নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে শিশুর খতনায় ভুলে লিঙ্গের সামনের অংশে বাড়তি কাটায় অতিরিক্ত রক্তপাতের ঘটনায় অভিযুক্ত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিজয় কুমার দে’কে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষানবিশ উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সৌরভ ভৌমিকের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ঘটনা তদন্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.মো: যোবায়েরকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্য হলেন, মেডিকেল অফিসার ডা.শাহাদাত হোসেন। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাটি জানার পর স্বাস্থ্য বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা.মো.মহিউদ্দিন এবং তিনি নিজে (সিভিল সার্জন) আজ বৃহস্পতিবার সকালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুটিকে দেখতে যান।
এসময় তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিশুটি ও তার বাবা’সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ওইদিন দায়িত্বরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিজয় কুমার দে’কে তাৎক্ষণিক সেন্টমার্টিন দ্বীপ স্বাস্থকেন্দ্রে শাস্তিমূলক বদলির আদেশ দেয়। এছাড়া শিক্ষানবিশ উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সৌরভ ভৌমিককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়।
ভুক্তভোগী শিশু আল নাহিয়ান তাজবীব (৭) উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আলমগীর হোসেন বাদলের ছেলে। সে বসুরহাট পৌরসভা এলাকার চাইল্ড কেয়ার স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র।
শিশুটির বাবা আলমগীর হোসেন বাদল অভিযোগ করে বলেন, বুধবার সকাল ১১টার দিকে ছেলেকে খতনা করাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তিনি। এসময় তিনি চিকিৎকের খোঁজ করলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৈশ্য প্রহরীসহ তিনজন চিকিৎসক আসবেন বলে শিশুটিকে তার বাবার কাছ থেকে জরুরী বিভাগে নিয়ে নিজেরাই খতনা করাতে থাকেন। এসময় তিনি আবারও চিকৎকের খোঁজ করলে তারা নিজেদেরকে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ দাবি করে এদিন সকালে তারা আরো দুই শিশুর খতনা করেছেন বলে তাকে (শিশুটির বাবাকে) আশ্বস্ত করে সেখান থেকে বের করে দেন। এক পর্যায়ে শিশুটির চিৎকার শুনে তিনি সেখানে গিয়ে শিশুর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে দেখেন বলে অভিযোগ করেন। এঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দাবি করেন শিশুটির বাবা।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনায় শিক্ষানবিশ উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সৌরভ ভৌমিকের সরাসরি সম্পৃক্ততা এবং উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিজয় কুমার দে এর দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্তে অন্য কারো সম্পৃক্তা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ সেলিম জানান, শিশুটি এখন সুস্থ আছে। খতনার সময় তার একটু বেশি রক্তপাত হয়। যা স্বাভাবিক ঘটনা হলেও এতে শিশুটির স্বজনরা ঘাবড়ে যান। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।