• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৯:২১ অপরাহ্ন

‘পৌঁছেনি সরকারি-বেসরকারি শীতবস্ত্র’ শীতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চরগাসিয়ার মানুষ

Avatar
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ সংবাদটির পাঠক ২ জন

নেই কোনো সড়ক, কালভাট, ব্রিজ, স্কুল, কলেজ, সাইক্লোন সেন্টার, বেড়িবাঁধ, পুলিশ ফাঁড়ি, বিদ্যুৎ, হাসপাতাল বা ক্লিনিক। যতদূর চোখ যায় কাঁচা ঘর-বাড়ি ছাড়া আর কোনো স্থাপনা চোখে পড়ে না। আধুনিক জীবন ব্যবস্তায় এসেও কোন ধরনের যানবাহন ছাড়া নিজেদের পায়ে হেঁটে মাইল থেকে মাইল পথ পাড়ি দিতে হয় বাসিন্দাদের, মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাও নাজুক। এমন একটি দ্বীপ নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চরগাসিয়া।

প্রতি বছরই শীতসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয় এই চরের বাসিন্দারা। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি শীতে। বছরের অধিকাংশ সময় এই এলাকায় মানুষের হাতে তেমন কাজকর্ম থাকে না। শীতের সময় কম মজুরিতে শ্রম দিয়ে যেখানে সংসার চালানোই কষ্টকর, সেখানে শীতবস্ত্র কেনা যেন অনেকটাই স্বপ্ন তাদের কাছে। তাই ঠান্ডাতে অনেকেই পুরাতন কাপড় ব্যবহার করছেন। সন্ধ্যা নামার পরপরই চরাঞ্চলের মানুষ রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ছেন। আবার খুব ভোরে উঠেই বেরিয়ে পড়ছেন কাজের সন্ধানে। নারী, শিশু এবং বৃদ্ধরা একটু উষ্ণতা পেতে রোদের খোঁজে বের হন। গত শনি ও রবিবার রোদের দেখা না পাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন চরের বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদীর বুক ছিঁড়ে জেগে ওঠা প্রায় ৭ হাজার একর ভূমির এ চরে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার মানুষের বসবাস। বসবাসকারীদের প্রায় সবাই ভূমিহীন। যেখানে জীবন চলে কৃষি আর মাছ শিকার করে। সেখানে উপার্জিত অর্থে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তার ওপর নানা রোগ-ব্যাধি তো আছেই! শীত মৌসুমে পুরনো কাপড়েই চলে তাদের শীত নিবারণ। গত এক সপ্তাহ ধরে পড়ছে ব্যাপক শীত। এই শীতে শিশু, বৃদ্ধসহ চরের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখানে এখনো মেলেনি সরকাবি কিংবা বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে শীতের কাপড় সহযোগিতা।

গত ১১ বছর এভাবে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করেই বাঁচতে হচ্ছে চরের বাসিন্দাদের। এ চরে গত এক যুগে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা, বৃদ্ধসহ বহু অসুস্থ্য মানুষ । বিভিন্ন সময় চরটিকে ইউনিয়ন পরিষদ ঘোষনা করে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবগত করলেও এখানে কোনো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়নি। যার ফলে এখানকার শিশুরা শিক্ষা বঞ্চিত হয়ে অনেকটা অন্ধকারেই জীবন পার করছে। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধানরা বলছেন চরটির মানুষের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আধুনিক সভ্যতার কোন ছোঁয়া লাগেনি চরগাসিয়ায়। সড়কের অভাবে সেখানকার বাসিন্দাদের পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয় মাইলের পর মাইল পথ। স্কুল, কলেজের অভাবে সন্তানদের শিক্ষিত করতে না পারার কষ্টও রয়েছে ব্যাপক। দূর্যোগ মোকাবেলায় নেই কোন সাইক্লোন সেন্টার। অপরাধ দমনে আইনি আশ্রয়ের জন্য যেতে হয় অন্য ১০টি চর পাড়ি দিয়ে হাতিয়া থানায়। নেই কোন বড় বাজার, যার কারণে চরের জমিতে চাষাবাদ করে উৎপাদিত ফসল, সবজি বেঁচাকেনা করতে না পেরে কৃষি কাজে আগ্রহও হারাচ্ছেন কৃষকরা। এমন দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন চরগাসিয়ার মানুষ। চরের সাড়ে ১৭ হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রদানে রয়েছে ছোট আকারের ৬ ফার্মেসী। যেখানে মানুষের ওষুধের পাশাপাশি গবাদি পশুর ওষুধও বিক্রি করা হয়। এই শীতে আক্রান্ত রোগীদের ভরসার কেন্দ্রবৃন্দু হয়ে ওঠেছে ওই ফার্মেসীগুলো। ছেলে-মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ভূমিহীন নেতা ফখরুল ইসলামের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে ৪টি মাদ্রাসা ও যাতায়াতের জন্য চারটি কাঁচা রাস্তা। চরে রয়েছে চারটি ছোট বাজার। ওই বাজারগুলোতে সন্ধ্যায় বসে আড্ডা, যেখানে চরের বাসিন্দারা একে-অপরের খোঁজখবর নিয়ে গল্প করেন। কিন্তু শীত বেড়ে যাওয়ায় সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোও ফাঁকা হয়ে যায় এখন। মানুষ একটু উষ্ণতার খুঁজে ফিরে যায় আপন গৃহে।

সেখানকার বাসিন্দারা জানান, প্রায় দুই যুগ আগে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠা এ চরটিতে ২০১৩ সালে জনবসতি শুরু হয়। বর্তমানে ৭টি সমাজে বিভক্ত ৮ হাজার পরিবারে এ চরে বসবাস করছেন প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার মানুষ। বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছার্সের মতো সকল প্রাকৃতিক দূর্যোগের আগে ও পরে কোন প্রকার সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই মোকাবেলা করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। ১১ বছরেও আধুনিক কোনো সুযোগ সুবিধা এখনও চালু হয়নি চরটিতে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় পরিবারের বড় সদস্যদের সঙ্গে কৃষি কাজ করেন এখানকার শিশু, কিশোর ও যুবক-যুবতীরা। এতে নারীরাও যুক্ত রয়েছেন সমানতালে। কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়া সমাজ ভিত্তিক গড়ে ওঠা বাজারগুলোতে ওষুধ বিক্রি করেন কয়েকজন, আবার একই দোকানে বিক্রি করা হয় গবাদি পশুর ওষুধও। যার কারণে শীতবাহিত রোগে আক্রন্ত রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

দুর্যোগের নানা গল্প এ চরের প্রতিটি ঘরের বাসিন্দাদের। সম্পতি এ চরটিকে হরণি ইউনিয়নের অন্তভুক্ত করে ওয়ার্ড করলেও ভোটের সুবিধা বঞ্চিত বেশির ভাগ মানুষ। যাতায়ত ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলা বা জেলা সদরের কোন হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়না অসুস্থ্য কোনো রোগিকে, এর পরিনতি হয় অকাল মৃত্যু। কোন মতে অন্ন, বস্ত্রের ব্যবস্থা হলেও নেই উন্নত বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী তাঁর সহধর্মীনি সাবেক সাংসদ আয়েশা ফেরদৌসের মাধ্যমে দুটি সেমি পাকা আশ্রয়ণ ও ৫টি টিনসেট আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করে দিলেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ কক্ষই খালি।
চরের ভূমিহীন নেতা ফখরুল ইসলাম বলেন, চরটি গড়ে ওঠার পর আমরা যখন এখানে আবাদ শুরু করি, তখন আমাদেরকে প্রকৃতির সঙ্গে অনেক যুদ্ধ মোকাবেলা করতে হয়েছে। এখনো সেই যুদ্ধ করে যাচ্ছি। আমাদের এই চরে বসবাস প্রায় এক যুগের মতো হলেও এখানে এখন পর্যন্ত সরকারি কোন কার্যক্রম নেওয়া হয়নি। নেই বলতে কিছুই নেই। একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের জন্য যেটুকু পরিবেশ প্রয়োজন, আমরা এর সবদিক থেকে বঞ্চিত রয়েছি। এই শীতে আমাদের বসবাসে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এখানে তীব্র শীতের কারণে বসবাসকারীরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। এখন পর্যন্ত এই চরে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোন শীতবস্ত্র সহযোগিতা আসেনি। চরের মানুষের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের দাবি জানান এই ভূমিহীন নেতা।

ফেডারেশন অফ এনজিওস এন বাংলাদেশ (এফএনবি) নোয়াখালীর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই চরে এখনো আমাদের এনজিওগুলো কাজ শুরু করেনি। তবে সিডিএসপি-৫ এ ওই চরে কাজ করার প্রস্তাবনা রয়েছে। ওই প্রস্তাব অনুমোদন পেলে চরগাসিয়ায় আমরা কাজ শুরু করবো।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকারি যে কম্বল এসেছে, তা আমরা উপজেলা পর্যায়ে বন্ঠন করে দিয়েছি। তবে ওই চরের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, চরগাসিয়ার মানুষের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  

নামাজের সময় সূচি

    Dhaka, Bangladesh
    বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
    ওয়াক্তসময়
    সুবহে সাদিকভোর ৩:৫৭ পূর্বাহ্ণ
    সূর্যোদয়ভোর ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ
    যোহরদুপুর ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
    আছরবিকাল ৩:১৯ অপরাহ্ণ
    মাগরিবসন্ধ্যা ৬:৩১ অপরাহ্ণ
    এশা রাত ৭:৫৩ অপরাহ্ণ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!