অসুস্থ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে সুস্থ দেখিয়ে সনদ প্রদানের পরও করছেন না অফিস। এতে অফিসে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে নাগরিক সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষ। দ্রæত এ সমস্যার সমাধান চান নাগরিকরা। তবে এবিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নারাজ প্রশাসন।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহনাজ বেগম। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে স্ট্রোক জনিত কারণে গুরত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাঁর অসুস্থতায় উপজেলা পরিষদ কার্যক্রমে স্থবিরতা আসায় স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেন মাসুদকে ২০২৩ সালের ২৮ জানুয়ারী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
সম্প্রতি অসুস্থ শাহনাজ বেগম নিজেকে সুস্থ দাবি করে কর্মস্থলে যোগদানের আবেদন করায় জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে জেলা সিভিল সার্জনের কাছে শাহনাজ বেগমের শারীরিক চিকিৎসার প্রতিবেদন চাওয়া হয়। সিলিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সোহরাব হোসেন ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. মো. তানভীর হাসানকে নিয়ে গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনে শাহনাজ বেগম স্ট্রোক জনিত কারণে শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন এবং কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে সক্ষম উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারী পুনরায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বুঝে নেন শাহনাজ বেগম। কিন্তু দায়িত্বভার বুঝে নেওয়ার পরও অসুস্থতার কারণে অফিস করতে পারছেন না উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহনাজ বেগম। এতে ভেঙে পড়েছে উপজেলা পরিষদের সেবা কার্যক্রম।
উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের নাগরিক মো. মোস্তফা ফারুক। গত ১৫দিন ধরে বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে একটি স্বাক্ষরের জন্য ঘুরাঘুরি করছেন তিনি। শারীরিকভাবে অক্ষম অসুস্থ শাহনাজ বেগম অফিসে না আসায় দিনের পর দিন উপজেলা পরিষদে এসেও সেবা না পেয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে।
শুধু মোস্তফা ফারুকই নয়, উপজেলার আরেফিন শুভ, আদনান সবুজ, আমিরুল ইসলাম, আবদুর রহিম, আয়রুল আনাম’সহ শত শত নাগরিক প্রতিদিন উপজেলা পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সেবা না পেয়েই হতাশ হয়ে ফিরতে দেখা গেছে। সেবা প্র্যত্যাশীদের অভিযোগ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহনাজ বেগম শারীরিকভাবে গুরত্বর অসুস্থ। হাত-পা লড়াচড়া করাতে পারেন না। হুইল চেয়ারে বসিয়ে অন্যের সাহায্যে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে তাঁকে। অথচ সিভিল সার্জন অফিস থেকে একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে সুস্থ ও সক্ষম উল্লেখ করে সনদ প্রদান করা হয়েছে। যেখানে অন্যের সাহায্য ছাড়া শাহনাজ বেগম চলতেই পারেননা, সেখানে কিভাবে তিনি পরিষদ চালাবেন, কাগজপত্রে স্বাক্ষর করবেন প্রশ্ন স্থানীয়দের।
তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের অসুস্থতার কথা স্বীকার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দ্রæত এই অচলাবস্থার সমাধান চান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেন মাসুদ। তিনি বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় দাপ্তরিক কার্যক্রমে স্থবিরতা এসে গেছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এই অচলাবস্থার সমাধানের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহনাজ বেগমের সুস্থতা কামনা করেন এই জনপ্রতিনিধি।
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহিনুল হাসান জানালেন তিনি নতুন এসেছেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তিনি চিটি পাঠাবেন মন্ত্রণালয়ে।
এবিষয়ে ক্যামেরার সামনে কোন কথা বলতে রাজি না হলেও পরবর্তীতে মুঠোফোনে নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, তিনি (শাহনাজ বেগম) যখন আবেদন করেছেন, তখনকার শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা করে সুস্থতার প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এখন যদি তিনি অসুস্থ হন, সেই ক্ষেত্রে পুনরায় তাঁর শারীরিক সুস্থতার পরীক্ষা করাতে হবে।
এদিকে অসুস্থ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহনাজ বেগমকে শারীরিক সুস্থতার সনদ প্রদান ও নাগরিকদের সেবা বঞ্চিত হওয়ার বিষয়ে বক্তব্য নিতে একাধিক বার স্থানীয় সরকার বিভাগ নোয়াখালীর উপপপরিচলক জালাল উদ্দিন এবং জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমানের কার্যলয়ে গেলে তাঁরা গণমাধ্যমের সামনে এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দ্রæত এই অচলাবস্থার সমাধানের মাধ্যমে সেবা প্রত্যাশীরা তাদের কাঙ্খিত সেবা পাবে এমনটাই প্রত্যাশা বেগমগঞ্জবাসীর।
নোয়াখালী।