এনবি নিউজ : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এ তথ্য জানিয়েছেন। অপরদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় রাজশাহী ও ময়মনসিংহে ৩২,খুলনায় ২৭,ঝিনাইদহ ও বরিশালে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রাজশাহী :
রাজশাহী জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তাঁদের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে দুজন গোদাগাড়ীর, দুজন পবার, একজন তানোরের এবং অপর একজন নগরীর। এ নিয়ে জেলায় করোনায় মোট মৃত্যু দাঁড়াল ১৮৭ জনে।
অন্যদিকে, রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত মৃত ১৮ জনের মধ্যে তিন জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। অন্য ১৫ জন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে। করোনায় মৃত তিন জনের মধ্যে দুজন রাজশাহীর এবং একজন নওগাঁর বাসিন্দা। আর, উপসর্গ নিয়ে মৃত ১৫ জনের মধ্যে রাজশাহীর আট জন। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুজন, নাটোরের দুজন, নওগাঁর একজন, সিরাজগঞ্জের একজন এবং একজন কুষ্টিয়ার। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৭৪ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে এবং সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৫২ জন। বর্তমানে হাসপাতালের ৪৫৪টি করোনা বেডে ৫০১ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।
এ ছাড়া রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার এক হাজার ৪৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যার শতকরা হার ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এক দিনের ব্যবধানে শনাক্ত কমেছে শতকরা এক দশমিক ৮৮ ভাগ।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মৃতদের মধ্যে মধ্যে ছয় জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছিল। অপর আট জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
মমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ও করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মো. মহিউদ্দিন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন ময়মনসিংহ সদরের মফিজুর (৬৫), শহীদুল (৪৫), ঈশ্বরগঞ্জের মোজাম্মেল হক (৬০), গফরগাঁওয়ের সিরাজুল ইসলাম (৮০), নেত্রকোনা সদরের সাহেরা (৭০) ও পূর্বধলার আব্দুল মতিন (৬৮)।
এ ছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন ময়মনসিংহ সদরের আব্দুল জলিল (৬০), মোখলেছুর (৬৫), মীর জান (৮০), ভালুকার আলি নেওয়াজ (৫৫), গফরগাঁওয়ের কুলসুম (৫৫), শেরপুর সদরের আব্দুস সামাদ (৬৫), ঝিনাইগাতীর জয়তিয়া রানী (৪০) ও টাঙ্গাইলের আব্দুল জলিল (৫৬)।
ডা. মো. মহিউদ্দিন খান আরও জানান, বর্তমানে মমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৩৮৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রয়েছেন ২০ জন।
এদিকে, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৬৯টি নমুনা পরীক্ষার করে ১৮৭ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ১১৭ জন ও আরটি পিসিআর টেস্টে ৭০ জন শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ করোনা টেস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ময়মনসিংহ সদরের ১০০ জন, নান্দাইলের ১৭ জন, ঈশ্বরগঞ্জের পাঁচ জন, গৌরীপুরের আট জন, ফুলপুরের তিন জন, তারাকান্দার দুজন, হালুয়াঘাটের একজন, মুক্তাগাছার ১৪ জন, ফুলবাড়িয়ার ১৪ জন, ত্রিশালের ১৩ জন, ভালুকার চার জন ও গফরগাঁওয়ের ছয় জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মমেক হাসপাতালে জেলার ১০৪ জন এবং বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালে ১৩ জন রোগী ভর্তি আছে। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট নয় হাজার ৪৩৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে ৯৮ জনের।
খুলনা :
খুলনার চারটি হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অপর চার জন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে। খুলনায় করোনায় ও উপসর্গ নিয়ে ২৪ ঘণ্টায় এখন পর্যন্ত এটিই সর্বাধিক মৃত্যুর সংখ্যা।
এর মধ্যে খুলনার বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাপাতালের চেয়ারম্যান ডা. গাজী মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতালটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ ১০ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন খুলনার বিষ্ণু মণ্ডল (৪৩), মর্জিনা বেগম (৬৫), আবদুল হাকিম (৪৫), আবেদা (৬৫) রুবিনা (৫০), সেলিম শিকদার (৫৮), মোস্তফা (৪০), যশোরের কুলসুম বেগম (৭০), ফাতেমা (৭৫) ও আনোয়ার (৪৫)। এই হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এবং করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানিয়েছেন, হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সাত জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অপর চার জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। হাসপাতালের রেড জোনে বর্তমানে ১২৬ জন রোগীসহ মোট ১৮৫ জন চিকিৎসাধীন।
করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে করোনায় মারা যাওয়া সাত জন হলেন খুলনার বাবুল মোল্লা (৫০), হোসনে আরা (৫৫), আবুল কালাম আজাদ (৪৫), রোকেয়া (৬০), যশোরের জুলেখা (৫৭), বাগেরহাটের কুদ্দস মণ্ডল (৭৮) ও নড়াইলের পুস্পনরানি (৬৫)।
খুলনার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. কাজী রাশেদুল জানিয়েছেন, হাসপাতালটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন খুলনার মমতাজ (৩৫), মোজাফফর শেখ (৬০), শামীম আরা (৬০), হানিফ মোড়ল (৬৫) ও নড়াইলের রোমেসা (৭৫)।
এ ছাড়া শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. প্রকাশ দেবনাথ জানান, হাসপাতালটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় বাগেরহাটের ইউনুস আলী (৭০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে
ঝিনাইদহ :
ঝিনাইদহে করোনায় ও উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ নিয়ে জেলায় মোট পাঁচ হাজার ৪৮২ জনের করোনা শনাক্ত করা হলো।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় নয় জন ও শৈলকুপা উপজেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এক দিনে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৩ জনে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। করোনা রোগী ৮৯ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছে আরও ৫২ জন। শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৪১ জন।
বরিশাল :
পাশাপাশি একই সময়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসাপাতালের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে সাত জন এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের বরগুনা জেলায় দুজন, পিরোজপুরে একজন এবং ঝালকাঠিতে দুজনসহ মোট পাঁচ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যা নিয়ে বরিশাল বিভাগে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৩৭ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক জানান, মোট আক্রান্ত ২১ হাজার ১১৫ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১৫ হাজার ৬২৯ জন।
করোনায় আক্রান্ত সংখ্যা বরিশাল জেলায় নতুন সর্বাধিক ১৮১ জন নিয়ে মোট নয় হাজার নয় জন, পটুয়াখালীতে নতুন ৫৪ জন নিয়ে মোট দুই হাজার ৭৭২ জন, ভোলায় নতুন ২৩ জনসহ মোট দুই হাজার ০৪ জন, পিরোজপুরে নতুন ১৩৮ জন নিয়ে মোট দুই হাজার ৯০৩ জন, বরগুনায় নতুন ৫৩ জন নিয়ে মোট আক্রান্ত এক হাজার ৭৬২ জন এবং ঝালকাঠিতে নতুন ৯৮ জন শনাক্ত নিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৬৫ জন।
এদিকে, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু বরিশাল শেবাচিম হাসাপাতালের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে সাত জনের একং করোনা ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। যা নিয়ে শুধু শেবাচিম হাসপাতালেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২২৫ জন এবং আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ৫৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর, উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৫৭৯ জনের মধ্যে ১৩ জনের কোভিড টেস্টের রিপোর্ট এখনও হাতে পাওয়া যায়নি।
শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত) শেবাচিমের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৫৪ জন এবং করোনা ওয়ার্ডে ১৪ জন ভর্তি হয়েছে। করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে এখন ২৪৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন। যাদের মধ্যে ৫৫ জনের করোনা পজিটিভ এবং ১৮৯ জন আইসোলেশনে রয়েছে। আরটি পিসিআর ল্যাবে মোট ১৯০ জন করোনা পরীক্ষা করায়। যার মধ্যে ৫৩ দশমিক ১৫ শতাংশ পজিটিভ শনাক্তের হার।
এদিকে দিন দিন করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বরিশাল বিভাগের জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সাধারণ রোগীদের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না আসা ও পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস জানান, করোনার সংক্রমণ বরিশালজুড়ে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার মধ্যে বরিশাল নগরীতে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ রোগী যারা রয়েছেন—যেমন সাধারণ আহত, সর্দি বা কাশির রোগী, অর্থাৎ যেসব চিকিৎসা জেলা ও উপজেলার হাসপাতালে সম্ভব, সেসব রোগীদের শেবাচিম হাসপাতালে না আসা এবং না পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।