• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন

বিচারকাজ শেষ হয়নি ১১ বছরেও

Avatar
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ সংবাদটির পাঠক ১২ জন

১১ বছর আগে আজকের এ দিনে সাভারের রানা প্লাজা ধসে মৃত্যু হয় ১ হাজার ১৩২ জনের (আইএলওর হিসাব মতে)। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। বিশ্বের ভয়াবহ ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্র্যাজেডি’ খ্যাত এ ঘটনা সারা বিশ্বকে মর্মাহত করে। তবে এত মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া এ ঘটনা এক যুগ পেরোতে চললেও দায়ীদের বিচার এখনো হয়নি। নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা ও শরীরে ক্ষত বয়ে চলা হাজারো শ্রমিক এখনো তাকিয়ে আছেন আসামিদের বিচারের আশায়। বিচার ও ক্ষতিপূরণ নিয়েও আক্ষেপ রয়েছে ভুক্তভোগী শ্রমিকদের। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ৪টি মামলা দায়ের করা হয়।

এরমধ্যে শ্রমিকদের মৃত্যু অবহেলাজনিত কারণে হয়েছে মর্মে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন না মানায় একটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এছাড়া ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে আরো দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ৪ মামলার মধ্যে সম্পদের তথ্য গোপনে দুদকের একটি মামলার রায় হয়েছে। বাকি ৩ মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আটকে আছে। রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে না পারায় দ্রুত বিচার শেষ হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

রানা প্লাজার হত্যা মামলা : ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পরদিন শ্রমিকদের অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে সাভার থানার এসআই আলী আশরাফ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই সিআইডি চার্জশিট দেয়। চার্জশিটে ভবনটির মালিক সোহেল রানা ও তার বাবাসহ ৪১ জনকে আসামি করা হয়। তবে সোহেলের বাবাসহ ৩ জন মারা গেছেন। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার জেলা দায়রা জজ হেলাল উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলায় মোট ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

সর্বশেষ গত ২১ এপ্রিল মামলাটির ৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। আগামী ২৮ এপ্রিল মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে। এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমদ্দার জানান, মামলাটির শুরু থেকে বিভিন্নভাবে সময় নষ্ট হয়েছে। দীর্ঘ সময় লেগে যায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে। এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের আদেশ দিলে আসামিরা সেই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যান। অন্যান্য আইনগত বাধা পেরিয়ে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে এসেছে। কিন্তু সাক্ষীরা ঠিকমতো হাজির হন না। আমরা আদালত থেকে সাক্ষীদের বার বার সমন পাঠানোর পরেও তারা হাজির হচ্ছেন না। অবশেষে অনেক সাক্ষীকে পুলিশ ধরে এনেছে। ৮৪ জনের সাক্ষ্য শেষে হয়েছে। আরো ১০০ জনের সাক্ষ্য নেয়া লাগতে পারে। আশা করছি, খুব শিগগিরই মামলার বিচার শেষ হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবাররা ন্যায় বিচার পাবে।

ইমারত আইনের মামলা : ইমারত বিধিমালা না মেনে ভবন নির্মাণের অভিযোগে ওই সময় সোহেল রানাসহ ১৩ জনকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করেন রাজউক কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমেদ। সিআইডি তদন্ত শেষে এ মামলায় ইমারত আইনের ১২ ধারায় সোহেল রানা ও তার বাবা-মাসহ ১৮ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। সাক্ষী করা হয় ১৩৫ জনকে। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে ছিল। তবে চার্জগঠনের বিরুদ্ধে কয়েকজন আসামির রিভিশনে উচ্চ আদালত থেকে মামলাটি স্থগিত রয়েছে। এই মামলার সব আসামি জামিনে রয়েছেন।

ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলা : মামলাটি বর্তমানে ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এস এম জিয়াউর রহমানের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলায় মোট ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্য হয়েছে। সর্বশেষ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক এম এ মফিদুল ইসলামের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। তবে তার জেরা শেষ না হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান রয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিল জেরা ও পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

কারাদণ্ড হওয়া একমাত্র মামলা : অবৈধ সম্পদ অর্জনে দুদকের মামলায় ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট সোহেল রানাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। অপরদিকে রানার মা মর্জিনা বেগমকে ৬ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও তার সম্পদের ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯০ টাকা বাজেয়াপ্ত করেন বিচারক। এছাড়া সোহেল রানার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের মামলা রয়েছে, যা আদালতে বিচারাধীন। এদিকে আসামি রানার পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনার মামলা। সেই মামলায় রানা গত ১১ বছর ধরে জেল হাজতে রয়েছেন। জামিন পাচ্ছেন না। বাকি সবাই জামিনে আছেন। মামলার রায়ে যা হওয়ার তাই হবে। এভাবে বিনা বিচারের ১১ বছর জেলে থাকা মানবিক দিক থেকে অন্যায়। তাই আদালতের উচিত হয়তো মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ করা, নয়তো আসামিকে জামিন দেয়া। আশা করছি, মামলায় রায়ে রানাসহ অন্য আসামিরা খালাস পাবেন। রানা প্লাজা ধস মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, তার বাবা আব্দুল খালেক (মৃত), রানার মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন) এ টি এম মাসুদ রেজা, প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইন, সাভার পৌরসভার মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, সাভার পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাভার পৌরসভার সাবেক টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম, লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আব্দুল মোত্তালিব, পৌরসভার সাবেক সচিব মর্জিনা খান, সাবেক সচিব মো. আবুল বাশার, ফ্যান্টম এপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের এমডি বজলুস সামাদ ও ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান। সোহেল রানা ছাড়া সব আসামি জামিনে রয়েছেন।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সাভারে রানা প্লাজার সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে দোষীদের শাস্তি ও সম্মানজনক ক্ষতিপূরণের দাবিতে ‘হাজারো প্রাণ ও স্বপ্নর গল্প’ নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন রানা প্লাজা ভবনে ২ দিন আটকা থেকে উদ্ধার পাওয়া শ্রমিক জেসমিন।

আলোচনায় জেসমিন বলেন, এমনভাবে ২ দিন আটকা ছিলাম, বাঁচার কোনো আশা ছিল না। ১১ বছর ধরে সেই দুঃসহ স্মৃতির ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি মনে এবং শরীরে। অথচ এখনো দোষীদের শাস্তি হয়নি। দোষীদের শাস্তি হলে আমরা প্রাণে একটু শান্তি পেতাম। গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, ১১ বছরেও এতজন প্রাণ হত্যার বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্তিত হয়নি। কারখানার ভবন মালিক সোহেল রানা ছাড়া অন্যান্য মালিক, সরকারি কর্মকর্তারা জামিনে কারাগারের বাইরে আছেন। বিচারের এই ধীর গতি মালিকপক্ষ ও দোষীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার এবং তাদের বাঁচিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টারই সামিল। শ্রমিকদের যে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে তা সম্মানজনক নয় বলে দাবি করেন তিনি। তাদের অনুষ্ঠান আজো চলবে।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  

নামাজের সময় সূচি

    Dhaka, Bangladesh
    বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
    ওয়াক্তসময়
    সুবহে সাদিকভোর ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ
    সূর্যোদয়ভোর ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ
    যোহরদুপুর ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ
    আছরবিকাল ২:৫০ অপরাহ্ণ
    মাগরিবসন্ধ্যা ৫:১১ অপরাহ্ণ
    এশা রাত ৬:৩০ অপরাহ্ণ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!