• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন

ভবনে রেস্তোরাঁর অনুমোদন নিয়ে ডিএসসিসিকে দুষছে রাজউক

Avatar
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০২৪ সংবাদটির পাঠক ২ জন

যে কোনো প্রতিষ্ঠানে ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার আগে ব্যবসার ধরন, ভবনের বাণিজ্যিক অনুমোদনসহ অন্যান্য বিষয় সরেজমিনে পরিদর্শন করতে হয়। কিন্তু রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রিন কোজি কটেজের যেসব রেস্তোরাঁকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল, এর কোনোটিই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে দেয়া হয়নি। এসব ট্রেড লাইসেন্স বিতরণ ও অবৈধ রেস্তোরাঁ পরিচালনার বিষয়ে একে অপরকে দুষছে সরকারের দায়িত্বশীল দুই সংস্থা রাজউক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।

অগ্নিকাণ্ডের পর ভবনটির বাণিজ্যিক অনুমোদন ছিল না বলে দায়সারা বক্তব্য দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্টদের দাবি, তারা যথাযথ নিয়ম মেনেই রেস্তোরাঁগুলোকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে। কিন্তু রাজউকই তার মুখ্য ভূমিকা পালন করেনি। এছাড়া এ ঘটনায় সরকারের অন্য সংস্থারও দায় রয়েছে বলে মনে করেন তারা।

নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঢাকায় যে পরিমাণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষকে বসবাস করছে, বিশ্বের আর কোনো শহরে এমন নজির নেই। বেইলি রোডের এ অগ্নিকাণ্ড ঢাকায় জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি আবার সবার সামনে আনলো। অথচ নগর পরিকল্পনা, ভবনের ডিজাইন, নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা, ভবনের ব্যবহার, ভবনের অগ্নি প্রতিরক্ষা, ফায়ার ড্রিল, ভবন মালিকের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণ এবং নগর সংস্থাগুলোর নিয়মিত তদারকি থাকলে এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। তাই এটিকে গাফিলতিজনিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা জরুরি। এ গাফিলতিতে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় এর পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে।’

২০১১ সালে একটি বেজমেন্টসহ আটতলা আবাসিক কাম বাণিজ্যিক (এ-২, এফ-১) ভবন হিসেবে গ্রিন কোজি কটেজের নকশা অনুমোদন দেয়া হয়। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভবনটি নির্মাণ শেষে ২০১৩ সালে ভূমি মালিক হামিদা খাতুনকে হস্তান্তর করে। ২০১৯ সালে ওই ভবনে অভিযান চালিয়েছিল রাজউক। ওই সময় ভবন তৈরিতে অনিয়মের কারণে ওই ভবনের অননুমোদিত অংশ ভেঙে দেয়া হয়। পাশাপাশি ভবনটিতে ছিল না রাজউকের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট বা ব্যবহার সনদ। এজন্য তাদের করা হয় জরিমানাও। রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে খবরটি নিশ্চিত করেন। কিন্তু ভবনে কীভাবে রেস্তোরাঁ চালু হলো, রাজউক কেন কোনো ব্যবস্থা নিলো না- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।

রাজউক সূত্র জানায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছ থেকে বেইলি রোডের ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনটি আবাসিক কাম অফিস (অকুপেন্সি টাইপ এ-২ এবং এফ-১) হিসেবে ব্যবহারের অনুমোদন ছিল। অর্থাৎ ভবনটি আবাসিক কাম অফিস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, রেস্তোরাঁ নয়। অথচ তারা পুরো ভবনটি রেস্তোরাঁ হিসেবে ব্যবহার করেছে। এখন কী কারণে আগুন ভয়াবহ রূপ পেল এবং কেন এত প্রাণহানি ঘটলো তা খতিয়ে দেখতে রাজউকের সদস্যকে (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে ২০১৩ সালে ভবনটি মালিকপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পর শুরু হয় বিভিন্ন রেস্তোরাঁর কার্যক্রম। তখন থেকেই তারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, ভবনটির নিচতলায় ‘স্যামসাং’ ও ‘গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার’ নামে দুটি ইলেকট্রনিকস সরঞ্জাম বিক্রির দোকান, ‘শেখলিক’ নামে একটি জুস বার (ফলের রস বিক্রির দোকান) ও ‘চুমুক’ নামে একটি চা-কফি বিক্রির দোকান ছিল। এর মধ্যে চুমুকের ট্রেড লাইসেন্স ছিলো না।

ওই ভবনটি কমার্শিয়াল দেখেই আইন অনুযায়ী রেস্তোরাঁর জন্য ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছিল ডিএসসিসি। আর বাণিজ্যিক হারেই ভবন মালিকদের কাছ থেকে হোল্ডিং কর আদায় করা হতো। তবে রাজউকের উচিত কোন ভবনে কী করা যাবে, আর কোনটা করা যাবে না ভবনের নিচে তার একটা বোর্ড টানিয়ে দেয়া। ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক এ কথা বলেন।

দ্বিতীয়তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামে একটি রেস্তোরাঁ, তৃতীয়তলায় ‘ইলিয়ন’ নামে একটি পোশাকের দোকান, চতুর্থতলায় ‘খানাস’ ও ‘ফুকো’ নামে দুটি রেস্তোরাঁ, পঞ্চমতলায় ‘পিৎজা ইন’ নামে একটি রেস্তোরাঁ, ষষ্ঠতলায় ‘জেসটি’ ও ‘স্ট্রিট ওভেন’ নামে দুটি রেস্তোরাঁ এবং ছাদে ‘অ্যামব্রোসিয়া’, ‘হাক্কাঢাকা’ নামে দুটি রেস্তোরাঁ ছিলো। এসব রেস্তোরাঁর সবকটির ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, যারা লাইসেন্স দিয়েছে তাদের আগে দেখার দরকার ছিল ভবনটিতে রেস্তোরাঁ করার জন্য রাজউকের অনুমোদন আছে কি না, ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম (অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা) ঠিক আছে কি না। কিন্তু ডিএসসিসি তার কোনোটিই করেনি। যখন যে প্রতিষ্ঠান এ ভবনে রেস্তোরাঁ করতে চেয়েছে, ডিএসসিসি তাদেরই ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে। অথচ রাজউকের এফ-১ এ ভবনে রেস্তোরাঁ করার অনুমোদন নেই।

বেইলি রোড এলাকাটি ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এর আওতাধীন। এ অঞ্চলের লাইসেন্স সুপারভাইজার ইফতেখার আলম বলেন, ‘আমরা ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে দেখি যে ভবনে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা হবে সেটি বাণিজ্যিক ভবন কি না। যদি বাণিজ্যিক ভবন হয় তাহলে ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়। অন্যথায় তা দেয়া হয় না। তবে এক্ষেত্রে রাজউকের বাণিজ্যিক ভবনের যে কয়েকটা ক্যাটাগরি রয়েছে তা আমাদের দেখা হয় না।’

উল্লেখ্য গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনার পর টনক নড়ে রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  

নামাজের সময় সূচি

    Dhaka, Bangladesh
    বুধবার, ৮ মে, ২০২৪
    ওয়াক্তসময়
    সুবহে সাদিকভোর ৩:৫৮ পূর্বাহ্ণ
    সূর্যোদয়ভোর ৫:২০ পূর্বাহ্ণ
    যোহরদুপুর ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
    আছরবিকাল ৩:১৯ অপরাহ্ণ
    মাগরিবসন্ধ্যা ৬:৩০ অপরাহ্ণ
    এশা রাত ৭:৫২ অপরাহ্ণ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!