ভিটামিন ডি এর অভাব প্রভাব পড়ে হাড়ের ঘনত্বে। এর ঘাটতি অস্টিওপরোসিস এবং হাড় ভাঙা রোগের কারণ হতে পারে। এ ভিটামিনকে সানশাইন ভিটামিন বলা হয়। কারণ ত্বক সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসলে শরীর এটি কোলেস্টেরল থেকে তৈরি করে।
উল্লেখ্য, সূর্যালোক বা খাবার থেকে শরীর পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না পেলে নানা ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়।
শরীরে কী কারণে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হতে পারে?
গায়ে একেবারেই রোদ না লাগালে বা সবসময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ভুগতে পারেন ভিটামিন ডি এর অভাবে। এছাড়া দুধের অ্যালার্জিতে ভোগার কারণে অনেকে দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খেতে পারেন না। তাদের এই ভিটামিনের অভাব হতে পারে। সবসময় নিরামিষ খাবার খেলেও ভিটামিন ডি কমে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।
শরীরে ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি শক্তিশালী হাড়ের জন্য অপরিহার্য। কারণ এটি শরীরকে খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম ব্যবহার করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রিকেটস রোগের কারণ হতে পারে। এটি এমন একটি রোগ, যেখানে হাড়ের টিস্যু সঠিকভাবে খনিজকরণ করে না, যা নরম হাড় এবং হাড়ের বিকৃতির জন্য দায়ী। জেনে নিন কোন কোন লক্ষণে বুঝবেন এই ভিটামিনের ঘাটতিতে ভুগছেন।
(১) ঘন ঘন অসুস্থতা বা সংক্রমণ: ভিটামিন ডি এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলোর মধ্যে একটি ছে ইমিউন স্বাস্থ্যকে সমর্থন করা, যা আপনাকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি সরাসরি কোষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যেগুলো সংক্রমণ মোকাবিলার জন্য কাজ করে। আপনি যদি প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন, বিশেষ করে সর্দি-কাশি বা ফ্লুতে ভোগেন তবে ভিটামিন ডি-এর কম মাত্রা এর কারণ হতে পারে।
(২) ক্লান্ত বোধ করা: বিভিন্ন কারণে ক্লান্ত লাগতে পারে, যার মধ্যে একটি হতে পারে ভিটামিন ডি এর অভাব। মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা এবং অনিদ্রার মতো দৃশ্যমান কারণগুলো এর সঙ্গে সম্পর্কিত।
(৩) হাড় ও পিঠে ব্যথা: হাড় এবং পিঠের নিচের ব্যথা অপর্যাপ্ত ভিটামিন ডি মাত্রার লক্ষণ হতে পারে। ভিটামিন ডি শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণ উন্নত করে হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
(৪) বিষণ্ণতা: ভিটামিন ডি এর অভাবের সঙ্গে বিষণ্ণতার সম্পর্ক রয়েছে। বিষণ্ণতার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হতে পারে ভিটামিন ডি এর অপর্যাপ্ত মাত্রা।
(৫) দেরিতে ক্ষত নিরাময় হওয়া: অস্ত্রোপচার বা আঘাতের পরে ধীরে ধীরে ক্ষত নিরাময় হওয়া ভিটামিন ডি অভাবের লক্ষণ হতে পারে। ভিটামিন ডি যৌগগুলোর উৎপাদন বাড়ায় যা ক্ষত নিরাময় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নতুন ত্বক গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে এবং সংক্রমণ মোকাবিলায় ভিটামিন ডি এর ভূমিকা সঠিক নিরাময়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
(৬) হাড়ের ক্ষয়: ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণ এবং হাড়ের বিপাক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ একই সময়ে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম গ্রহণ শরীরকে সর্বাধিক শোষণ করতে সহায়তা করে। হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পাওয়ার মানে হচ্ছে হাড় ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ হারিয়েছে। এটি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের, বিশেষ করে নারীদের ফ্র্যাকচারের ঝুঁকিতে রাখে।
(৭) চুল পড়া: অনেক খাবার এবং পুষ্টি চুলের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। ভিটামিন ডি এর অভাবে মাত্রাতিরিক্ত চুল ঝরতে পারে।
(৮) পেশী ব্যথা: পেশী ব্যথার কারণ হতে পারে অনেকগুলো। একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ভিটামিন ডি এর অভাব। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় আক্রান্ত ৭১ শতাংশ লোকের ভিটামিন ডি প্রয়োজনের তুলনায় কম।
(৯) ওজন বৃদ্ধি: স্থূলতার কারণ হতে পারে ভিটামিন ডি এর অভাব। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, কম ভিটামিন ডি এবং বর্ধিত ওজনের মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে।
(১০) দুশ্চিন্তা: ভিটামিন ডি এর অভাব উদ্বেগজনিত রোগের সঙ্গে যুক্ত। ক্যালসিডিওলের মাত্রা ভিটামিন ডি এর একটি রূপ, উদ্বেগযুক্ত ব্যক্তিদের পাশাপাশি বিষণ্ণতায় আক্রান্তদের মধ্যে এই কম ছিল- এমনটা বলছে এক গবেষণা।