১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী জলোচ্ছ্বাসে লক্ষাধিক মানুষের সলিল সমাধির কথা ৩৩ বছর পরও ভুলতে পারেনি উপকূলবাসী। কুতুবদিয়ার কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারায় রাতের আধারে আঘাতহানা ঘূর্ণিঝড়ে।
এমন কোনো পরিবার নেই যাদের কেউ হারায়নি সেদিন। তেমনি ভেসে যাওয়া কুতুবদিয়ার নুরুল আবছার প্রকাশ ধলুর সন্ধান মিলেছিল ৩৩ বছর পর। বাবা-মায়ের সন্ধান পেয়েও ঘরে ফেরা হলো না তার। ধলু উপজেলার বড়ঘোপ উত্তর মগডেইল গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে।
গত ২৮ জানুয়ারি নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপে কবুতর হোটেলে তার সন্ধান মেলে। এর আগে ২৪ জানুয়ারি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে এই নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর সূত্র ধরেই ধলুর পিতা আবদুর রহমান ও ছোট ভাই মো: ফুরকান হাতিয়ায় যান।
ধলুর বড়ভাই উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন নুরুল হক জানান, তৎকালীন সময়ে তারা ৪ ভাইয়ের মধ্যে নুরুল আবছার (ধলু) দ্বিতীয় ভাই। ১৯৯১ সালে ধলু মহেশখালীর হোয়ানকে লবণ মাঠে কাজ করতে যান।
তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। ঘূর্ণিঝড়ে ধলুও ভেসে যান বলে তারা খবর পান। তালাশ করে তার লাশ কিংবা কোন হদিস মেলেনি। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর হাতিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে সংবাদ দেখে তার গঠন, বেওয়ারিশ খবর জেনে অনেকটাই নিশ্চিত হন ধলুই তাদের ভাই।
তিনি আরো বলেন, খবর জেনে তার বাবা আব্দুর রহমান ও ছোট ভাই মো: ফুরকান হাতিয়ায় পৌঁছান ২৮ জানুয়ারি। নুরুল আবছার ধলু হাতিয়ার ওই কবুতর হোটেলে কর্মরত ছিল। স্মৃতিশক্তি অনেকটাই কম ও মানষিক ভারসাম্য অবস্থা তার।
তবে তার বাবা সেখানে গেলে “বাবা” বলে জড়িয়ে ধরে পিতাকে। শারীরিক গঠন, কাপড়-চোপড় খুলেও বিভিন্ন নমুনা সনাক্ত করেন তার পিতা। দু‘দিন সেখানে অবস্থানের পর পিতা বাড়িতে এসে সবাইকে নিশ্চিত করেন তাদের সন্তানকে। আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে ঘরে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ধলুকে আনতে হলে হোটেল মালিক এক লক্ষ টাকা দাবি করেন বলে জানান তিনি।
কবুতর হোটেলের মালিকের ছেলে মো: বিপ্লব জানান, ধলুকে ৯১‘ এর পর ভবঘুরে অবস্থায় তার পিতা মোল্লা হুজুর তাদের হোটেলে আশ্রয় দেন। তিনিই তাকে লালনপালন করে আসছিলেন। ২০১১ সালে তার পিতা মারা যাবার পর তিনি ধলুর দায়িত্ব নিয়েই দেখাশোনা করে আসছেন।
টিভিতে সংবাদ প্রকাশের পর কুতুবদিয়ার আব্দুর রহমান নামের এক ব্যক্তি তাদের সন্তান বলে শনাক্ত করে গেছেন। তবে বোয়ালখালী উপজেলার জনৈক নারী তার স্বামী দাবি করায় বিষয়টি জটিল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তারা ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া কোন পক্ষকেই ধলুকে হস্তান্তর করতে পারি না বলে জানিয়েছেন।