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে, মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া এটা নিশ্চিত করা যাবে না।
এ টি