এনবি নিউজ : রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য জরিমানা করা নিয়ে পুলিশের একজন নারী সার্জেন্টের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন এক গৃহবধূ ও তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এ ঘটনায় ওই সার্জেন্টের ওপর হামলার অভিযোগে সার্জেন্টের করা মামলায় গতকাল বুধবার ওই মা ও তাঁর মেয়েকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তারা হলেন দিলারা আক্তার (৫০) ও তাঁর মেয়ে তাসফিয়া ইসলাম (২২)। দিলারার স্বামী রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখার উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মফিজুল ইসলাম।
ঘটনাটি নিশ্চিত করে পুলিশের মোহাম্মদপুর অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. আজিজুল হক এনবি নিউজকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট হাসিনা খাতুনের ওপর হামলার অভিযোগে তিনি মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় আদালতে হাজির করা হলে মা ও মেয়েকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
মামলায় দিলারা আক্তার ও তাঁর মেয়ের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, সরকারি লোককে মারপিট করা এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে দিলারার স্বামী মফিজুল ইসলাম এওনবি নিউজকে বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি মামলা হওয়ার মতো বিষয় নয়। পুলিশ মামলা দিয়ে ক্ষমতা দেখাল। তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে ধানমন্ডিতে বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য প্রকৌশলের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্রী। সামনে তাঁর পরীক্ষা। এ অবস্থায় তাঁকে কারাগারে যেতে হলো।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা আজিজুল হক বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকায় একটি প্রাইভেট কার অবৈধভাবে পার্কিং করেন গাড়িচালক। সার্জেন্ট হাসিনা এসে এ জন্য পাঁচ হাজার টাকার মামলা দেন। গাড়িচালক দিলারা আক্তারকে ফোনে বিষয়টি জানালে তিনি বাসা থেকে এসে সার্জেন্ট হাসিনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে তাঁর গায়ে হাত তোলেন। পরে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলে, তাঁদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন দিলারা। তখন থানা থেকে পুলিশ গিয়ে দিলারা আক্তার ও তাঁর মেয়েকে আটক করে। পরে সার্জেন্ট হাসিনা মা ও মেয়ের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
অপর দিকে ঘটনার বিষয়ে মফিজুল ইসলাম বলেন, তাঁর মেয়ে তাসফিয়া ইসলাম ওই এলাকার একটি ভবনের ব্যায়ামাগারে যান। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সন্ধ্যায়ও গিয়েছিলেন। চালক গাড়ির গতি কমিয়ে মেয়েকে নামিয়ে চলে আসছিলেন। এর মধ্যে ওই সার্জেন্ট গাড়ি থামিয়ে পাঁচ হাজার টাকার মামলা দেন। তখন চালক মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের বাসায় গিয়ে জানালে তাঁর স্ত্রী (দিলারা) বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সেখানে গিয়েছিলেন। পরে তাঁর মেয়েও ওপর থেকে নেমে এসে জানতে চান, কেন মামলা দেওয়া হলো। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়।
তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে সার্জেন্ট হাসিনা আমার মেয়েকে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের মধ্যে নিয়ে মারধর করেন। এটা দেখে আমার স্ত্রী দিলারা এগিয়ে গেলে তাঁদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এতে হয় তো তাঁর (সার্জেন্টের) গায়ে আঁচড় লাগতে পারে।’
খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় ছুটে যান জানিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা মফিজুল বলেন, ‘রাত দুইটা পর্যন্ত সেখানে বসে বিষয়টি মীমাংসার অনুরোধ করি। তাঁদের কাছে মাফ চেয়েছি। বলেছি মুচলেকা নিয়ে আমার মেয়েকে ছেড়ে দেওয়া হোক। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা আমার কোনো কথা শোনেননি।’