এনবি নিউজ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টাকাণ্ডে রাজধানীর পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতারকৃত অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল হাসান সারওয়ার্দীর পুলিশ রিমান্ডে অেপরাধ স্বীকার করে বলেছনে, তিনি পরিস্থতির শিকার।
এর আগে গতকাল বুধবার আদালতে রিমান্ড শুনানি চলাকালে বিচারককে উদ্দেশ্য করে হাসান সারওয়ার্দী বলেন, বিএনপির অফিসে শেষের একটা চেয়ার দিয়ে আমাকে বসানো হয়। আমি বসেছি, কিন্তু কোনো বক্তব্য দেয়নি। মিয়ান আরেফি সমবেদনা জানিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, হঠাৎ ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে মিয়ান আরেফি বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়ে স্যাংশনসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। আমি নিজে তার প্রতিবাদ করি। আরেফি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বলে সে আমার সঙ্গে জগিং করে। অথচ তিনি ল্যাংড়া, লাঠি ছাড়া হাঁটতে পারে না।
বুধবার (১ নভেম্বর) তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে তার আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
শুনানি চলাকালে বিচারককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি কিছু বলতে চাই। তখন বিচারক তাকে বলার জন্য অনুমতি দেন। এরপর তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি আরেফিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়ে আসিনি। তিনি টাকা খরচ বাংলাদেশে এসেছেন। রাজনীতি করি না, কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না।
তিনি আরও বলেন, আমি যুদ্ধাহত সৈনিক, যে কারণে রাষ্ট্র আমাকে বীরবিক্রম উপাধি দিয়েছে। আমার চাকরি জীবনে দেশের জনগণ ও সার্বভৌম রক্ষার জন্য ত্যাগ শিকার করেছি। এ দেশের জনগণের দেওয়া অর্থে আমাদের সংসার চলেছে। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আমার রক্ত মাংসের সঙ্গে মিশে আছে। এরপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাভার থেকে হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
গত ২৯ অক্টোবর মহিউদ্দিন শিকদার নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে রাজধানীর পল্টন থানায় এ মামলা করেন। মামলায় বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফীসহ হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় গ্রেফতারের পর গত সোমবার (৩০ অক্টোবর) মিয়া আরেফীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সারাদেশ থেকে দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করে। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুদ্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা কাকরাইল মোড় থেকে আরামবাগ মোড় পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। তারা প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনসহ সরকারি স্থাপনা ও সরকারি গাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। এতে পুলিশের ৪১ সদস্য আহত ও এক সদস্য নিহত হন। একপর্যায়ে বিকেল ৩টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মহাসমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, বিএনপির ওই কর্মকাণ্ডের পর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে আসামি মিয়ান আরাফি, হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে ২০ জন নেতাকর্মী কিছু সংবাদমাধ্যমের সামেন উপস্থিত হন। এসময় ১ নম্বর আসামি মিয়া আরেফী নিজেকে বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেন। বাংলাদেশ পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তার সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন বলে বক্তব্য দেন তিনি।
সেখানে ১ নম্বর আসামি মিয়া আরেফী বক্তব্যে দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দিনে ১০ থেকে ১৫ বার যোগাযোগ হয় এবং মার্কিন সরকারের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। এ আসামি আরও দাবি করেন, তিনি মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
এজাহারে বাদি আরও অভিযোগ করেন, মামলার ২ নম্বর আসামি হাসান সারওয়ার্দী এবং ৩ নম্বর আসামি ইশরাক হোসেন মিয়া আরেফীকে মিথ্যা বক্তব্য দিতে সহযোগিতা করেন এবং তার বক্তব্য সমর্থন করে বিএনপি নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিতে উসকানি দেন। ১ নম্বর আসামি অন্য আসামিদের সহায়তায় সরকারের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি করে সারাদেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন।
এজাহারে বলা হয়, ওই সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে ১ নম্বর আসামির বক্তব্য শুনে এবং ভিডিও দেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে।