• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন

নোয়াখালীর বেদেপল্লীতে মাদকের কারবার, এলাকা ছাড়ছেন স্থানীয়রা

Avatar
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সংবাদটির পাঠক ৪ জন

বন-বাঁদারে সাপ খোঁজা আর তাবিজ-কবজ-সিঙ্গা লাগিয়ে টোটকা চিকিৎসায় জীবিকা নির্বাহ করতো বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন সেই সবই অতীত এবং ইতিহাস। নৌকা আর যাযাবরের জীবন ছেড়ে সামাজিকতায় ফিরে আসলেও বিলাসী জীবনযাপনের লোভে জড়িয়ে পড়েছেন মাদক কারবারে। প্রশাসনের অভিযানেও থামানো যাচ্ছেনা মাদকসেবী ও কারবারিদের। বেদেদের এমন বিশৃঙ্খল জীবনযাপনের কারণে পল্লী এলাকা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে জানা গেছে, নোয়াখালী সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামে ২০১০ সালের দিকে নৌকা আর যাযাবরের জীবন ছেড়ে সামাজিকতায় বসতি গড়ে তোলেন বেদেরা। বর্তমানে ওই বেদেপল্লীতে প্রায় ৭’শ পরিবারে ৪ হাজারের বেশি বেদের বসবাস। সামাজিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করলেও বেদেদের অনেকেই এখনো বিশৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের চত্রছায়ায় জড়িয়ে পড়েছেন মাদক কারবারে। দিনের বেলায় টোটকা চিকিৎসার নামে বেদেরা পল্লীর বাহিরে ছড়িয়ে দেয় মাদক আর রাতের বেলায় পল্লীর ভিতরে বাহিরের লোকজন এসে প্রকাশ্যে জড়িয়ে পড়েন মাদক বেচাকেনায়। এনিয়ে খোদ নিজেদের মধ্যে পক্ষ-বিপক্ষ তৈরী হয়ে একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। সম্প্রতি সাড়ে ৩ হাজার ইয়াবা ও ৭’শ গ্রাম গাঁজা’সহ দুইজনকে গ্রেফতার করে জেলা মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর। বিভিন্ন সময় প্রশাসনের অভিযানে এসব মাদক কারবারিরা ধরা খেলেও পুনরায় জামিনে বেরিয়ে এসে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। মাদক ছাড়াও বেদেরের অনেকেই নানা অসামাজিক কার্যকলাপে যুক্ত রয়েছেন। যার কারণে ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বেদেপল্লীর জায়গা-জমি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে অন্যত্ব চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন বলছে, একেকজন একেক জায়গা থেকে এসে এখানে বসবাস করছে। প্রথম থেকে এই বেদেপল্লীতে ইয়াবা, গাঁজা’সহ সকল মাদক কারবার ও সেবন চলত। এতে বেদে সম্প্রদায় ও আশাপাশের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এজন্য তারা মাদক বিরোধী একটি সংগঠন তৈরী করে একাধিক মাদক কারবারিকে ধরে প্রশাসনের হাতে তুলে দেন। কিন্ত কিছুদিন পরই স্থানীয় প্রভাবশালীদের চত্রছায়ায় ওই মাদক কারবারিরা বেরিয়ে এসে পুনরায় তাদের কারবার শুরু করে। মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মাদক সংগঠনের লোকজনকে থাকতে হয় হুমকির মুখে।

মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের গডফাদারদের বিষয়ে জানতে চাইলে বেদে স¤প্রদায়ের একাধিক ব্যক্তি এবং স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এওজবালিয়ার দুটি ওয়ার্ডে মাদকের বড় কারবারি হলেন, ওয়াসিম, ফরহাদ, পেন্সিল, মো. মিজান, ওসমান, মো. রাসেল, টুকু, টাকলা জাকির, তাহের, জাকির সরর্দার, মোস্তাক, তরিকুল হাসান, রোকন, আলামিন, কামরুল হোসেন, আরিফ, আক্তার হোসেন। এছাড়া এসব মাদক কারবারিদের স্ত্রী-সন্তানরাও তাদের সঙ্গে মাদক কারবারে জড়িত রয়েছেন।
স্থানীয় পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন মাসুম ও এলাকাবাসী বলেন, বেদেরা এখানে বসতি গড়ে তোলার পর থেকে তাদের মধ্যে একটি গ্রæপ বেদেপল্লীর আশপাশের

প্রভাবশালীদের চত্রছায়ায় ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল, মদ’সহ নানা রকমের মাদকের কারবার এবং অসামাজিক কার্যকলাপ শুরু করে। এতে স্থানীয় লোকজন ও সাধারণ বেদেরা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে বেগ পেতে হচ্ছে। আগের মতো বেদেদের এখন তেমন কোন কর্মস্থান নেই। তাই প্রতিদিন ভোরে বেদেরা ফেরীর নামে মাদক আমদানি ও পাচারে বের হয়। সন্ধ্যার পর বেদেপল্লীতে শুরু হয় মাদক বেচাকেনা। সেটা চলে ভোর রাত পর্যন্ত।

বেদেরা বসতি স্থাপনের পর থেকে এই বেদেপল্লী থেকে সদর পশ্চিমাঞ্চলে মাদক ছড়িয়ে গেছে দাবি করে স্থানীয় এওজবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন বলেন, বেদেদের আয়ের মূল উৎস হলো মাদক, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে এখান থেকে মাদক নিয়ে যায়। যা একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা করেছেন তিনি। তার পরও এখানে মাদক নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। ভ্রাম্যমান আদালতে পযাপ্ত সাজা নিশ্চিতের মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি জানান তিনি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, নোয়াখালীর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হামিদ বলেন, কোন ধরনের কর্মস্থান না থাকায় মাদকে জড়িয়ে পড়ছে বেদেরা। ওই বেদেপল্লীতে একাধিকবার অভিযানে বিপুল মাদকদ্রব্যসহ একাধিক মাদক কারবারিকে মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে দেবেদের মাদক থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে জেলায় নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্ত।

বেদে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সামাজিক সম্প্রিতি অটুট রাখতে নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযানের মাধ্যমে এওজবালিয়ার এই বেদেপল্লীকে মাদকমুক্ত ঘোষণা করবে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এমনটাই প্রত্যাশা করেন স্থানীয়া।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  

নামাজের সময় সূচি

    Dhaka, Bangladesh
    শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
    ওয়াক্তসময়
    সুবহে সাদিকভোর ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ
    সূর্যোদয়ভোর ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ
    যোহরদুপুর ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ
    আছরবিকাল ২:৫০ অপরাহ্ণ
    মাগরিবসন্ধ্যা ৫:১১ অপরাহ্ণ
    এশা রাত ৬:৩০ অপরাহ্ণ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!