এনবি নিউজ : নির্বাচন কমিশন ঘোষিত আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি, জামায়াত ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন ও বাম রাজনৈতিক জোট একতরফা নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশে আধাবেলা হরতাল ডেকেছে বাম রাজনৈতিক জোট। বৃহস্পতিবার জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ করবে ইসলামী আন্দোলন। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৩৮টি দলের মধ্যে একমাত্র লেবার পার্টি আগামী রবিবার ও সোমবার সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে।
এ ব্যাপারে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, হরতালের ঘোষণা দেয়ার জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান তাকে বলেছেন। তাই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। তবে বিএনপির পক্ষ তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এ ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরাম থেকে কর্মসূচির বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এদিকে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, চলমান ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হবে শুক্রবার সকাল ৬টায়। বৃহস্পতিবার বিকালে তফসিলের প্রতিবাদে আগামী রবিবার ও সোমবার সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল দিতে পারে বিএনপি।
ওদিকে তফসিলের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল। বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াত ও এবি পার্টিও।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ‘একতরফাভাবে’ তামাশার তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, বিএনপি এই তফসিল ‘ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান’ করেছে। গতকাল রাতে ভার্চুয়ালি প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির সঙ্গে মশকরা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রিত্বে থাকবেন, তার নেতৃত্বে সরকার থাকবে আর অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে, এটা বিশ্বাস করা খুব কঠিন ব্যাপার। আমি মনে করি, এটি সম্পূর্ণরূপে ডাহা মিথ্যা, ভণ্ডামি এবং মেকি।’
রিজভী বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশের প্রত্যাশা, জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যুপরি আহ্বান উপেক্ষা করে নিশিরাতের সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তামাশার তফসিল ঘোষণা করেছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে অতীতের মতোই আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য মেরুদন্ডহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে, তা আমরা চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’
তিনি বলেন, ‘দেশে একটি ভীতিকর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হাসিনা মার্কা একতরফা নির্বাচনের এই তথাকথিত তফসিল-রঙ্গ জনগণ মানে না। এই নীলনকশার নির্বাচনের তফসিলে বাংলাদেশের মাটিতে কোন নির্বাচন হবে না। বিএনপির পক্ষ থেকে আমি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আবারো হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, এই অবিমৃষ্যকারিতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে যে ভয়াবহ অচলাবস্থা ও চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হবে তার পুরো দায়ভার তাদেরকেই বহন করতে হবে। এই সঙ্কটের কারণে আওয়ামী মাফিয়া চক্রকে চিরকাল দায়ী থাকতে হবে। জনগণের চলমান অগ্নিগর্ভ আন্দোলন আরো তীব্র, আরো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে এবং অতি দ্রূতই আওয়ামী নাৎসী সরকারের পতন ঘটবে ইনশাআল্লাহ।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার পর এই সম্পূর্ণ অবাধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার করবে জনগণ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ভাষণে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবেন। একথাতো ডাহা মিথ্যা, ভণ্ডামিপূর্ণ এবং মেকি। শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাস করা চোরাবালিতে পড়ার শামিল।’
রিজভী বলেন, ‘বর্তমান কমিশন নিশিরাতের ভোটের সরকারের মনোনীত সিলেকশন কমিশন। তারা আওয়ামী লীগের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, তারা জনগণের কেউ নন। এই কমিশনকে কেউ মানে না। এরা মূলত আওয়ামী কমিশন। আজ শেরে বাংলা নগরে রায়টকার, জলকামান, সজোয়া যান নিয়ে শত শত পুলিশ-র্যাব-বিজিবি বেষ্টিত নির্বাচন ভবনে বসে আওয়ামী চেতনার নিশান বরদার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সিলেকশন ভোটের তফসিল ঘোষণা করে গোটা দেশকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করলো এবং গোটা জাতির সাথে ইয়ারি করলো। অতীতে রাকিব-হুদা কমিশনের মতোই কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দলদাসত্বের চরম পরাকাষ্ট প্রদর্শন করে গণশত্রুতে পরিণত হলো।তারা শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি অগ্রহণযোগ্য, একপেশে, প্রশ্নবিদ্ধ, বিরোধপূর্ণ নির্বাচনের চরম ধৃষ্টতা দেখানোর যে ঝুঁকি নিলো জনগণ এর পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।’