দেশের বহু বছর ধরে ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ থাকলেও ২০২৩ সালে এসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। এই বছরে আক্রান্তের হার যেমন বেড়েছে, তেমনি মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ ছুঁয়েছে। গত ২৩ বছরে দেশে ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ৮৬৮ জন। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৬৯৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অর্থাৎ গত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, গত এক বছরে তার চেয়ে বেশি মানুষ এই রোগে মারা গেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের এই পরিণতির পেছনে গত কয়েক বছর ধরে চলমান অপরিকল্পিত নগরায়ন, মশক নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা, স্বাস্থ্যখাতের দুরবস্থাসহ বেশ কিছু কারণ রয়েছে। অনেক বছর ধরেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মশার ওষুধ ছিটানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মত নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা থাকলেও এখনো নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডেঙ্গু।
অতীতে ডেঙ্গুতে এত মানুষের মৃত্যু হয়নি
দেশে সর্বপ্রথম ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয় ১৯৬০ সালের দিকে। এরপর কেটে গেছে ৪০ দশক। তারপর ২০০০ সালের জুন মাসে ডেঙ্গু সর্বপ্রথম মহামারী আকারে দেখা দেয় বাংলাদেশে। সে বছর মোট ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়, যার মাঝে মারা যায় ৯৩ জন। এরপর কম-বেশি প্রতিবছরই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে। কিন্তু সেই সংখ্যা কখনোই ২০২৩ সালের মতো এত প্রকট আকার ধারণ করে নি।
এই সময়ের মাঝে ২০২৩ সালের আগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গিয়েছিলো কোভিডের আগের বছর ২০১৯ সালে। ঐ বছর সারাদেশে মোট ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, মারা যায় ১৬৪ জন। ২০১৯ এর সাথে এ বছরকে তুলনা করলে দেখা যায়, এই সময়ের মাঝে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে দশগুণ। সেইসাথে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়ে হয়েছে তিনগুণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিডকালীন সময়ে মানুষের জীবনযাপন সীমিত বা নিয়ন্ত্রিত থাকার কারণে পরবর্তী কয়েক বছর ডেঙ্গু ২০১৯ সালের মতো প্রকট আকার ধারণ করতে করে নি। স্বাস্থ্য বিভাগের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুমের হিসেব অনুযায়ী, ২০২০ সালে সারাদেশে মোট ১ হাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও ঐ বছর মারা গিয়েছিলো সাত জন।
ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপের কারণ
একটা সময় ধারণা করা হতো, বর্ষাকাল মানেই হলো ডেঙ্গুর মরসুম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সেই বিশ্বাস পাল্টাবার সময় এসেছে। কারণ এখন শুধু বর্ষা না, শীত-গ্রীষ্মেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষা পরবর্তী সময় অর্থাৎ অগাস্ট থেকে অক্টোবরকে ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ বলা হয়। কিন্তু এ বছর অক্টোবরের পর সংখ্যার বিচারে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমে এলেও এখনো তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এই ডিসেম্বরেও প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছে।
বিগত পাঁচ বছরের দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০১৯ থেকে ২০২২, এই সময়ের মাঝে শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসে মোট মারা গেছে ৩৪ জন। কিন্তু এ বছর এই মাসে ২৫শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৭৬ জন, যা গত ৫ বছরের ডিসেম্বর মাসের মোট মৃত্যুর চেয়ে দুই গুণ বেশি। আগে শীতকালে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়লেও ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার উপদ্রব আগে দেখা যেত না। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে, শীতকালে, অর্থাৎ ডিসেম্বরেরও এডিস মশা দেখতে পাওয়ার কারণ জলবায়ু পরিবর্তন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
“ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গু হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ আসলে জলবায়ুর উষ্ণতা। তাপমাত্রা যদি ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে চলে যায়, তাহলে মশার ডিম থেকে লার্ভা বের হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে এবার শীতের সময় ১৩ ডিগ্রির নীচে তাপমাত্রা নামছে না। পঞ্চগড়, দিনাজপুরের দিকে হয়তো নামছে; কিন্তু সারাদেশে না।” এমনটাই বলেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন। একই ধরনের অভিমত কীটতত্ত্ববিদ ও জাতীয় নদী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীরও।
তিনি বলেন, “এ বছর ব্যাপক ডেঙ্গুর ব্যাপকতার কারণ, আবহাওয়া মশার পক্ষে ছিলো সারাবছর। একটা লম্বা সময়ের জন্য উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা ছিলো। সেইসাথে, থেমে থেমে বৃষ্টি ছিলো।” “এবার শীতের সময় যেসব এলাকায় ডেঙ্গু পাওয়া যাচ্ছে, সেসব এলাকার তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি। যেমন, পুরান ঢাকা। ওখানে এডিস মশা ব্রিড করতে পারে। কারণ মশার ব্রিডিং-এর জন্য নূন্যতম তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেই হয়। রমনা পার্কে কিন্তু এডিস মশা নাই এখন, কারণ অনেক গাছপালা হওয়ায় ওখানে খুব ঠাণ্ডা।”
ডেঙ্গু আর শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ নয়
সাধারণত ঢাকা সবসময় ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকলেও এবার গ্রামাঞ্চলেও সমানভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। স্বাস্থ্য বিভাগের বলছে, চলতি বছরের ২৫শে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৫৪৯ জন এবং এই আক্রান্তদের দুই তৃতীয়াংশই হলো ঢাকার বাইরের। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৮৯ জন, যার মাঝে ৭০ জনই ঢাকার বাইরে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এবছর ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু পাওয়ার কারণ হল গ্রামের ‘সেমি-আরবান কন্ডিশন’। অর্থাৎ আগে নগরায়নের ছোঁয়া শুধু শহরকেন্দ্রিক, বিশেষ করে ঢাকা কেন্দ্রিক ছিল। কিন্তু বিগত এক দশকে ঢাকার বাইরের অবকাঠামোগত চিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
ড. মুশতাক বলেন, “যত নগরায়ন বাড়ছে, তত অপরিচ্ছন্নতা বাড়ছে। এ কারণে যেখানে-সেখানে পরিষ্কার পানি জমে থাকছে, যা এডিস মশার প্রজনন কেন্দ্র। অথচ, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রধান শর্তই হল পরিচ্ছন্নতা।” তাছাড়া, গ্রামাঞ্চলে গত বছর থেকেই ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। কিন্তু এবার সেটা প্রকট আকার ধারণ করার অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আগে যারা একটা সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হয়েছে, এবার তারা অন্য একটা দিয়ে হয়েছে। ফলে গ্রামে সিরিয়াস রোগীর সংখ্যা বেশি পাওয়া গেছে এবার।”
ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ভাগ আছে, এগুলিকে বলে সেরোটাইপ। এবার বাংলাদেশে ডেন-টু এবং ডেন-থ্রি সেরোটাইপ বা ডেঙ্গুর ‘দ্বিতীয়’ এবং ‘তৃতীয়’ ধরণে আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া গেছে। মূলত, কেউ যদি প্রথমবার একটা সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হয়, তবে দ্বিতীয়বার সে যখন আবার অন্য একটা সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হয়, তখন তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ডেঙ্গুর ধরনে পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আগে একটা সিঙ্গেল সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হত। এখন একাধিক সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ এবং প্রায় প্রতিবছর মানুষ মরছে। কারণ একটা সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার পর যদি আরেকটা সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হয়, তার অবস্থা গুরুতর হয়।”
ডেঙ্গু কি আর নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না?
বলা হয়, কোনও ভূখণ্ডে যদি একবার ডেঙ্গু দেখা দেয়, তবে সেটিকে পুরোপুরিভাবে নির্মূল করার কোনও উপায় নেই; বড়জোর নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর, নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় হল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন। এই দুই সমস্যা মেটানোয় সরকার যদি যথাযথ ব্যবস্থা এখন থেকেই গ্রহণ না করে, তাহলে ২০২৪ সালে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেন আইইডিসিআরের ড. মুশতাক। আগামীবার গ্রামে ক্যাজুয়ালিটি আরও বেশি হবে, কারণ সেখানে এডিস মশার চাষবাস হচ্ছে। তাছাড়া, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের মশা নিধন করার সক্ষমতা নাই । তাদের সেই অভিজ্ঞতা, সম্পদ, লোকবল, কোনোটা নাই।”
তিনি মনে করেন, এত মৃত্যু হতো না যদি পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সরকার ‘কেন্দ্রীভূত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ থেকে সরে দাঁড়াতে পারতো। অর্থাৎ, বড় হাসপাতালগুলোর ওপর থেকে যদি মানুষের নির্ভরশীলতা কমানো যেত। “মৃত্যুর হারের পেছনে প্রধান কারণ অতিমাত্রায় কেন্দ্রীভূত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। সব রোগী মেডিকেল কলেজ হসপিটালে চলে আসে। আমরা যদি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কার্যকর না করতে পারি, প্রাথমিকভাবে সরকারি মূল্যে যদি ডেঙ্গু টেস্ট করাতে না পারি, তাহলে এই সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।” এ বছর অগাস্ট থেকে অক্টোবরে ঢাকাসহ দেশের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের বড় হাসপাতালগুলোতে এমন অবস্থা হয়েছিলো যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলো। মেঝেতেও জায়গা দিতে পারছিলো না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করে, যদি উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে জটিল রোগীকে (বাচ্চা, গর্ভবতী নারী বা বয়স্ক মানুষ) পর্যবেক্ষণের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা না থাকে, হাসপাতাল যদি ওয়েল-ইকুইপড না হয়, যদি সেখানে ডাক্তার এবং নার্স না থাকে; তাহলে রোগীরা ঢাকামুখী হবেই। সেক্ষেত্রে ঢাকায় আসতে আসতে রোগীর শরীরের আরও অবনতি হবে এবং মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়বে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কৌশলপত্র
দীর্ঘ দুই দশক পর প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সাত বছর মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ‘জাতীয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশলপত্র’-এর খসড়ায় (২০২৪-২০৩০) বলা হয়েছে, এই ৭ বছরের মাঝে প্রতি লাখে ডেঙ্গু সংক্রমণ ১০০-তে এবং মৃত্যুহার ০.১ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনা হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে মোট ৬টি কৌশল বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে এই কৌশলপত্রের খসড়ায়। এর মাঝে প্রথমেই রয়েছে জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি। আরো রয়েছে, সমন্বিতভাবে কীটনাশকের সঠিক ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা, সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দ্রুত ডেঙ্গু শনাক্ত ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
বাকীগুলো হল-
বিভিন্ন দপ্তর বা সংস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাজের সমন্বয় করা, সেই সঙ্গে পুরো দেশ জুড়ে বাসাবাড়ি পর্যন্ত ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গবেষণার মাধ্যমে টিকা উদ্ভাবন থেকে শুরু করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গৃহীত সকল কর্মসূচীর দুর্বলতা নির্ণয় করে নীতি ও কৌশলগত পরিবর্তন আনা।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ, সংস্থা এবং সরকারের কাজের সক্ষমতা বাড়ানো
কিন্তু এই কৌশলপত্র নিয়ে সমালোচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এটিকে বাস্তবে রূপ দেয়া কঠিন হয়ে যাবে।
কীটতত্ত্ববিদ মি. মনজুর বলেন, “এটার মশা নিয়ন্ত্রণের অংশটি খুবই দুর্বল, এটা ঠিকমতো করে নাই। এবার উপজেলাগুলোতে প্রচুর ডেঙ্গু হয়েছে। সেগুলা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনও কিছু উল্লেখ নাই এতে।” “মিউনিসিপালটির অ্যাক্ট অনুযায়ী, মশা বা ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। অথচ এইখানে হেলথ ডিপার্টমেন্টের কথা বলা আছে যে তারা তাদের লোকবল বাড়াবে। লোকবল বাড়িয়ে কি হবে? আইন অনুযায়ী তাদের তো অধিকার নাই, একটা মেশিন নিয়া স্প্রে করার”।
একি বিষয়ে ড. মুশতাক বলেন, “এই কৌশলপত্র স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে করা হয়েছে। কিন্তু এটা বাস্তবায়িত করা কঠিন কাজ। তারা কৌশলপত্র করছে, ভালো কথা। কিন্তু এখানে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি কোথায়?” তিনি আরো বলেন, “এটা দলিল হিসেবে ঠিক আছে। কিন্তু এটার অপারেশন, একশন প্ল্যান পরিপূর্ণ না। কে কোন কাজ করবে, বাজেট কোথা থেকে আসবে, এইগুলো এড্রেস করা নাই। এটার প্রধান সমস্যা হল, স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে স্থানীয় সরকার বিভাগের সমন্বয় দরকার। স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ। অর্থাৎ মশা নিয়ন্ত্রণ করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। এটা নিয়ন্ত্রণ না হলে হাসপাতালের রোগী কমবে না”। “কৌশলপত্র অনুযায়ী কাজ শুরু হলে কিছুদিন পর স্বাস্থ্য বিভাগ বলবে, আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণ না হলে আমরা কি করবো? এইটার সমস্যা সমাধান করা হয় নাই। রোগী কমাবো কিভাবে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারে কোনও প্রস্তাবনা এখানে নাই।”
ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশিরভাগ পুরুষ কেন
এদিকে দেখা গেছে যে এ বছর মোট ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৬০ শতাংশ-ই হলো পুরুষ। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের নারীদের চেয়ে পুরুষদের শরীরে অনাবৃত অংশ বেশি থাকায় মশা দংশন করার সুযোগ বেশি পায়। তাছাড়া, এখনো বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা পুরুষদের চেয়ে কম। সেক্ষেত্রে যেহেতু ঘরের কাজে পুরুষদের চেয়ে নারীর অংশগ্রহণ বেশি, তাই নারীদের ঘরের বাইরে বের হতে হয় কম। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারীরাও একইভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে কিন্তু সেটা হিসেবে আসছে না। ড. মুশতাক বলেন, “কর্মস্থলের কারণে পুরুষরা ঢাকায় আসছে বা শহরে যাচ্ছে এবং টেস্ট করিয়ে দেখছে। কিন্তু নারীরা সেই সুযোগ পাচ্ছেই না। যদি সব ডেঙ্গু রোগী চিহ্নিত করা যেত, তাহলে সংখ্যাটা কাছাকাছি-ই হতো।”
উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে অফিশিয়ালি এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ রোগী পাওয়া গেছে, তা মূলত মোট আক্রান্তদের বিশ ভাগের এক ভাগ।