স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এ তালিকায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতাদের নাম উঠে এসেছে।
দলের আগামী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া না হলেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে চায় দলটি। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, গত বৈঠকে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা ইতোমধ্যে তাদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছেন। বেশ কয়েকজনের নামও এসেছে। তালিকা পেলে পরবর্তী কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলমান পৌরসভা নির্বাচন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দলের কঠোর নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রতিটি ধাপের নির্বাচনেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন অনেকে। তাদের পেছনে মদদদাতা হিসাবে ছিলেন দলীয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী নেতারা। এ ছাড়া জেলা-উপজেলার শীর্ষ ‘নেতাদের লোক’ হিসাবে পরিচিত অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন। ফলে অনেক জায়গায় দলীয় প্রতীক পেয়েও তাদের ক্ষমতার দাপটে ভোটের মাঠে কোণঠাসা ছিলেন নৌকার প্রার্থী।
কোথাও কোথাও নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ, মারামারি ও ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নিজেদের বলয়ের ব্যক্তি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হলেই প্রভাবশালীরা বিদ্রোহীদের মদদ দেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, বিদ্রোহীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া আছে, তারা দলের কোনো পদে থাকতে পারবেন না। আর যারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন বা সহযোগিতা করেছেন, তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিষয়ে কার্যনির্বাহী কমিটি ব্যবস্থা নেবে।
মদদদাতাদের তালিকা তৈরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকা বলতে তৃণমূল থেকে যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলো প্রতিবেদন আকারে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে যাচাই-বাছাই শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভা এবং প্রার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগগুলো আমরা প্রতিবেদন আকারে জমা দেব। এ বিভাগে কেমন অভিযোগ জমা পড়েছে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনটি ছাড়া প্রায় সব জায়গায় দলের প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন।
এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনগুলোতে নৌকার প্রার্থীর প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ২৫টি পৌরসভায় নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন ১০ জন। কেন্দ্রীয় নেতাদের কঠোর নির্দেশনা উপেক্ষা করে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৬০টি পৌরসভার মধ্যে ২১টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে ছিলেন। তৃতীয় ধাপে ৬৩ পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী। তিন ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২১ জন বিদ্রোহী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ধাপের নির্বাচনগুলোয়ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।
এদিকে বিদ্রোহীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বেশ কয়েকবার বলেছেন, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং এখনো মাঠে আসেন তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অবস্থান স্পষ্ট। বিদ্রোহীদের যারা মদদ অথবা উসকানি দিচ্ছেন, তাদেরও একই শাস্তি পেতে হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, তৃণমূল থেকে আসা এসব অভিযোগে দলের এমপি-মন্ত্রীসহ প্রভাবশালী নেতাদেরও নাম রয়েছে। তাদেরও শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় পদের ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া দু-চারজনকে তিরস্কার বা সতর্কও করা হতে পারে। পাশাপাশি যারা দলের পদে রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগও রয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বিদ্রোহীদের ব্যাপারে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে দলের নীতিনির্ধারণী মহল এবার কঠোর অবস্থানে। এ কারণে শুরু থেকে বিদ্রোহীদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। গতবারের নির্বাচনে জয়ী বিদ্রোহীদেরও মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
এবার বিদ্রোহী হলে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কারও করা হয়েছে। এমনকি বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকে ইতোমধ্যে বহিষ্কারও করা হয়েছে। মদদদাতাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হচ্ছে।