সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন
সামাজিক মাধ্যমে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগের পর গতকাল রোববার রাতে নিজ বাসায় সংবাদ মাধ্যমে এসে নিজের জীবনের সংশয়ের কথা জানিয়ে পরিমনী আরো বলেন, আমাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। চারদিন ধরে থানায় ঘুরেও কোনো মামলা করতে পারিনি। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
কার বিরুদ্ধে অভিযোগ
অভিযুক্তের নাম সম্পর্কে পরীমনি বলেন, তার নাম নাসির উদ্দিন আহমেদ। ঘটনার সময়ে তিনি নিজেকে বোট ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার কাছের লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে হুমকি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিলেন পরিমনী। চেহারায় ছিল অসুস্থতার ছাপ। চলে যাওয়ার আগে কাঁদতে কাঁদতে পরীমনি বলেন, আমি আত্মহত্যা করার মেয়ে নই। আমি যদি মরে যাই তাহলে আপনারা মনে করবেন আমাকে হত্যা করা হয়েছে।
পরিমনীর পাশে পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী
পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী পরিমনীর সঙ্গে ছিলেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পরী আমাকে মা ডাকে সেই জায়গা থেকে আমি আমার সন্তানের কষ্ট বুঝি। আমি এর বিচার চাই। আমি চাই পরিমনী আবার ঘুরে দাঁড়াক।
ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে হৈচৈ
এর আগে রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন পরিমনী, যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চেয়ে ওই স্ট্যাটাসের শুরুতে এ নায়িকা লেখেন, ‘আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমি এর বিচার চাই।’
স্ট্যাটাসের পর গণমাধ্যম কর্মীরা এ বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করলে তিনি বলেন, আপনারা বাসায় আসেন। সব বলবো। ফোনে এসব বলা ঠিক হবে না।
জেনেও অনেক ছিলেন চুপ
মুঠোফোনে পরিমনী জানিয়েছিলেন, গত চার দিন ধরে থানা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র বন্ধুদের কাউকে পাশে পাননি তিনি। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতেও অভিযোগ নিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রতিকার পাননি। যাদেরকে পেয়েছেন সবাই বিস্তারিত ঘটনা জেনে ‘দেখছি’ বলে চুপ হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।
জায়েদ খানের শরণাপন্ন
পরিমনীর এমন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জায়েদ খানও।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘পরিমণী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিচার চান তিনি।’
তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় পরিমনী কতটা ভুক্তোভোগী হয়েছেন বা ঘটনাটি কি সে বিষয়ে কিছু জানাননি জায়েদ খান।
তবে এটাই স্পষ্ট যে, জায়েদ খানসহ শিল্পী সমিতির কেউ কেউ ঘটনার প্রসঙ্গে অবগত আছেন।
যা বলছে পুলিশ
পরিমণীর স্ট্যাটাস সম্পর্কে পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘তিনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা তার ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করব।’
রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেওয়া পরিমনীর স্ট্যাটাসটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল।
পোস্টের পর ১ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে প্রায় ৫০ হাজার লাইক জমা পড়েছে তাতে। মন্তব্য জমা পড়েছে ১৪ হাজারের বেশি। শেয়ার হয়েছে প্রায় দেড় হাজার।
সিনেপ্রেমীদের প্রশ্ন, হঠাৎ কেন এমন স্ট্যাটাস দিলেন পরিমনী? কে বা কারা নির্যাতন করেছেন এই চিত্রনায়িকাকে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব কেন?
স্ট্যাটাসে যা লেখা ছিল
রোববার রাতে ফেসবুকে লেখা ওই স্ট্যাটাসে পরিমনী লেখেন, ‘বরাবর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমণি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
‘এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধু বেনজীর আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না মা। যাদের পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনার বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়!’
পরিমণী আরও লেখেন, ‘আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পড়ে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারোর কি করার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’
‘আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহূর্ত মাকে খুব দরকার এখন, মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা আমি বাচঁতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।’