এনবি নিউজ : নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে বসে সুনির্দিষ্ট সাতটি সুপারিশ দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
আজ মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে বেলা সোয়া ১১টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ইসিকে নির্বাচনকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন, আর্থিক অনিয়ম থেকে দূরে থাকার পরামর্শও দিয়েছেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বৈঠকে তিন নির্বাচন কমিশনার, ইসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সুশীল সমাজের আমন্ত্রিত ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক এতে অংশগ্রহণ করেন।
লিখিত সাতটি সুপারিশমালা:
১. আজকের এই আয়োজনটি যেন কেবল আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে একটি প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হয়। যে সব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বাংলাদেশে ইসি, নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ধারাবাহিক গবেষণা ও অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের পর্যায়ক্রমে আরো ঘনিষ্টভাবে সম্পৃক্ত করে কমিশনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে পালনের জন্য স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদি কৌশল ও সুনির্দিষ্ট পথরেখা প্রণয়ন করা উচিত।
২. ইসির সাংবিধানিক মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও জনআস্থা অর্জনে অন্যতম পরিমাপক হবে কমিশনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সরকারি আনুগত্য ও প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে তার অবস্থান ও কর্মকাণ্ডে নিজেকে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কতটুকু প্রমাণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে, সরকারি আনুগত্যমূলক মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান পরিহার করে রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের চর্চা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
৩. কমিশনের দায়িত্ব পালনে যে আইন ও বিধিমালা রয়েছে, তা পর্যাপ্ত কি-না, তা বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করে ইসি ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারের প্রস্তাব করুন এবং যথাযথ অধিপরামর্শমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে এমন প্রস্তাব বিবেচিত হতে পারে যেন নির্বাচনকালীন সরকার, জনপ্রতিনিধি হিসেবে অধিষ্ঠিত থেকে নির্বাচন করা, এ ধরনের বিতর্কিত বিষয়ে সমঝোতা অর্জন সম্ভব হয়।
৪. ইসি এককভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে না। এক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকার, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে যেহেতু আইনগতভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এ সব প্রতিষ্ঠান নির্বাচনকালে সুনির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত, সেজন্য কমিশনকেই সৎসাহসের সঙ্গে যথাযথভাবে তাদের কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
৫. নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আগ্রহী সকল দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে অবাধে অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
৬. বিগত ইসির বিরুদ্ধে উত্থাপিত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি বরাবর কমিশনের অপসারণের যে আবেদন উত্থাপিত হয়েছিল, তার পূর্বাপর বিশ্লেষণ করে এ ধরনের পরিস্থিতি যেন পুনরায় উদ্ভব না হয়, তা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
৭. জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নির্ভরযোগ্য সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণ উপেক্ষা করে ঢালাওভাবে ব্যাপক বিতর্কিত নির্বাচনকে ‘নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পেরেছি’-এ রূপ অবাস্তব দাবি করা ও বিব্রতকর অস্বীকারের চর্চা পরিহার করতে হবে। নিজেকে আয়নার মুখোমুখি করে, ব্যর্থতার ক্ষেত্রে দায় স্বীকারের সৎসাহসের পরিচয় দিতে হবে।
এ টি