এনবি নিউজ : অর্থপাচারের অভিযোগে করা মামলায় প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তাঁর বিদেশযাত্রায় আদালত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি গ্রেপ্তার হন। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম সহসভাপতি তিনি।গত বৃহস্পতিবার সকালে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে আবুল কাশেমকে হস্তান্তর করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এরপর তাঁকে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানায় সিআইডি। শুনানির জন্য ২৫ জুন তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত।
একই সঙ্গে আবুল কাশেমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।এ তথ্য জানিয়ে সিআইডির ফিন্যানশিয়াল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতারণার শিকার প্রায় তিন হাজার গ্রাহকের আবেদনের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ মেলায় গত ৩১ মে ই-কমার্স কম্পানি আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুরআলম শিকদারসহ এজাহারভুক্ত চারজনসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আল মামুন। ওই মামলায় যাঁদের বিরুদ্ধে আদালত বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন, তাঁদের একজন আবুল কাশেম।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া বাকি দুজন হলেন আলেশা মার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মঞ্জুর আলমের স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরী এবং আলেশা মার্টকে মোটরসাইকেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এস কে ট্রেডার্সের মালিক মো. আল মামুন।তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের এক আবেদনে গত বুধবার ওই চারজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি তাঁদের সম্পত্তি অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেন আদালত। মামলার পর ওই চারজন যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারেন, এ জন্য বিমানবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট জায়গায় তথ্য পাঠানো হয়। এ তথ্যের ভিত্তিতেই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বুধবার মধ্যরাতে আমেরিকা যাওয়ার সময়ে আবুল কাশেমকে ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আবুল কাশেম গ্রেপ্তার হলেও অন্যরা পলাতক।
সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, এই চারজন ছাড়াও প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলেশা মার্ট লিমিটেড, আলেশা হোল্ডিং লিমিটেড, আলেশা কার্ড লিমিটেড, আলেশা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড, আলেশা টেক লিমিটেড, আলেশা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, আলেশা রাইড লিমিটেড, আলেশা এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট লিমিটেড, আলেশা ফার্মেসি লিমিটেড, আলেশা অ্যাগ্রো লিমিটেডের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। তারা বিভিন্ন অফার দিয়ে বহু গ্রাহকের কাছ থেকে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিক বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের জন্য অগ্রিম অর্থ নিয়ে পণ্য বা টাকা ফেরত না দিয়ে ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে প্রতারণার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ করছে।মামলার অন্য তিন আসামির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, তাঁদের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং তাঁদের ঠিকানায় অবস্থান না করায় পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাঁরা এরই মধ্যে দেশের বাইরে চলে গেছেন কি না—এমন কোনো তথ্য নেই।মামলায় যা বলা হয়েছে : মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকের পদ পাওয়ার জন্য এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশে হাজারো গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া ১০০ কোটি টাকা মঞ্জুর আলম ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে দিয়েছিলেন।সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আল মামুনের করা মামলায় বলা হয়েছে, ‘আলেশা মার্ট লিমিটেড’ ২০২০ সালের ২৬ জুলাই রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস অ্যান্ড ফার্মস-আরজেএসসি হতে নিবন্ধন লাভ করে। এরপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স পায়। পরের বছর ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলেশা মার্ট তাদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। ওই কম্পানি শুরু থেকেই আকর্ষণীয় ডিসকাউন্টে বিভিন্ন অফার দিয়ে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিক বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের কথা বলে বহু গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য দেয়নি। চলতি বছরের ১ মে পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে দুই হাজার ৮৭ জন এবং সিআইডিতে ৩৫ জন গ্রাহক সেই টাকা পেতে আবেদন করেন। ওই অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং অপরাধ সংঘটনের প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়।