• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১২ অপরাহ্ন

বন্যায় বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার

Avatar
সেন্ট্রাল ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩ সংবাদটির পাঠক ৬ জন

এনবি নিউজ : চট্টগ্রাম, কক্সবাজার বা বান্দরবানে বন্যা হতে পারে এমন ধারণাই ছিল না আবাহাওয়া অধিদপ্তর বা বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের। ফলে কোনো প্রস্তুতিই ছিল না এই এলাকার মানুষের। আকস্মিক বন্যায় তাই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিন জেলার কয়েক লাখ মানুষ।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান বা কক্সবাজার মহাসড়কে এখনও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। বুধবারও (৯ আগস্ট) বিচ্ছিন্ন ছিল বান্দরবান ও কক্সবাজার। কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করছে না। দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছাতে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে ভিড়, যদিও বৃষ্টি কমেছে, তবুও পানি নামেনি।

হঠাৎ করে কেন এই বন্যা—জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই বন্যার আগাম কোনো সতর্কতা ছিল না। এটা সব সময় হয় না। গত ২৫ থেকে ৩০ বছরে এই এলাকায় এমন বন্যা হয়নি। কারণ, হিসেবে আমরা যেটা দেখেছি, সাগরে একটা গভীর নিম্নচাপ ছিল, যেটা পরে সমতল ভূমির ওপর দিয়ে গেছে। এটা ছিল ৩১ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর ৩ আগস্ট ছিল পূর্ণিমা। পূর্ণিমার সময় জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বাড়ে। এর সঙ্গে আছে বৃষ্টি। আমরা দেখলাম, গত তিন দিনে বান্দরবানে ৮০০ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে দুই দিন ৪৬০ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছে। একসঙ্গে এত বৃষ্টি হলে পানি নামতে সমস্যা হয়। তখন সেটা সমতলে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর সঙ্গে তো যেসব জলাধার আগে পানি ধরে রাখতো সেগুলো বন্ধ করে নগরায়ন হয়েছে। আবার নদীর তলদেশে পলি জমে পানি এখন আর নিচে যেতে পারে না। ফলে উপরে সেটা ছড়িয়ে পড়ছে। এর বাইরে জলবায়ুর পরিবর্তন তো আছেই।’

অতি ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গত সোমবার (৭ আগস্ট) রাত থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় পানি বাড়তে শুরু করে। সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ডুবে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে কক্সবাজার ও বান্দরবানের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দুদিনেও যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাত থেকে বৃষ্টিপাত তেমন হয়নি। এজন্য পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। এরপরও কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি আছে। বাস, ট্রাক ও বড় যানবাহন চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। রোববার (৬ আগস্ট) থেকে নেই বিদ্যুৎ। চারদিকে থই থই পানি, মানুষ ঘরবন্দি।

এমন পরিস্থিতিতে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার থেকে ত্রাণকাজে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘বান্দরবানের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ১২ হাজারের মতো মানুষ উঠেছেন। তাদের নিয়মিত খাবার দেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সহায়তায় আমরা সব জায়গাতেই খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। বান্দরবানের লামা ও সদর উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লামায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। আর সদরে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ এলাকা। এখন এসব জায়গা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।’

সঠিকভাবে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে কি না, জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ৭০ লাখ টাকা, ২১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৭০০ মেট্রিক টন চাল দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দিয়েছি। সেগুলো বিতরণ চলমান আছে। খাবার পাচ্ছে না এমন কেউ নেই। আমরা রান্না করা খাবারও বিতরণ করছি। আমরা সব সময় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমেই ত্রাণ বিতরণ করি। দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে। আমরা বেশি আক্রান্ত তিনটি জেলাসহ পাঁচ জেলায় ত্রাণ দিয়েছে। কারণ, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে বন্যা হয়েছে, তবে সেটা খুব বেশি না।’

বুধবার (৯ আগস্ট) দুর্গত এলাকা ঘুরে আসা চট্টগ্রামের একজন সাংবাদিক বলেন, ‘চট্টগ্রামের চন্দনাইশের হাশিমপুর বড়পাড়া থেকে কসাইপাড়া হয়ে সাতকানিয়ার কেরাণীহাট পর্যন্ত অংশ বুধবার দুপুরেও পানিতে তলিয়ে ছিল। মহাসড়কে পানির স্রোত আছে। এরপরও পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। অনেকে ভ্যানগাড়িতে করে ঘরের আসবাবপত্র, হাঁস-মুরগি, ছাগল নিয়ে যাচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কে সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া, বুড়ির দোকান, বায়তুল ইজ্জতসহ কয়েক কিলোমিটার এলাকা এখনও পানিতে তলিয়ে আছে।’

এই বন্যার আগাম সতর্কতা না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী উদয় রায়হান বলেন, ‘রাজশাহী, রংপুর ও ঢাকা বিভাগের পূর্বাভাস আমরা দিতে পারি। কিন্তু সমুদ্র সংলগ্ন খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের আগাম সতর্কতার কোনো ব্যবস্থা আমাদের নেই। এই ব্যবস্থার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে এবার চট্টগ্রামে যে বন্যা হয়েছে, সেটার কোনো সতর্কতা আমরা দিতে পারিনি। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা বৃষ্টির সতর্কতা দিয়েছিলাম।’

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়ছে। এরমধ্যে পাহাড় ধসে ও ঘর চাপা পড়ে পাঁচজন মারা গেছেন।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান বলেন, ‘আপাতত আর পাহাড় ধসের আশঙ্কা নেই। পরিস্থিতি উন্নতির দিকে হলেও অনেক বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেশি সহায়তার দাবি করা হয়েছে। আজও ১০ লাখ টাকা, তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১০০ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দিয়ে পাঠিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও টেলিফোনে আমাদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছেন। তিনি সহায়তা বাড়ানোর দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১১ আগস্ট চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার লোহাগড়া, কক্সবাজারের চকরিয়ার পেকুয়া ও বান্দরবানের রুমা উপজেলা পরিদর্শনে যাব।’

বৃষ্টি কমে এলেও টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধসের শঙ্কা বেড়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, শুধু খাগড়াছড়ি পৌর শহরেই ৩০টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার বসবাস করে। আর পুরো জেলায় পাহাড় ধসের ঝুঁকি নিয়ে বসতি গড়েছেন প্রায় ৩৫ হাজার পরিবার। বন্যাকবলিত ও পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করছে ফায়ার সাভির্স ও পৌরসভা। তারপরও অনেকে বাড়িঘর ছাড়ছেন না।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  

নামাজের সময় সূচি

    Dhaka, Bangladesh
    শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
    ওয়াক্তসময়
    সুবহে সাদিকভোর ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ
    সূর্যোদয়ভোর ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ
    যোহরদুপুর ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ
    আছরবিকাল ২:৫০ অপরাহ্ণ
    মাগরিবসন্ধ্যা ৫:১১ অপরাহ্ণ
    এশা রাত ৬:৩০ অপরাহ্ণ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!