যুক্তরাষ্ট্রে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এক রোলারকোস্টার রাইডের মতো। নামীদামী তারকাদের সমর্থন, বিভিন্ন রকম গুজব আর ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি এবং খোদ বর্তমান প্রেসিডেন্টের ওপর গুপ্তহত্যার চেষ্টা—সবকিছু মিলিয়ে উত্তেজনা, অস্থিরতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবারের নির্বাচন।
আর মাত্র একদিন পর ৫ নভেম্বর, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিসের মধ্যে ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন মার্কিন নাগরিকরা—যুক্তরাষ্ট্র কি তাদের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে নাকি দ্বিতীয় মেয়াদে আবারো প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?
দেশজুড়ে চাঞ্চল্যকর এই নির্বাচনে কার জয় হবে, তা নিয়ে চলছে বিভিন্ন জনমত জরিপ। বিভিন্ন সংস্থা ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠান পরিচালিত জরিপে দেখা যাচ্ছে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। এবারের নির্বাচনে জনমত জরিপগুলোও বিশেষ মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে।
অ্যাটলাস ইনটেলের জরিপ : ট্রাম্প এগিয়ে
ব্রাজিলের ভিত্তিক জরিপ সংস্থা অ্যাটলাস ইনটেলের সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী, সুইং রাজ্যগুলোর বেশিরভাগে সামান্য ব্যবধানে ডোনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে আছেন। অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের পক্ষে ৫২.৩ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে কমালা হ্যারিস পেয়েছেন ৪৫.৮ শতাংশ। নেভাদায় ট্রাম্পের জনসমর্থন ৫১.২ শতাংশ এবং হ্যারিসের সমর্থন ৪৬ শতাংশ। নর্থ ক্যারোলিনাতেও ট্রাম্পের সামান্য এগিয়ে থাকার চিত্র দেখা গেছে; সেখানে তিনি পেয়েছেন ৫০.৫ শতাংশ জনসমর্থন এবং হ্যারিসের সমর্থন ৪৭.১ শতাংশ।
এছাড়া জর্জিয়ায় ৫০.১ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পের পক্ষে এবং ৪৭.৬ শতাংশ হ্যারিসকে সমর্থন জানিয়েছেন। মিশিগানে ট্রাম্প ৪৯.৭ শতাংশ এবং হ্যারিস ৪৮.২ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছেন। পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প ৪৯.৬ শতাংশ এবং হ্যারিস ৪৭.৮ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, সাতটি সুইং রাজ্যের গড়ে ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৯ শতাংশ জনসমর্থন, যেখানে হ্যারিসের পক্ষে রয়েছে ৪৭.২ শতাংশ।
অ্যাটলাস ইনটেল দাবি করেছে যে, ২০২০ সালের নির্বাচনে তারা সুইং রাজ্যগুলোর নির্ভুল পূর্বাভাস দিয়েছিল। এবারের নির্বাচনেও তাদের পূর্বাভাস কতটুকু সঠিক প্রমাণিত হবে, তা জানার জন্য মার্কিন জনগণ অপেক্ষা করছেন।
নিউইয়র্ক টাইমস-সিয়েনা কলেজ জরিপ : হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজ পরিচালিত জরিপেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে। এই জরিপ অনুযায়ী, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলিনা এবং উইসকনসিনে সামান্য ব্যবধানে কমালা হ্যারিস এগিয়ে আছেন। তবে অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের অবস্থান মজবুত। মিশিগান, জর্জিয়া এবং পেনসিলভানিয়ায় দুই প্রার্থীর সমর্থনের ব্যবধান খুবই কম, যা নির্বাচনের ফলাফলকে যেকোনো দিকে নিয়ে যেতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমসের জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার ইতোমধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন। আগাম ভোটারদের মাঝে কমালা হ্যারিস ট্রাম্পের থেকে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। তবে এখনও যারা ভোট দেননি, তাদের মাঝে ট্রাম্পের সমর্থন তুলনামূলক বেশি।
আইওয়ায় আশ্চর্যজনক ফলাফল
জনমত জরিপে একটি বিশেষ চমক দেখা গেছে আইওয়া রাজ্যে। ঐতিহ্যগতভাবে রিপাবলিকান সমর্থক রাজ্য হিসেবে পরিচিত আইওয়ায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিস ৪৭ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছেন, যেখানে ট্রাম্পের সমর্থন মাত্র ৪৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এই রাজ্যের ৪৭ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পকে এবং ৪৩ শতাংশ হ্যারিসকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তবে সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, রাজ্যের নারী ভোটারদের বড় অংশ হ্যারিসের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। নারীদের ৫৬ শতাংশ হ্যারিসকে এবং ৩৬ শতাংশ ট্রাম্পকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। পুরুষদের মাঝে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা তুলনামূলক বেশি; ৫২ শতাংশ পুরুষ ট্রাম্পের পক্ষে এবং ৩৮ শতাংশ হ্যারিসের পক্ষে আছেন।
আইওয়াতে কৃষকদের প্রতি ট্রাম্পের অবদানকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেছেন, “আমি কৃষকদের ভালোবাসি, তারাও আমাকে ভালোবাসেন।” তবে এই রাজ্যে নারী ভোটারদের সমর্থন হারানো ট্রাম্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
শেষ মুহূর্তের প্রচারণা
৫ নভেম্বরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প এবং কমালা হ্যারিস আজ শেষ মুহূর্তের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মিশিগানে হ্যারিস ইসরায়েল-গাজা সংঘাতের অবসানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা এবং জর্জিয়া চষে বেড়াচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পেনসিলভানিয়ায় এক বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেছিলেন, “সাংবাদিকদের গুলি করা হলে কিছু মনে করবো না।” এছাড়া গত জুলাইয়ে গুপ্তহত্যার চেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, “ভুয়া সংবাদই এখন আমার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।”
সোমবার রাত পর্যন্ত ভোটারদের মন জয়ে চূড়ান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দুই প্রার্থী। আগামীকাল সকাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ভোটগ্রহণ শুরু হবে, এবং এরপরই জানা যাবে ইতিহাসের পথে যুক্তরাষ্ট্র—একজন নারী প্রেসিডেন্টকে গ্রহণ করতে যাচ্ছে নাকি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় ফিরবেন।
শেষে—হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা, নারী ভোটারদের সমর্থন এবং সংবেদনশীল ইস্যুগুলোর উপর নির্ভর করছে কে জিতবেন এই রেস। অপেক্ষায় গোটা বিশ্ব।