নোয়াখালীতে বেদখল হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি। ভূমিগ্রাসী চক্র সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তুলছেন দোকান, মার্কেট ও স্থায়ী স্থাপনা। নিজেদের ইচ্চে মতো করা হচ্ছে সরকারি জায়গার দখল বেচাকেনা। এ যেন সরকারি ভূমি দখলের মহোৎসব চলছে।
জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর মৌজার ৯টি দাগে ১০ একর ৩ শতাংশ জমি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহনকৃত সম্পত্তি জানিয়ে উক্ত জমিতে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এবং অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও জমি দখলের চেষ্টা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ লিখা সাইনবোর্ড স্থাপন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী।
সরেজমিনে দেখা গেছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময় থেকে ওই সম্পত্তির সড়কের পাশের অংশে মাটি ভরাট করা হয়। গত ২ মার্চ থেকে ওই সরকারি জায়গায় শুরু দোকানঘর নির্মাণের কাজ।
স্থানীয়রা জানায়, জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও স্থানীয় নুরুল হক মিয়ার ছেলে প্রভাবশালী ভূমি দস্যু খোকা মিয়া সরকারি জায়গাটি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। পরবর্তীতে ওই জায়গায় প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এবং অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও জমি দখলের চেষ্টা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ লিখা সাইনবোর্ড স্থাপন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ওই সাইনবোর্ডের কোন তোয়াক্কা না করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় স্থানীয় মজিবুল হকের ছেলে তাজুল ইসলাম ও স্থানীয় বছির আহম্মদের ছেলে মিয়ার কাছে জায়গাটির দখল বিক্রি করে দেয় খোকা মিয়া। জায়গাটির দখল ক্রয়ের পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ওই জায়গা ভরাটের পর দোকানঘর নির্মাণ করছেন তাজুল ইসলাম ও মিয়া।
স্থানীয়দের অভিযোগ জায়গাটিতে মাটি ভরাট ও দোকানঘর নির্মাণের বিষয়ে বার বার মুখিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল সাহেবকে জানানোর পরও কার্যত কোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখলের বিষয়ে অনেকটা নিরবতা পালন করছেন কর্মকর্তারা।
দক্ষিণ ওয়াপদা বাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় দোকানঘর নির্মাণকারী তাজুল ইসলাম অবৈধভাবে দোকানঘর নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দীঘদিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্দোবস্ত না থাকায় এভাবেই ঘর তুলতে হচ্ছে।
এদিকে, সরেজমিন সোনাপুর-চরজব্বর সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে দোকান, মার্কেট ও স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের চিত্র দেখা গেছে। জরিপ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজসে ভুয়া খতিয়ান সৃজন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমির মালিকানা দাবির পর ওই ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত উত্তর ওয়াপদা উচ্চ বিদ্যালয়ের খাস দখলীয় ভূমিতে মাটি ভরাট করে জবরদখলের চেষ্টা করছে স্থানীয় মোসলেহ উদ্দিন ও মহি উদ্দিন নামের দুই ভূমিদস্যু। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ওই ভুয়া খতিয়ান সৃজনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করেছে তারা।
এছাড়া, নোয়াখালী সদর, হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িসহ দু’পাশে একোয়ার করা শত শত একর জমি রয়েছে। ওই জমিগুলোর বেশিরভাগই প্রভাবশালী ভুমি দস্যুরা দখল করে দোকান, মার্কেট ও স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সালকে সোমবার (০৪ মার্চ) দুপুরে দক্ষিণ ওয়াপদায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখলের বিষয়ে মুঠোফোনে জানালে তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানান। তবে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ওই জায়গায় দোকানঘর নির্মাণের কাজ চলমান থাকতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখলের অভিযোগের বিষয়ে এই কর্মকর্তা জানান, যেখানে দখল বা স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে তদন্তপূর্বক আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করছি।