এনবি নিউজ : যানজটের ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে স্বাচ্ছন্দে যাতায়াতের উচ্ছ্বাসের মধ্যে একটি ঘটনা চিন্তার ভাঁজ তৈরি করেছে কপালে; ওপরে ফাঁকা রাস্তায় যে ‘নির্বিঘ্নে অপরাধ’ করা সম্ভব, সেটিও এবার জানা গেল।
গোয়েন্দা পুলিশ গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলনে ১২ দিন আগে এ উড়াল সড়কে চাঞ্চল্যকর এক অপরাধের ঘটনার কথা জানায়। গত ১০ অক্টোবর দ্রুত গতিতে যান চলাচলের মধ্যে এ সড়কের কোলাহল না থাকার সুযোগ নিয়ে গাড়ি থেকে তিনজনকে তুলে নিয়ে যায় ডাকাতদের একটি দল। তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় ৪৮ লাখ টাকাও।
ডাকাতের দল ধরা পড়েছে; উদ্ধার হয়েছে লুট হওয়া টাকার অর্ধেক। কিন্তু রেখে গেছে বড় প্রশ্ন, নির্জন এ সড়কের নিরাপত্তার কী হবে?
পুলিশের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এখন পর্যন্ত এ এক্সপ্রেসওয়ের নিরাপত্তার জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। পুলিশের কোনো ইউনিটও দায়িত্ব পায়নি। ডাকাতির এ ঘটনার আগে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাও ছিল না। এখন নানা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, “এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে গেলে পুলিশের গাড়িকেও নির্ধারিত টোল দিতে হয়। এরপর আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে এ পথ কীভাবে নিরাপদ রাখা যায়।”
সাধারণত দেশের প্রতিটি অঞ্চল যে থানার অধীনে পড়ে, সেই থানার পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকে। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়ে একটি প্রকল্পের অধীনে থানায় সেটি দেখভালের দায়িত্বে পুলিশ নেই। বাহিনীর কোনো টহল থাকে না দিনে বা রাতে।
নিচের সড়কে সার্বক্ষণিক যানজট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিত্য চলাচলের কারণে নিরাপত্তার বিষয়টি সেভাবে ভাবতে হয় না। কিন্তু ওপরের সড়কের বিষয়টি তেমন নয়।
এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার ক্ষেত্রে টোল প্লাজার কারণে এক ধরনের নজরদারি থাকলেও নামার পথের র্যাম্পগুলোতে কোনো ধরনের বাধা নেই। ফলে অপরাধ করে বিভিন্ন পথে দিয়ে নেমে গেলেও কেউ ধরতে পারবে না।
পুলিশ বলছে, তাদের গাড়ি এক্সপ্রেসওয়েতে উঠলেও টোল দিতে হয়। ফলে সেখানে টহল দিতে গেলে আলাদা বরাদ্দ লাগবে অথবা সে ক্ষেত্রে টোলের বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
তবে এক্সপ্রেসওয়েটি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকলেও তা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ এখনও নেই। কারণ, এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষের নিজস্ব যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, তাতে অস্ত্রধারী কর্মী নেই, যারা অপরাধীদেরকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞতার কারণে গাড়ি আটকালেও কোনো সন্দেহ হয়নি তাদের। যে কারণে ডাকাতের দল এই সড়ক থেকে নেমে ৩০০ ফুটের দিকে চলে গেলেও কেউ কিছু করেনি।
উল্লেখ, গত ১০ অক্টোবর বিকালে উত্তরার আল আরাফাহ ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন ‘মাদার টেক্সটাইল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড’ এর হিসাবরক্ষক অনিমেষ চন্দ্র সাহা এবং তার এক সহকর্মী মো. শাহজাহান মিয়া। ব্যাংক থেকে তোলা টাকার সাড়ে ৩৫ লাখ একজনকে দিয়ে বাকি ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে অনিমেষ যাচ্ছিলেন বনানীতে।
উত্তরা থেকে আসার পথে কাওলা টোলপ্লাজা দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার কিছুক্ষণ পর মেরুন রঙের একটি গাড়ি তাদের প্রাইভেকটারের গতিরোধ করে। সেই গাড়িতে থাকা লোকদের গায়ে যে জ্যাকেট ছিল সেটিতে ‘র্যাব’ লেখা দেখার পর অনিমেষ কোনো সন্দেহ করেননি।
সংকেত দেওয়ার পর গাড়ি থেকে নেমে আসার পর অবৈধ অস্ত্র থাকার অভিযোগে তাদেরকে তোলা হয় মেরুন রঙের সেই গাড়িতে। পাশাপাশি অনিমেষদের বহনকারী গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ডাকাতদল।
অনিমেষদের বর্ণনা অনুযায়ী, তাদেরকে আটক করার পর গাড়িটি ২৫ মিনিট বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে পরে ৩০০ ফুট রাস্তার বোয়ালিয়া ব্রিজের উপরে তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পথে অনিমেষের কাছে থাকা ৪৮ লাখ টাকা, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
ছাড়া পেয়ে অনিমেষ রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় যান, জানান তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা। তদন্তে নেমে পুলিশ শনিবার গ্রেপ্তার করে সাতজনকে।
এই ঘটনায় মাদার টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের মালিক সোহেল আহমেদ সুলতান খিলগাঁও থানায় মামলা করেন।
সোহেল আহমেদ সুলতান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডাকাতির ঘটনার পর আমার প্রতিষ্ঠানের তিনজন মানসিক ট্রমায় ছিল। অনেকটা খারাপ লাগছিল দ্রুত যেতে গিয়ে এ রকম একটি ঘটনার শিকার হলাম।
“এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আমাদের গর্বের একটি জিনিস। তাই এখানে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। সেদিনে খেয়াল করতে হবে। আমরা নিরাপদে দ্রুত যাওয়া আসা করব এটা কামনা করব সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে।”
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএম শখাওয়াত আকতারের সঙ্গে যোগাযোগ করা গেলেও তিনি তাড়াহুড়ো করে বক্তব্য দিয়ে ফোন রেখে দেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের নিজস্ব কর্মীরা সার্বক্ষণিক টহল দেন। তবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর পরিচয়ে কাউকে ধরলে বা তুলে নিলে তো সমস্যা হওয়ারই কথা। যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে তো র্যাবের পরিচয় দিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে।”
থানার পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে টহল দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে কোন জবাব দেননি তিনি।
এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানার ওসি কাজী সাহান হক বলেন, “এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে নিরাপত্তা পুলিশ দিতে চায়। এজন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা পুলিশের সঙ্গে বসবে বলেছে। কিন্তু এরই মাঝে একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।”
তিনি বলেন, “অন্তত থানার নির্দিষ্ট টহলগাড়ি চলাচল করার অনুমতি দিলে অনেকটা নিরাপদ রাখা যায়।”
নিরাপত্তা