এনবি নিউজ : কথা ছিল, উদ্বোধনের দিন পদ্মা সেতুতে গাড়ি-ট্রেন দুটোই চলবে। তবে গত বছর সড়ক সেতু উদ্বোধনের সময় রেলমন্ত্রী বলেছিলেন, ট্রেন চলবে জুন মাসে। তবে এখন প্রকল্প কর্মকর্তাদের কথায় জানা গেল, এই অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
ট্রেনে চড়ে পদ্মা পাড়ি দিতে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতু দিয়ে যাত্রী নিয়ে ট্রেন যাবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। আগামী বছরের ডিসেম্বরে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত রেল চলাচল উদ্বোধন হবে।
দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনকারী দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি ও ট্রেন একসঙ্গে চলবে। দ্বিতল এই সেতুর উপরের অংশ গাড়ি চলাচলের জন্য, নিচের অংশ রেল চলাচলের জন্য।
রেল চলাচলের জন্য ২০১৬ সালে ‘পদ্মা রেল সংযোগ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণে তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা।
চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তিতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে। তাতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
অন্যদিকে গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বাস, ট্রাকসহ গাড়ি পারাপার পুরোদমে চলছে। সম্প্রতি রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে আগামী জুন মাসে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথটি উদ্বোধনের আশা প্রকাশ করেছিলেন।
প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, জুনের মধ্যে রেল লাইন বসানোর কাজ শেষ করা সম্ভব হলেও সিগনাল সিস্টেম এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে রেল চলাচল সেপ্টেম্বরের আগে শুরু করা সম্ভবপর হবে না।
প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, “সেতুর উপরের অংশের ৪৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি আমরা।”
গত বছরের প্রায় অধিকাংশ সময় দ্বিতল পদ্মা সেতুর নিচতলায় গ্যাস লাইন টানার কারণে ওই সময়ে রেল লাইনের কাজ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে রেল পিছিয়ে গেছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, “গত অগাস্ট মাস থেকে আমরা পদ্মা সেতুর উপরে রেল লাইন বসানোর কাজ শুরু করতে পেরেছি। আশা করছি, সেতুর রেল লাইন বসানোর কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে।
“ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ জুনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।”
সেক্ষেত্রে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় নেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, “এরপরেও সিগনালিং ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু কাজ বাকি রয়ে যাবে। সেপ্টেম্বর মাসের দিকে রেল চলাচল শুরু করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।”
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটারে রেল লাইন স্থাপনের কাজটিকে তিন ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন চলছে।
এরমধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটারের অগ্রগতি সবচেয়ে বেশি (প্রায় ৮৭ শতাংশ) বলে জানান প্রকল্প পরিচালক। এই অংশের রেল লাইন বসিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ট্র্যাক কোচও চালানো হয়েছে।
মাওয়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটারের মোট অগ্রগতি প্রায় ৮০ শতাংশ। এই অংশটিও জুনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটারের রেল লাইন নির্মাণ কাজ। এই অংশের অগ্রগতি ৬২ শতাংশ।
আফজাল জানান, প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ।