• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন

রাজাকারদের পতন ঘটিয়ে নোয়াখালীর মাটিতে উড়েছিল বিজয় নিশান

Avatar
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ সংবাদটির পাঠক ৩ জন

১৯৭১, ৭ ডিসেম্বর! সকাল থেকে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটি নোয়াখালী জেলা শহরের মাইজদী প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) থেকে থেমে থেমে গুলিবর্ষণ করলে মুক্তিসেনারা সঙ্গবদ্ধ পাল্টা আক্রমন ও গুলিবর্ষণ করে

রাজাকারদের ওই প্রধান ঘাঁটি দখলের মধ্য দিয়ে নোয়াখালীর মাটিকে হানাদার মুক্ত করে লাল সবুজের বিজয় নিশান উড়িয়েছিল।
আজ বৃহস্পতিবার (০৭ ডিসেম্বর) নোয়াখালী হানাদার মুক্ত দিবস। নোয়াখালী মুক্ত দিবস উদযাপন পরিষদের সেক্রেটারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া মো. শাহজাহান বলেন, দিবসটি উপলক্ষে ৭ ডিসেম্বর মাইজদী পিটিআই সংলগ্ন মুক্ত স্কয়ারে দুপুর ২টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পাঠ, পুষ্পস্থবক অর্পণ, বিকাল ৩টায় শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণে বিজয় শোভাযাত্রা, বিকাল ৪টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল নোয়াখালীর সাবেক ইউনিট কমান্ডার মোজ্জামেল হক মিলন বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর প্রায় এক মাস ধরে নোয়াখালীকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন মুক্তিকামী মানুষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। পদে পদে বাধা অতিক্রম করে পাকিস্তানি সেনারা ২৩ এপ্রিল নোয়াখালী জেলা শহরে ঢুকে পড়ে। পাকিস্তানি সেনারা কয়েক দফায় জেলা সদরের সোনাপুর, শ্রীপুর, গুপ্তাংক, রামহরিতালুক, বেগমগঞ্জের কুরীপাড়া, গোপালপুর ও আমিশাপাড়ায় নির্বিচারে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।

এসময় গুলি ও পুড়িয়ে প্রায় দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। গান পাউডার দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের অভ্যন্তরে ও ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অস্ত্র হাতে মাঠে নামে পাক-হানাদার ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে।

কোম্পানীগঞ্জের বামনী, তালমাহমুদের হাট, ১২ নং স্লুইস গেইট, সদরের উদয় সাধুর হাট (ওদারহাট), করমবক্স বাজার, বেগমগঞ্জের ফেনাকাটা পোল, রাজগঞ্জ ও বগাদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা।

নোয়াখালীকে হানাদার মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি যখন প্রায় চুড়ান্ত, ঠিক তখনই ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে মাইজদী পিটিআই ও বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাইস্কুল ক্যাম্প ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যেতে থাকে পাকিস্তানিরা।
এসময় বেগমগঞ্জ-লাকসাম সড়কের বগাদিয়া ব্রিজ অতিক্রম করতেই সুবেদার লুৎফুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বাধীন মুক্তি বাহিনীর হামলায় অসংখ্য পাক সেনা ও মিলিশিয়া মারা যায়।

নোয়াখালী মুক্ত দিবসের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন সি-জোন কমান্ডার মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, ৭ ডিসেম্বর ভোররাত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালীকে শত্রু মুক্ত করার চুড়ান্ত অপারেশন শুরু করে। ওই দিন সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে সব মুক্তিযোদ্ধা একযোগে চতুর্দিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা সংলগ্ন টেকনিক্যাল হাইস্কুলে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্প মুক্ত করে এবং একই দিন সকাল ৯টার মধ্যে জেলা সদরের মাইজদি বাজার ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, নাহার মঞ্জিল, রৌশনবাণী সিনেমা হল, দত্তেরহাট ও সোনাপুর কোল্ড স্টোরেজের রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে।

সকাল থেকে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটি মাইজদী পিটিআই থেকে থেমে থেমে গুলিবর্ষণ করলে মুক্তিযোদ্ধারা সঙ্গবদ্ধ হয়ে পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। সন্ধ্যা ৫টায় চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে মাইক দিয়ে আত্মসমর্পণের জন্য বলা হয়। রাজাকাররা আত্মসমর্পণ না করলে ফেনী থেকে মর্টারশেল এনে নিক্ষেপ করা হয়।

প্রথম দুটি মর্টারশেল লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও তৃতীয়টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে। মর্টারশেলের শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো শহর। বিপরীত দিক থেকে আসা গুলি বন্ধ হলে, মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে দেখতে পান সেখানে ১০/১২জন রাজাকারের লাশ পড়ে রয়েছে এবং কয়েকজন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। এভাবে শত্রুমুক্ত হয় নোয়াখালী। বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠে মুক্তিকামী জনতা। শহরের কোর্ট বিল্ডিংয়ে ওড়ানো হয় জাতীয় পতাকা।

নোয়াখালী মুক্ত দিবসে জেলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নোয়াখালীর ইতিহাস ও স্মৃতি নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই অজানা, তাই যুদ্ধকালীন সময়ে পাক-হানাদার বাহিনীদ্বারা আক্রান্ত স্থানগুলো সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর স্থাপনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দাবি তাদের ।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে সেদিস (১৯৭১ সালে) আমাদের বাপ-চাচারাসহ নোয়াখালী সর্বস্তরের মুক্তিকামী মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছে। তাদের অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে নোয়াখালী তথা বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে আজও ষড়যন্ত্র হচ্ছে, দেশকে ধ্বংস করার পায়তায় লিপ্ত হয়েছে একটি গোষ্ঠি। কিন্তু যতদিন বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে থাকবে দেশ, ততদিন বাংলাদেশ এবং দেশের মানুষ নিরাপদে থাকবে।

তিনি বলেন, সকল অপশক্তির ষড়যন্ত্র পাশ কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে অচিরেই একটি উন্নত-সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে বিশ^ দরবারে স্থান করে নিবে বাংলাদেশ।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  

নামাজের সময় সূচি

    Dhaka, Bangladesh
    রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
    ওয়াক্তসময়
    সুবহে সাদিকভোর ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ
    সূর্যোদয়ভোর ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ
    যোহরদুপুর ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
    আছরবিকাল ৩:১৭ অপরাহ্ণ
    মাগরিবসন্ধ্যা ৬:৩৬ অপরাহ্ণ
    এশা রাত ৮:০০ অপরাহ্ণ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!