এনবি নিউজ : বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ম্যাচ বলবেন? তবে সেটি তো শুধুই দর্শক আগ্রহের বিচারে। নইলে বড় ম্যাচ আর ছোট ম্যাচ বলে কিছু আছে নাকি! ভারতের বিপক্ষে জিতলে যেমন ২ পয়েন্ট, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিতলেও তো তা-ই। আজ পুনেতে ভারত ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলের সামনে প্রশ্নটা তাই খুবই সহজ। আবার খুবই জটিল।
সহজ কেন, তা আগে বলি। এই একটা ম্যাচে খেলতে গিয়ে যদি সাকিব আল হাসানের পরের পাঁচটি ম্যাচে খেলা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়, সেই ঝুঁকি নেওয়ার কোনো মানে হয় না। সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তাই খুবই সহজ।
তাহলে জটিল কেন? জটিল কারণ, সাকিবের চোটের অবস্থাটা এমন যে তাঁকে খেলানোর লোভ সামলানো সহজ নয়। এমন তো নয় যে ব্যথায় জর্জর সাকিবের নড়াচড়া করতেই সমস্যা। গত পরশু পুনেতে বাংলাদেশের প্রথম অনুশীলন সেশনে ঘণ্টা দেড়েক ব্যাটিং করেছেন। কিছুক্ষণ দৌড়াদৌড়িও। অনুশীলনে তৎপর সাকিব আর দলীয় সূত্রে পাওয়া খবর মিলিয়ে সাকিব-দুশ্চিন্তা থেকে বাংলাদেশ দলের মুক্তি ঘটেছে বলেই মনে হয়েছিল।
কিন্তু কাল আবার বাকি সবকিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠল প্রশ্নটা। সাকিব আল হাসান খেলবেন তো? সন্ধ্যায় দলের সঙ্গে অনুশীলনে আসেননি। টিম বাস স্টেডিয়ামের দিকে রওনা হয়েছে আর সাকিব গেছেন বাঁ পায়ের ঊরুতে আবারও স্ক্যান করাতে। সেই স্ক্যানের রিপোর্ট আর আজ সকালে সাকিব কেমন বোধ করছেন—এই দুটির ওপরই আসলে নির্ভর করছে ওই প্রশ্নের উত্তর। সাকিব আজ খেলছেন তো?
সিদ্ধান্তটা আরও কঠিন; কারণ, বাংলাদেশের এই দল থেকে সাকিবকে সরিয়ে নিলে এক ঝটকায় সেটির শক্তি অনেকটা কমে যায়। তা শুধু অলরাউন্ডার সাকিব না থাকলেই। আর এখানে তো তিনি অধিনায়কও। আইপিএলে খেলার ইতিহাস আর এই ম্যাচ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের বাড়তি আগ্রহের কারণে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ বরাবরই সাকিবের অগ্রাধিকার তালিকায় থেকেছে। এমন যদি হয় যে স্ক্যানের রিপোর্ট দেখে দলের ফিজিও-চিকিৎসক জোরালো কোনো আপত্তি তুললেন না। সিদ্ধান্তটা ছেড়ে দেওয়া হলো সাকিবের ওপরই, তাহলে তিনি কী করবেন, তা অনুমান করা তাই মোটেই কঠিন কিছু নয়।
সংবাদমাধ্যমকে প্রায় আধঘণ্টা অপেক্ষায় রেখে কাল সংবাদ সম্মেলনে এসে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সাকিব সম্পর্কে আপডেট বলতে ওটুকুই দিলেন। ম্যাচের দিন সকালে দেখে সিদ্ধান্ত। আফগানিস্তানকে হারিয়ে ভালো শুরুর পর টানা দুই ম্যাচে পরাজয়। বাংলাদেশ দলে এমনিতেই একটু অস্বস্তি ছিল। অধিনায়ককে পাওয়া নিয়ে সংশয় তা আরও একটু বাড়িয়ে দিতে বাধ্য।
ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে নিত্যনতুন পরীক্ষা–নিরীক্ষা নিয়ে কোনো সমস্যা দেখছেন না হাথুরুসিংহে। বিশ্বকাপজুড়েই তা চলবে বলেও একরকম ঘোষণাই দিয়ে দিলেন। ভারতের বিপক্ষে সম্ভাব্য একাদশের একটা আভাসও দিয়ে রাখলেন। সাকিবের খেলা না–খেলা নিশ্চিতভাবেই বড় বিবেচনা হবে তাতে।
ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে নিত্যনতুন পরীক্ষা–নিরীক্ষা নিয়ে কোনো সমস্যা দেখছেন না হাথুরুসিংহে
সাকিব না থাকা মানে যে ব্যাটসম্যান-বোলার দুটিই একজন করে কমে যাওয়া। একজন অতিরিক্ত বোলার খেলানোর কথা একরকম জানিয়েই দিয়েছেন হাথুরুসিংহে। সাকিব না খেললে তখন তো তাহলে গত ম্যাচের একাদশে দুজন বোলার নিতে হয়। তখন আবার ব্যাটসম্যান কমে যায়। শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা নিয়ে তাই বড় কৌতূহল থাকছেই।
অতিরিক্ত বোলার খেলানোর কথা আসছে পুনের উইকেটের কারণে। বিশ্বকাপে এসে এমন ভালো ব্যাটিং উইকেট আর দেখেননি বলে জানিয়ে গেলেন হাথুরুসিংহে। ভালো ব্যাটিং উইকেটের সঙ্গে মাঠের আকার যোগ করে নিন। উইকেটের সোজাসুজি মাঠের দৈর্ঘ্য টেনেটুনে ৫০ মিটার বলেই তো শুনলাম। এবার এই দুটির সঙ্গে যোগ করে নিন কিছু নাম। রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল, বিরাট কোহল…ভারতীয় টপ অর্ডার নিয়ে বলতে গিয়ে ‘ভীতিকর’ শব্দটাই ব্যবহার করে ফেললেন হাথুরু।
ওপেনার তানজিদ হাসান রান পাচ্ছেন না। চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ক্লাসে বাড়তি মনোযোগই পেয়েছেন বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান
ম্যাচের আগে কোনো দলের কোচ সাধারণত এমন বলেন না। হাথুরুসিংহে বলেছেন; কারণ, এমন কোনো গোপন তথ্য জানাননি তিনি বা মানসিকভাবে বিরাট কিছু জয়-পরাজয়ের ব্যাপারও নেই এখানে। যে কথাটা সবারই জানা, তা বলতে সমস্যা কী? এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত অপরাজিত ভারত। তিনটি ম্যাচই জিতেছে দারুণ আধিপত্য বিছিয়ে। বোলিং-ব্যাটিং দুটিতেই প্রশ্নাতীত শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে।
দলে ম্যাচ উইনারের ছড়াছড়ি। এর মধ্যেও ব্যাটসম্যানদের কথা বললে সবার আগে আসবে দুটি নাম। রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। লিখেই মনে হলো, এটাও তো সবার জানা কথাটাই আবার জানানোর মতো। এই দুজন কোন দলের বোলারদের জন্য আতঙ্ক নন! ব্যাটিং-তাণ্ডব চালানোয় কোনো বৈষম্যও কখনো করেননি। তারপরও বাংলাদেশের বোলিং দুজনের একটু বেশিই পছন্দ। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৫ ওয়ানডেতে বিরাট কোহলির ব্যাটিং গড় ৬৭.২৫। সেটিও ১০১.২৫ স্ট্রাইক রেটে।
আইসিসি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে পেলেই সেঞ্চুরি করে বসেন রোহিত শর্মা
রোহিত শর্মার আবার আশ্চর্য একটা নেশা আছে। আইসিসি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে পেলেই সেঞ্চুরি করে বসেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে করেছেন, ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে, ২০১৯ বিশ্বকাপেও। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর ৫৬.৭৬ ব্যাটিং গড়কে তো কমই বলতে হয়। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং—সব মিলিয়ে এই ভারতকে এমনই অপ্রতিরোধ্য মনে হচ্ছে যে হাথুরুসিংহে বলতে বাধ্য হচ্ছেন, ‘ভারত যদি খুব ভালো না খেলে আর আমরা ভালো খেলি, তাহলেই সম্ভব।’
অনুপ্রেরণার জন্য অবশ্য আফগানিস্তান ও নেদারল্যান্ডস আছে। বিশেষ করে নেদারল্যান্ডস। যাদের কাছে হেরে বসার আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও তো ভারতের মতোই অজেয় মনে হচ্ছিল। হাথুরুসিংহে তাই আশায় বসতি গড়েন, ‘সবকিছুই নির্ভর করছে কালকের (আজ) ওপর।’