এনবি নিউজ : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ঘিরে গতকাল দিনভর ছিল নানা আলোচনা। সকাল থেকেই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের আশপাশে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্য। সবারই এক কথা , এখন কি হবে ? আদৌ কি সংলাপ হবে ? হলে, উদ্যোগের দায়িত্ব কার ? না হলে কী ঘটবে ?
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় সংলাপের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, ‘পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়।’ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও সংলাপে আগ্রহী। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংলাপের বিষয়ে আগ্রহী নয়। দলটি বলছে, তফসিল ঘোষণার পর সংলাপ করার মতো আসলে সময় নেই।
বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। বিরোধী দলগুলো নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে।
এমন পটভূমিতে তফসিল ঘোষণার সময় সিইসি নির্বাচনে সব দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে স্বাগত জানাবেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, সংঘাত ও সহিংসতা পরিহার করে সদয় হয়ে সমাধান অন্বেষণ করতে।’
আলোচনার প্রশ্নে বিএনপি অবশ্য বলেছে, পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব সরকারের। আর সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দল সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। এমনকি তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক সমঝোতার পর তফসিল ঘোষণার কথা বলেছে কোনো কোনো দল। এর মধ্যেই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করল।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
সিইসির তফসিল ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে দলীয় ব্রিফিং করে প্রতিক্রিয়া জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সিইসির সংলাপের আহ্বান প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সামনে, তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। এই সময়ে কবে আপনি বাংলাদেশের শতাধিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবেন? কবে নির্বাচন করবেন?’
সিইসি ও যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের আহ্বান প্রসঙ্গে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সিইসির বক্তব্য এবং ডোনাল্ড লুর চিঠি—দুটি বিষয় আলাদা । নির্বাচনের জন্য সংলাপ করতে হবে, এ কথা সিইসির বক্তব্যে নেই। আর এটা থাকারও কথা না।
এর আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ডোনাল্ড লুর চিঠি হস্তান্তর করেন। চিঠি গ্রহণ করার পর ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, যারা গণতন্ত্র চর্চা করে, তারা সংলাপ চায় না—এমন কথা বলতে পারে না। কিন্তু আজ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হচ্ছে। আপনি সংলাপ করবেন কবে।’
তখন একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে সংলাপের সুযোগ আছে কি না, জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন আর সংলাপের কোনো সুযোগ নেই।
গতকাল বুধবার সিইসির সংলাপের আহ্বান সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এনবি নিউজকে বলেন, তাঁরা কখনোই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ব্যাপারে নেতিবাচক ছিলেন না; কিন্তু সরকার দমন-নির্যাতনের পথ বেছে নিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। তিনি আরও বলেন, দলের মহাসচিবসহ সারা দেশের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে জেলে নেওয়া হয়েছে। ফলে আলোচনার কোনো পরিবেশ নেই।
রুহুল কবির রিজভী মনে করেন, দমন–নির্যাতনের পথ পরিহার করে সরকারকেই আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। পরিবেশ তৈরিতে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে কোনো উদ্যোগ নেই; বরং সরকার বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের দমন–নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।
আলোচনার বিষয়ে এখনো আশাবাদী জাতীয় পার্টি। দলটি আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকটের সমাধানের পরই তফসিল ঘোষণার দাবি করে আসছিল। এখন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘তফসিল ঘোষণা করা হলেও আলোচনা-সমঝোতার আশা এখনো ছাড়িনি।’ তিনি মনে করেন, তফসিল ঘোষণা করা হলেও এখনো সময় আছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এম সাখাওয়াত হোসেনও মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সুযোগ এখনো আছে; কিন্তু সে দায়িত্ব সরকারের।
সাখাওয়াত হোসেন গতকাল এনবি নিউজকে বলেন, তফসিলে মনোনয়ন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে বাছাই এবং ভোট গ্রহণ পর্যন্ত লম্বা সময় নেওয়া হয়েছে। এতে মনে হচ্ছে, কেউ আলোচনার উদ্যোগ নিয়ে সংকটের সমাধান করুক, এমন সুযোগ রেখেছে নির্বাচন কমিশন।
যুক্তরাষ্ট্র শর্তহীন সংলাপের আহ্বানের প্রসঙ্গ টেনে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখন শর্তহীনভাবে আলোচনারও একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেখানে সরকারকেই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, এবার সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন হলে ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে।