এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না বলে আদেশ জারি করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
শেয়ারবাজারের টানা পতন ঠেকাতে শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন এনে বুধবার বিকেলে এ– সংক্রান্ত আদেশ জারি করে বিএসইসি।
বর্তমানে দামভেদে কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।
বিএসইসির আদেশে আরো বলা হয়েছে, দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন এ সিদ্ধান্ত আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর করতে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালে শেয়ারবাজারের টানা দরপতন ঠেকাতে শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার নিচে নামার সুযোগ ছিল না। ফ্লোর প্রাইস আরোপের ফলে বাজারে একধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। বেশির ভাগ শেয়ারের লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বাজার অংশীজনেরা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার হযন। কারণ, বেশির ভাগ শেয়ারের লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ে।
পরে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার পর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ধাপে ধাপে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হয়। জানুয়ারিতে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার পর শেয়ারবাজারে কিছুটা গতি দেখা যায়। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে আবারো দরপতন শুরু হয়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
দরপতন ঠেকাতে গত সোমবার অংশীজনদের নিয়ে এক বৈঠক করে বিএসইসি। এই বৈঠককে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল, ঐ বৈঠকের পর শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়বে। কিন্ত বৈঠকের কোনো সুফল বাজারে দেখা যায়নি।
বুধবারও বাজারে দরপতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৫৫ পয়েন্ট বা প্রায় ১ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৫ হাজার ৬০০ পয়েন্টের নিচে।
এদিন ডিএসইর প্রধান সূচকটির অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৫৭৯ পয়েন্টে, যা গত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালে ৪ মে ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৫৩৫ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। বাজারের এই পতন ঠেকাতে তাই শেয়ারের দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে কোনো শেয়ারের দাম ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।
ঢাকার বাজারে বুধবার লেনদেন হওয়া ৩৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭৪টি বা ৭০ শতাংশেরই দরপতন হয়েছে। দাম বেড়েছে ৭৯টি বা ২০ শতাংশ শেয়ারের। আর দাম অপরিবর্তিত ছিল ৪১টির বা ১০ শতাংশের
সূচক ও লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমলেও মোট লেনদেনে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। এ দিন ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬০৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৫ কোটি টাকা বেশি।