দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালীর ৬টি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভোটে অংশগ্রহণ চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে দলের মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের। তবে অপর তিনটি আসনে চাপমুক্ত রয়েছেন নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ আলী ও এইচএম ইব্রাহিম।
সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের অবস্থান নিশ্চিত হতে শুরু করেছে।
জেলা হেডকোয়ার্টার নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় নেতা আবদুল মালেক উকিলের ভ্রাতুষ্পুত্র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন। এছাড়া এখানে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গন প্রতীকের প্রার্থী মোবারক হোসেন আজাদ ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত চেয়ার প্রতীকের প্রার্থী মো. আবদুল আলীম।
এ আসনে শিহাব উদ্দিন শাহিনের ট্রাক প্রতীকের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস জাহের, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান নাছের, সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার উদ্দিন খেলন, সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন চৌধুরী বাহার, জেলা ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, যুব লীগ-ছাত্রলীগ’সহ দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী অবস্থান নিয়েছেন। গুণজন রয়েছে দলের যেসব নেতারা নৌকার পক্ষে অবস্থান প্রকাশ করেছেন তাদের মধ্যেও অনেকেই ভিতরে ভিতরে ট্রাক প্রতীকের পক্ষে সমর্থন দিচ্ছেন। অন্যদিকে এই আসনের ভোটাররা এবার দাবি তুলেছেন স্থানীয় নেতৃত্ব থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। এতে এই আসনে অনেকটা চাপের মুখে রয়েছে নৌকার প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরী।
নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ি আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলম। তিনি বর্তমানেও এই আসনে সংসদ সদস্যের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক। স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের কাঁচি প্রতীকের পক্ষে রয়েছেন সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদ চৌধুরী, সেনবাগ পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু জাফর টিপু’সহ দলের সিংহভাগ নেতাকর্মী। নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলম চেষ্টা করছেন দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে টানতে। কিন্তু বিগত সময়ের অবমূল্যায়ন ও সাংগঠনিক হিসাব কষছেন নেতাকর্মীরা। ফলে এখানেও নৌকা মার্কা অনেকটা চাপে পড়েছেন।
নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরন। তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের ছোট ভাই মিনহাজ আহমেদ জাবেদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী জাবেদের ট্রাক প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ করছেন বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সাল, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম’সহ দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী। ফলে নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরনের সঙ্গে মিনহাজ আহমেদ জাবেদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করছেন ভোটাররা।
তবে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় নোয়াখালী-৫ (কবিরহাট-কোম্পানীগঞ্জ) আসনে চাপমুক্ত রয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নৌকার প্রার্থী ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের এই আসন থেকে পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ আলী । তিনি এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ি আংশিক) আসনে নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এইচএম ইব্রাহিম। তিনি বর্তমানেও এই আসনের সংসদ সদস্যের দায়িত্বে রয়েছেন।