সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠছে গ্রাম আদালত। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এ আদালতে প্রতিষ্ঠা হচ্ছে ন্যায় বিচার। প্রশাসন বলছে, গ্রাম আদালত কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় থানা ও অন্যান্য আদালতে কমছে মামলা জট।
নোয়াখালী সদর উপজেলায় ১৩টি গ্রাম আদালতে ইউপি সদস্যদের নিয়ে জুরিবোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত গ্রাম আদালতে গত তিন মাসে ১ হাজার ২৭৪টি দায়েরকৃত মামলার মধ্যে ৩৪৮টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে বসা গ্রাম আদালতে জুরিবোর্ডের পরামর্শে ও রাষ্ট্রীয় নিয়ম অনুযায়ী বাদি-বিবাদীর উপস্থিতিতে নিজের গ্রামেই হয় বিচার। এই আদালতে লাগে না বাড়তি কোনো টাকা-পয়সা। পড়তে হয় না যাতায়াত সমস্যায়। এতে ন্যায়বিচার পেয়ে খুশি সাধারণ মানুষ।
তাসলিমা বেগম নামের এক নারী সদর উপজেলার কালাদরাপ ইউনিয়ন গ্রাম আদালতে পারিবারিক বিরোধ নিয়ে বিচার প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি প্রথমে আদালতে মামলা করি। সেখানে কয়েক তারিখে হাজিরা দেওয়া, যাতায়াত ভাড়াসহ অনেক টাকা খরচ করেছি। পরে মামলা খরচ চালাতে না পেরে আমাদের এই গ্রাম আদালতে মামলা করলে প্রথম তারিখেই চেয়ারম্যান সাহেব সালিশদার নিয়োগ করে আমার সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন। এতে কোন হয়রানি বা টাকা পয়সা লাগেনি।
একইভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, জায়গা-জমি সংক্রান্ত মামলা দায়ের করা রফিক মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের ভাই-ভাই বিরোধ। থানায় মামলা করে কোন সমাধান মেলেনি। পরে ইউনিয়ন পরিষদের আদালতে মামলা করলে এখানে উভয়-পক্ষের বক্তব্য শুনে আপোষমতে বিরোধ মিমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালী ইউনিয়ন ও পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতের একাধিক বিচার প্রার্থী বলেন, আমরা দরিদ্র মানুষ। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেয়ে আমাদের ভোগান্তি কমেছে। এতে পুলিশ, আদালতের চক্কর ও অর্থ অপচয় থেকে মুক্তি পেয়েছেন তারা। তাই গ্রাম আদালতের ওপর আস্থার প্রশংসা করেন বিচার প্রার্থীরা।
নোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রাম আদালতে গড়ে ৫০ থেকে ৫৫টি মামলা হয়। আমরা প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার জুরিবোর্ডের মাধ্যমে গ্রাম আদালত পরিচালনা করে বেশিরভাগ মামলাই নিস্পত্তি করে দেয়। এতে গ্রাম আদালতের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত উল্যাহ সেলিম বলেন, ইউনিয়নের যেকোন ঘটনা প্রথমে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করি। সেখাসে সমাধান না হলে আমাদের গ্রাম আদালতে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে জুরিবোর্ড গঠন করে তা সমাধান করা হয়। এতে আমার এলাকা থেকে থানা-কোর্টে গ্রাম আদালতে বিচারযোগ্য নয় এমন মামলা ছাড়া তেমন কোন মামলা যায়না।
নোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইয়াছিন আরাফাত ও পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফয়সাল বারী চৌধুরী বলেন, প্রথম প্রথম গ্রাম আদালতের বিচার নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করত। পরে গ্রাম আদালত কার্যক্রম শক্তিশালী হওয়ায় ন্যায়বিচার পেয়ে মানুষের সন্দেহ কাটে। বর্তমানে গ্রামীণ নারী, শিশু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিচার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম সক্রিয় করা হয়েছে। এই আদালতে অপরাধের কারণ অনুসন্ধান করে তা প্রতিকার করা হচ্ছে।
গ্রাম আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখিনূর জাহান নীলা বলেন, গ্রাম আদালত কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় থানা ও অন্যান্য আদালতে কমছে মামলা জট। এতে গ্রামের মানুষ তাদের নিজ গ্রামেই ন্যায়বিচার পাচ্ছেন। যার কারণে সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে গ্রাম আদালত।