এনবি নিউজ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় যাত্রীবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকার সঙ্গে বালুবোঝাই ট্রলারের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গতকাল শুক্রবার রাত ১২টার দিকে উদ্ধারকাজ শেষে এ তথ্য জানায় পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনিসুর রহমান। এরই মধ্যে আজ শনিবার সকাল ৮টার দিকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। পৌনে ১০ টার দিকে উদ্ধার হয় তিন বছর বয়সের এক শিশুর মরদেহ।।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নৌকাটি ডুবে যাওয়ার সময় নারী, পুরুষ ও শিশুর চিৎকারে হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় অন্তত অর্ধশত মানুষ সাঁতরে পাড়ে উঠতে সক্ষম হয়। পরে পাশের গ্রামের বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। ওই সময় দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজারও মানুষ জড়ো হয়। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
এদিকে, গতকাল রাত ১২টার মধ্যে একে একে ২১টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হায়াত উদ দৌলা খান, এসপি মো. আনিসুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ তদারকি করেন। সাত সদস্যের একটি ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। এ ছাড়া উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি দল কাজ করে। এ নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, গতকাল রাতেই হাসপাতাল থেকে স্বজনদের কাছে নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে পাপিয়া (১১), ঝর্ণা বেগম (৪৫), তিথিবা বিশ্বাস (২), শারমিন (১৮), কাজলী বেগম, মাহিন মিয়া (৩২), নাজিম, জামাল মিয়া, তাহুরা (৮), আরিফ বিল্লাহ মাসুম, মঞ্জু বেগম (৬০), ফরিদা বেগম (৪০), মুন্নি (৬), মিনারা বেগম, অঞ্জলি বিশ্বাস, কমলা বেগম।
নৌকার যাত্রী সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের আঁখি আক্তার জানান, তিনি তাঁর স্বামী মুরাদ মিয়া, দুই ছেলে, শাশুড়ি, ভাসুরের তিন ছেলেসহ বিজয়নগরের চম্পকনগর ঘাট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনন্দবাজার ঘাটে আসার জন্য নৌকায় উঠেছিলেন। সেখানে শতাধিক যাত্রী ছিল। নৌকাটি পথিমধ্যে লইসকা বিলে এসে বালুবোঝাই একটি ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পানিতে তলিয়ে যান। তিনি তাঁর স্বামী ও এক ছেলে সন্তানকে নিয়ে সাঁতরে বিলের কিনারে আসতে পারলেও তাঁর আরেক ছেলে, শাশুড়ি ও ভাসুরের তিন ছেলে নিখোঁজ রয়েছে।
হাসপাতালে আহত মুরাদ মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। তারপর অনেক কষ্টে এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সাঁতরে পাড়ে উঠেছি। আমার এক ছেলে, মা ও তিন ভাতিজা এখনও নিখোঁজ রয়েছে।’
নৌকায় থাকা যাত্রী মোহাম্মদ রাফি বলেন, ‘নৌকাটি ডুবে যাওয়ার সময় আমি পানিতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে পাড়ে উঠি। নৌকার নিচে ও ওপরের দিকে শতাধিকের মতো যাত্রী ছিল।’
ডিসি হায়াত উদ দৌলা খান জানান, ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে।