এনবি নিউজ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন আজ। ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ড থেকে সেদিনের নিষ্পাপ শিশু রাসেলও রেহাই পায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী এএফএম মহিতুল ইসলামের মতে, ১১ বছরের শিশু রাসেল প্রতিদিনের মতো সেদিনও ঘুমিয়েছিল। আকস্মিক গুলির শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমভাঙা চোখে সে আতঙ্কিত হয়ে চমকে ওঠে। অবস্থা বুঝে বেগম মুজিব আদরের দুলাল রাসেলকে রক্ষায় বাড়ির কাজের লোকজনসহ পেছনের দরজা দিয়ে চলে যেতে বলেন। পেছনের ফটক দিয়ে বাইরে যাওয়ার সময় ঘাতকরা রাসেলকে আটক করে। এ সময় বাড়ির ভেতরে মুহুর্মুহু বুলেটের শব্দ, বীভৎসতা আর আর্তচিৎকার শুনে অবুঝ শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঘাতকদের বলেছিল, ‘আমি মায়ের কাছে যাব।’ পরে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে জোর মিনতি করে বলেছিল, ‘আমাকে হাসু আপার কাছে পাঠিয়ে দাও।’ ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুর আকুতিও নরপশুদের মন গলাতে পারেনি। মাত্র ১০ বছর ৯ মাস ২৭ দিন বয়সে এই প্রতিভাবান শিশুর জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। বঙ্গবন্ধুর ঘাতক, আত্মস্বীকৃত খুনিরা সেদিন জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। তাই নরপশুরা নিষ্পাপ শিশু ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শেখ রাসেলকেও রেহাই দেয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত বছর থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসাবে পালিত হচ্ছে।
রাসেল যখন খুব ছোট তখন বঙ্গবন্ধু ছয় দফা পেশ করার কারণে দীর্ঘমেয়াদে কারাবরণ করেন। বঙ্গবন্ধু ‘কারাগারের রোজনামচা’য় শেখ রাসেলকে নিয়ে লিখেছেন, ‘৮ ফেব্রুয়ারি ২ বছরের ছেলেটা এসে বলে, আব্বা বাড়ি চলো। কী উত্তর ওকে দেব। ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম, ও তো বুঝে না আমি কারাবন্দি। ওকে বললাম, তুমি তোমার মার বাড়ি যাও। আমি আমার বাড়িতে থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো। ও কি বুঝতে চায়! কী করে নিয়ে যাবে এই ছোট্ট ছেলেটাকে, ওর দুর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ প্রাচীর থেকে। দুঃখ আমারও লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা।’
শেখ রাসেলের বড় বোন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট ভাইয়ের সব স্মৃতিকে এক করে বই লিখেছেন ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’। বইটিতে শেখ রাসেলের জন্মগ্রহণ থেকে শুরু করে ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে শহিদ হওয়া পর্যন্ত জীবনের খুঁটিনাটি তুলে ধরেছেন। এতে রয়েছে শেখ রাসেলের দুর্লভ বেশ কিছু পারিবারিক ছবি। তার চারিত্রিক গুণাবলির বর্ণনাও পাওয়া যায় এ বইয়ে। পরম আদরের ছোট ভাই শেখ রাসেলকে নিয়ে তিনি লিখেছেন, আমাদের পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রাসেল। অনেক বছর পর একটা ছোট বাচ্চা আমাদের বাসায় ঘর আলো করে এসেছে, আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। আব্বা বার্ট্রান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন, রাসেলের বই পড়ে মাকে বাংলায় ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। মা রাসেলের ফিলোসফি শুনে শুনে এত ভক্ত হয়ে যান যে, নিজের ছোট সন্তানের নাম রাসেল রাখেন।
শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, মানুষের উপকার করার চেষ্টা ছোটবেলা থেকেই পরিলক্ষিত হয়েছে শেখ রাসেলের মাঝে। তিনি ছিলেন আদর্শ পিতার যোগ্য সন্তান। রাসেল আজ বিশ্বে অধিকারবঞ্চিত শিশুদের প্রতীক ও মানবিকসত্তা হিসাবে বেঁচে আছেন সবার মাঝে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাসেল যদি বেঁচে থাকত, তাহলে হয়তো একজন মহানুভব, দূরদর্শী ও আদর্শ নেতা আমরা পেতাম। যাকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারত।
কর্মসূচি : শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারিভাবেও শেখ রাসেল দিবসের কর্মসূচি পালিত হবে।
আজ জাতীয়ভাবে সারা দেশে একযোগে এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোয় শেখ রাসেল দিবস-২০২২ পালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে আজ সকাল ৬টায় বনানী কবরস্থানে তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসটির কার্যক্রম শুরু হবে। সকাল সাড়ে ৬টায় নিজ নিজ মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ও প্রাঙ্গণে তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে।
দিবসটিতে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৭টায় পরিকল্পনা কমিশনের সামনে থেকে বিআইসিসি প্রাঙ্গণ পর্যন্ত সবার অংশগ্রহণে র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) হল অব ফেম-এ শেখ রাসেল দিবসের উদ্বোধন ও শেখ রাসেল পদক প্রদান করবেন। বেলা আড়াইটায় ‘শেখ রাসেলের নির্মম হত্যাকাণ্ড ন্যায়বিচার, শান্তি ও প্রগতির পথে কালো অধ্যায়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার, একই স্থানে সন্ধ্যা ৬টায় ‘কনসার্ট ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস’ অনুষ্ঠিত হবে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে দেশের সব বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে চিত্রাঙ্কন, দাবা, জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : আজ সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শহিদ শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টে নিহত সব শহিদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদসহ অন্য সংগঠনগুলোর রয়েছে দিনভর বিস্তারিত কর্মসূচি। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ টি