এনবি নিউজ : করোনাকালে ক্রেতা বাড়ছে দেশের আবাসনশিল্পে। এই খাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ক্রেতাদের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে, ভালো ভালো আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অবিক্রীত ফ্ল্যাট নেই। এত দিন যেসব প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণে বিরত ছিল, তারাও এখন এগিয়ে এসেছে। সরকার আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে ফ্ল্যাটের সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের। অন্যদের চাহিদা প্লটে। এমন পরিস্থিতিতে আবাসন খাতে ঋণের সুদ ও রেজিস্ট্রেশন খরচ কমিয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, ক্রেতাদের কাছে এখন লাভজনক বিনিয়োগ গন্তব্য হচ্ছে আবাসন খাত। ফ্ল্যাট আর প্লটের রেজিস্ট্রেশন খরচ এখন ১০ শতাংশ। এর সঙ্গে আছে সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্ক সুদের ঋণ।
এ প্রসঙ্গে আবাসনশিল্প মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, আমরা এখন ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। পরিস্থিতি এমন যে- ভালো কোম্পানিগুলোও ক্রেতাদের ফ্ল্যাট দিতে পারছে না। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিদিনই ক্রেতা বাড়ছে। তাদের মাঝে ফ্ল্যাট ও প্লট কেনার আগ্রহ বাড়ছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাট নির্মাণের নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করছে।
শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের এই কর্ণধারের মতে- অপ্রদর্শিত আয়ও বিনিয়োগ হচ্ছে আবাসন খাতে। এখন ব্যাংক ঋণের সুদহার ও ফ্ল্যাট এবং প্লটের রেজিস্ট্রেশন খরচ কমিয়ে ৭ শতাংশ করা উচিত। এটা আমাদের জোর দাবি। তিনি জানান, ঋণ দিতে ব্যাংকগুলো এখন ব্যাপক আগ্রহী। কোনো কোনো ব্যাংক ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। সব মিলিয়ে আবাসন খাতে যে গতি ফিরেছে, তা সামগ্রিক অর্থনীতিকেও চাঙা করছে। রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী তানভিরুল হক প্রবাল বলেন, আবাসনশিল্পে ব্যবসা এখন ভালোই। ক্রেতাদের সাড়া আগের চেয়ে বেশি। এটা দুটো কারণে- একটি হচ্ছে করোনাকালে টাকা পাচার কমেছে। আরেকটি হলো- পর পর দুটো অর্থবছর অপ্রদর্শিত অর্থবিনিয়োগে সরকারের দায়মুক্তি সুবিধা। সব কিছু মিলিয়ে এখন ভালো অবস্থানে আবাসনশিল্প।
দেশের অভিজাত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই পরিচালক ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল বলেন- সাম্প্রতিক সময়ে ক্রেতাদের প্রচুর চাহিদা ভালো মানের ফ্ল্যাটে। মূলত অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ সুবিধার কারণে এই চাহিদা তৈরি হয়েছে। ফলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ক্রেতাদের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
এর আগে গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অধিক পরিমাণে রাজস্ব আয় ও বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল রাখতে দেওয়া আইনি নির্দেশনায় বলা হয়, দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। এমন সুযোগ নিতে করদাতাদের অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে- জমি, ফ্ল্যাট, বিল্ডিং ও এপার্টমেন্ট, ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজে। এই সুবিধা নিতে ১০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে। অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগে অর্থ পাচার ও কর ফাঁকি কমবে। এই পদক্ষেপে অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থপ্রবাহ, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধির আশা করছে সরকার। এই সুবিধা নতুন ২০২১-২২ অর্থবছরেও অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অন্যান্য অপ্রদর্শিত অর্থের ওপর ৫ শতাংশ হারে জরিমানা আরোপের বিধান করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে দেশে আবাসন খাতের বার্ষিক বাজার এখন প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৫-১৭ শতাংশ। বছরে চাহিদা ১ লাখ ২০ হাজার ফ্ল্যাটের। আবার প্রবাসী আয় ও অপ্রদর্শিত টাকার মালিকরা স্থাবর সম্পত্তি বেশি কেনেন। করোনার সময়ে প্রবাসী আয় সে তুলনায় কমেনি। পাশাপাশি জমি বা ফ্ল্যাট কিনে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে কেনাবেচাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। করোনায় আবাসনশিল্পের পণ্যভিত্তিক ৪৫৮ উপখাতে যে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছিল, সেখানেও এখন আশার আলো ফুটেছে। এতে ২ হাজারেরও বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে।
এ টি