এ জে তপন : কোনো অনুদান কিংবা সহায়তা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে অংশীদার হওয়ার সামর্থ্য ও সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে চীন, ভারত, ইউরোপ ও জাপানের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিতে পারবেন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তারা। লস অ্যাঞ্জেলেসে শুক্রবার বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে রোডশোতে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম অংশীদার। আমরা দেশটির সহায়তা নয়, বিনিয়োগ চাই। তিনি বলেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি একেবারে সহজ। তিনি বলেন, প্রবাসীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসা উচিত। এ ব্যাপারে সব ধরনের জটিলতা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে এনআরবি গেটের ব্যাপারে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, চতুর্থ ও পঞ্চম শিল্প খাত মাথায় রেখে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। শিল্প খাতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। শিল্প খাত সেবা গ্রাহকের দুয়ারে পৌঁছে গেছে।
প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ বিশাল বাজার রয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। কম মূল্যে শ্রমিক, বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং অন্যান্য সেবা মিলছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বের প্রথম অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য রপ্তানিতে বিভিন্ন দেশে দেশটির উচ্চ শুল্ক দিতে হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে সুবিধা পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করলে চীন, ভারত, ইউরোপ ও জাপানের বাজার থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা তারাও নিতে পারবে। অ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার আসাদুল ইসলাম রিপনের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের শেয়ারবাজার অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ইকুইটি মার্কেটের পাশাপাশি বন্ড, স্মলক্যাপ ও অন্যান্য পণ্য আসছে। অর্থাৎ পণ্যের বহুমুখীকরণ হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আমরা এ রোডশোর উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে রোডশো কেন? জবাব হচ্ছে-সহায়তা নয়, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ চাই।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। একই পূর্বাভাস দিয়েছে আরেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ। আর মোট জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিকে সাপোর্ট দিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৮৬০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুসারে করোনার মধ্যে ২৩ দেশ অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে থাকবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তি ৭ কোটি। এর মধ্যে সাড়ে ৫ কোটিই তরুণ। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।