বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের আট জেলায় বেড়েছে সরিষার আবাদ। বিস্তীর্ণ বিলের যতদূর চোখ যায় হলুদের সমারো। মৌ-বাক্স থেকে বেরিয়ে হলুদ ফুলের ডগায় বসে মধু আহরণ করছে মৌমাছির দল। এভাবে গত তিন বছরে উল্লেখযোগ্য হারে সরিষা আবাদের সাথে মৌমাছি দিয়ে বেড়েছে মধু উৎপাদনও।
সরিষার ফুল কাজে লাগিয়ে জমির আইলে শত শত মৌবাক্স বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন করছেন মৌয়ালরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উত্তরাঞ্চলের মধু যাচ্ছে সারাদেশে। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির কাছেও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে এই মধু। চলতি মৌসুমে রাজশাহী এবং বগুড়া অঞ্চলের ৭ জেলায় ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৯ হেক্টর সরিষা খেতে প্রায় ২ হাজার মেট্রিকটন মধু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
দিগন্তজোড়া সরিষার খেতে শত শত মৌবাক্স বসানো। প্রতিটি ছোট দলে অন্তত ৫ জনকে শ্রমিক মধু সংগ্রহের কাজ করেন। মৌমাছির দল সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে চাষির বাক্সে জমা করছে। মধু আহরণ, সংরক্ষণসহ নানামুখী কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় মৌয়ালদের। কাঠ দিয়ে বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহের বাক্স তৈরি করা হয়। রোদ-বৃষ্টিতে মাছির মধু সংগ্রহ অব্যাহত থাকে।
কালো রঙের পলিথিন ও পাটের চটে বাক্সগুলো মুড়িয়ে রাখা হয়। বাক্সে মৌমাছির অবাধ চলাচলের জন্য পথ রয়েছে। বাক্সে বিশেষ কৌশলে রানি মৌমাছিকে আটকে রাখা হয়। মূলত রানীর টানেই অন্য মাছি মধু সংগ্রহ করে বক্সে ফিরে। প্রতিটি মৌবাক্সে ৭ থেকে ১০টি কাঠের ফ্রেমে মধু সঞ্চয় করে মাছিদল।
বছরের ছয়মাস বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করেন মৌয়ালরা। অন্য সময় চিনির রস খাইয়ে মৌমাছি রাখা হয়। পরে রবি মওসুমে এসে সরিষা, লিচু, বড়ই, কালোজিরা, ধনিয়া ফুলে মধু উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সরিষা এবং কালোজিরার মধুর চাহিদা বেশি।
একশ বাক্স থেকে সপ্তাহে তিনি ৩০০ থেকে ৩২০ কেজি মধু সংগ্রহ করেন। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি মধুর দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। তবে পাইকারদের কাছে কম দামে মধু বিক্রি করতে হয়।