এনবি নিউজ : রাষ্ট্র আজ স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার শৃঙ্খলে আবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি)সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। তিনি বলেন, ‘সরকারের অপরিনামদর্শিতায় ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ বড় সংকটে পড়েছে।’
আজ রবিবার (২৫ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত ‘রাজনৈতিক সংকট, চলমান গণআন্দোলন ও জনপ্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘রাষ্ট্র আজ স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। এক মন্ত্রী আরেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলেন। একজন বলেন পক্ষে আরেকজন বলেন বিপক্ষে। এই সরকার মিথ্যাবাদী, জনগণ তাদের আর বিশ্বাস করে না। অন্তর থেকে মানুষ তাদের বিদায় করে দিয়েছে, এখন তাদের দাফন করার সময়।’
বাংলাদেশের ভূ-রাজনীতির নিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের অপরিনামদর্শিতায় ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ বড় সংকটে পড়েছে। সরকার কোনও রকম কথাবার্তা ছাড়া জনগণকে জুজুর ভয় দেখাচ্ছে। সরকার বলেছে, আমাদের সীমানার কোনও অংশ কাউকে দেবো না। দেশের মানুষতো কাউকে বলেনি সীমানা দিয়ে দিতে। এমনকি সরকারের কোনও অধিকারও নেই— জনগণের সীমানা কাউকে দেওয়ার।’
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে রব বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, নব দলের অংশগ্রহণ ও মানবাধিকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে দেশে চরম অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। দেশের লাখ লাখ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছিল, তাদের নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। তার পরিবর্তে সরকার দলীয় শাসন কায়েম করেছে। জনগণ যেন ক্ষমতার মালিক না হতে পারে, তার ব্যবস্থাও সরকার করছে।’
সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘রাজনৈতিক সংকট মানে হচ্ছে সংকটটার চরিত্র রাজনৈতিক। এ অবস্থায় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার মতো কিছু নেই। দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি খুবই কষ্ট নিয়ে বলছেন— এত কষ্ট করে নির্বাচন করলাম, কিন্তু কেউ মানতে চায় না। এমন মিথ্যা যে বলে, তার সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা করবেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলছি। যারা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথকে প্রশস্ত করবে। এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেন শ্রমিক, কৃষক, মেহনতী মানুষ, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে এই সরকার টিকে আছে।’ তিনি বলেন, ‘সব প্রতিষ্ঠানকে তারা দুর্নীতির ভাগ-বাটোয়ারা দেন। সরকার চাইলেও এখন এটা বন্ধ করতে পারবে না। এর পরিণতিতে সরকার ১৬ লাখ কোটি টাকা ঋণ করেছে। যে পরিমাণে পাচার হয়েছে, আমাদের রিজার্ভের যে অবস্থা, তাতে এই দেশ দেউলিয়াত্বের দিকে যাচ্ছে। এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না।’
সাকি আরও বলেন, ‘যারা সত্যি সত্যি দেশের সার্বভৌমত্বকে সংকটে ফেলেছে, তারাই আবার সার্বভৌমত্ব রক্ষার ধোঁয়া তুলছে। এটা ঠিক আমরা বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর প্রভাব বলয়ের মধ্যে আছি। কিন্তু এই সরকার দেশের স্বার্থে নয়, নিজের গদির স্বার্থে পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করছে।’
দেশে ন্যূনতম যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল, তা সরকার নষ্ট করে ফেলেছে জানিয়ে সভায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘অর্থনীতিতেও আদিম লুটপাটের সংস্কৃতি চলছে। সরকারের বাইরের দরজাগুলোও একেক করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মোদি এবং বাইডেনের বৈঠকের যতটুকু খবর পাওয়া গেছে, তাতেও কোনও সুখবর নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার কথা বলে সরকার বিভ্রান্তি তৈরি করছে। মানুষের মনোযোগ ভিন্ন দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে, তাতে শেষ রক্ষা হবে না। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নাকি আওয়ামী লীগ লড়ছে। তারা যেভাবে নতুন জমিদারি চালু করেছে, এই জমিদারির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এদের বিদায় দেওয়া ছাড়া, আমাদের অধিকার রক্ষা করতে পারবো না।’
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন— জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সভাপতি বাবুল সরদার চাখারী, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়কারী টিপু বিশ্বাস, গণফোরামের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ।
এ টি