• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ অপরাহ্ন

মৃত্যুর আগে মহসিন খানের লিখে যাওয়া শেষ কথা : একা থাকা যে কী কষ্ট, যারা থাকে, তারাই একমাত্র বলতে পারে

Avatar
সেন্ট্রাল ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সংবাদটির পাঠক ৩ জন

এনবি নিউজ : ফেসবুক লাইভে এসে গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে আবু মহসিন খান নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে জীবনের নানা হতাশার কথা তুলে ধরেন মহসিন খান।

আত্মহত্যার আগে যা বলেন মহসিন খান

‘আমি মহসিন, ঢাকায় থাকি। আমার বয়স ৫৮ বছর। কোনো এক সময় আমি খুব ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। তাই, আমার কোনো ব্যবসা বা কোনো কিছুই নেই। আসলে আমার লাইভে আসার উদ্দেশ্য হলো—আমার যে অভিজ্ঞতা, সেটা মানুষের সঙ্গে শেয়ার করলে হয়তো সবাই জানতে পারবে, সবাই সাবধানতা অবলম্বন করবে। গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। মানুষের কেমন বাস্তবতা… সবই আছে, তাঁর একটি ছেলে আমেরিকায় থাকে। মা মারা গেল, অথচ ছেলেটা আসলো (এলো) না। এটা আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে, কষ্ট পেয়েছি।’

আবু মহসিন আরও বলেন, ‘আজকে আমার আরেকজন খালা মারা গেছে। তাঁরও একটা ছেলে আমেরিকায় ছিল। তাঁর তিন ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তিন জনই বর্তমানে বাংলাদেশে আছে। তাঁরা তাঁর দাফন কাফনের কাজ সম্পন্ন করছে। সে দিক দিয়ে বলব—এই খালা অনেকটা লাকি। আমার একটামাত্র ছেলে। সে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে। আমার বাসায় আমি সম্পূর্ণ একা থাকি। আমার খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে ভয় করছে। আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়েও থাকি, আমার মনে হয় না যে—এক সপ্তাহে কেউ জানতে পারবে আমি মারা গেছি। ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী—আমরা যাদের নিয়েই যা কিছু করি, আমরা সবকিছুই ফ্যামিলির জন্য করি। আপনি যদি ১০০ টাকা আয় করেন, তার মধ্যে আপনার ২০ পারসেন্টও (শতাংশ) আপনি আপনার নিজের জন্য ব্যয় করেন না। যদি ২০ পারসেন্টও নিজের জন্য ব্যয় করেন…৮০ পারসেন্ট পরিবারের পেছনে খরচ হয়। গত করোনা শুরুর আগে থেকে আমি বাংলাদেশে আছি।’

বাসায় একা থাকেন জানিয়ে মহসিন আরো্ বলেন, ‘একা থাকা যে কী কষ্ট, যারা একা থাকে, তারাই একমাত্র বলতে পারে বা বুঝে। আমার আসলে এখন আর পৃথিবীর প্রতি, মানুষের প্রতি…।’

বিভিন্ন মানুষের কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছেন জানিয়ে মহসিন বলেন, ‘যাদের জন্য আমি করেছি, প্রত্যেক মানুষের কাছ থেকে আমি প্রতারিত হয়েছি। আমার এক বন্ধু ছিল, নাম হলো কামরুজ্জামান বাবু। যাকে আমি না খেয়ে, তাকে খাইয়েছি। সে আমার প্রায় ২৩ থেকে ২৫ লক্ষ (লাখ) টাকার মতো মেরে দিছে। এভাবে আমি বিভিন্ন মানুষের কাছে প্রায় ৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকার মতো পাই। শেষ যে লোকটাকে আমি বিশ্বাস করছিলাম—তাঁর নাম হলো… নোবেল সাহেব। আমি মিনারেল ওয়াটারের একটা কোম্পানি খোলার চেষ্টা করছিলাম। তাঁকে আমি মেশিন কেনার দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তাঁকে টাকা দিই, তাঁকে সাত লক্ষ ১০ হাজার টাকা এডভান্স করি তাঁর সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক। কিন্তু, সে আমাকে আড়াই বছর পরে মেশিন নিয়ে ঝগড়াঝাটি করার পর প্রথমে ৭০ হাজার টাকা, পরে আরও ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেয়। এখন পর্যন্ত সে আমার টাকাগুলো দিচ্ছে না।’

‘মানুষ কেন এত লোভী হয়? মানুষ কেন অন্যের টাকা ছলচাতুরি করে নিয়ে যায়? আমি তো এ পর্যন্ত কারও টাকা নিইনি। আমি তো পারলে মানুষের উপকার করেছি, না পারলে মানুষের আশপাশেও যাইনি। আসলে আরেকটা জিনিস দেখলাম যে, পৃথিবীতে আপনিই আপনার। ছেলে বলেন, মেয়ে বলেন, স্ত্রী বলেন—কেউই আপনার নয়। কারণ, আজ আপনি যেভাবে হয়তো আপনার ফ্যামিলিকে মেইন্টেন করছেন, কাল যদি আপনি মেইন্টেন করতে না পারেন, তখনই দেখা যাবে আপনার ওয়াইফের সঙ্গে আপনার দ্বন্দ্ব হবে, আপনার ছেলে বা মেয়ে আপনাকে পছন্দ করছে না। এগুলো কেন করে? ফ্যামিলির লোকজন কেন বুঝতে চায় না?’

‘আগে ওয়াইফের বুঝতে হবে। যখন বিয়ে হয় ২৪, ২৫ বা ৩০ বছরের একটা ছেলে যে পরিমাণ পরিশ্রম করতে পারে, উপার্জন করতে পারে, পরবর্তী সময়ে তো সে সেটা পারে না। তার বয়স হয়। সে পরিশ্রম কম করতে পারে। উপার্জন কমে যায়। এগুলো সব মিলিয়ে আসলে… অনেকদিন ধরেই আমি মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত। এখন জীবনে প্রতারিত হতে হতে…’

‘তোমরা সবাই জানো আমার বাবা পর্যন্ত আমার সম্পত্তিটা ঠিকমতো বুঝিয়ে দেয়নি। টাকা-পয়সা দেয়নি। যতটুকু করেছি, নিজের চেষ্টায় করেছি। আসলে নিজের ওপর নিজের এতটাই বিতৃষ্ণা হয়ে গেছে, পৃথিবীতে এখন আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না। আমি জানি, আমি যদি এখন সুইসাড করি বা মরে পড়েও থাকি, আমি যদি ফেসবুক লাইভে না যাই, তাহলে কেউ জানবেও না। হয়তো অনেক দিন পর সেটা জানবে। যাই হোক, অনেক কিছু বলার ছিল, ভেতরে অনেক কষ্ট। সবাই বলে সবার সাথে শেয়ার করো। তারপরেও যারা হয়তো দেখছেন, অনেকেই আমার আত্মীয় আছেন। আপনাদের কারও সাথে কোনো অন্যায় করে থাকি, ভুল করে থাকি, ক্ষমা করে দেবেন।’

‘সন্তানদের বোঝা উচিত যে, তাঁর বাবা যতক্ষণ পর্যন্ত অ্যাফোর্ড করতে পারে… প্রকৃত বাবারা চেষ্টা করে সন্তানদের সেভাবে মানুষ করার জন্য। বাবারা না খেয়েও সন্তাদের খাওয়ানোর চেষ্টা করে। পরিবারকে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু, পরিবার অনেক সময় অনেক কিছু বুঝতে চায় না। কেন বুঝতে চায় না, কেন বুঝে না এগুলো… আসলে… নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারলাম না।’

নিজের দাফনের কথা জানিয়ে মহসিন বলেন, ‘যাঁরা দেখছেন, এটাই আপনাদের সঙ্গে আমার শেষ দেখা। সবার সাথে। সবাই ভালো থাকবেন। হ্যাঁ, আমি যেটা দিয়ে সুইসাইড করার চিন্তা করছি, এটা বেআইনি কোনো কিছু দিয়ে নয়। (লাইসেন্স দেখিয়ে) এটা হলো আমার পিস্তলের লাইসেন্স এবং এক বছরের রিনিউ করা আছে। আমি এ মুহূর্তে এখন চলে যাব। আত্মীয়স্বজন যারা আছো, তাঁরা চেষ্টা করো আমাকে… যেহেতু বাবাও জায়গাটা দেয়নি, তাই পারিবারিক কবরস্থানে আমাকে দাফন করো না। আমাকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে যে একটা কবরস্থান হয়েছে, আমাকে ওখানে দাফন করে দিও। এটা আমার জন্য ভালো হবে।’

মহসিন বলেন, ‘প্রত্যেকটা লোক আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে, প্রত্যেকটা লোক। আমার বাবা, মা, আমার ভাইয়েরা। প্রত্যেকটা লোক, সবাই। সবাই ভালো থাকো।’

‘পৃথিবীটা খুব সুন্দর, সবাই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চায়। পৃথিবী ছেড়ে কেউ যেতে চায় না। তারপরেও চলে যেতে হয়। হয়তো আমি দুদিন পরে যেতাম, দুদিন আগে যাচ্ছি। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও প্লিজ। আর, তিনা আর নিশানকে বলব—তোমরা একটা ভাই, একটা বোন। তোমরা মিলেমিশে চলো। একে অন্যের খোঁজ-খবর নিও। আর, বাবা হিসেবে আমাকে ক্ষমা করে দিও। ভালো থেকো।’


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  

নামাজের সময় সূচি

    Dhaka, Bangladesh
    রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
    ওয়াক্তসময়
    সুবহে সাদিকভোর ৫:০০ পূর্বাহ্ণ
    সূর্যোদয়ভোর ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ
    যোহরদুপুর ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ
    আছরবিকাল ২:৫০ অপরাহ্ণ
    মাগরিবসন্ধ্যা ৫:১১ অপরাহ্ণ
    এশা রাত ৬:৩০ অপরাহ্ণ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!