ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে অস্ত্র ত্যাগে রাজি বলে সংকেত দিয়েছেন দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের কয়েকজন নেতা। তবে এক্ষেত্রে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েলের দখল করা অঞ্চলগুলোকে নিয়েই স্বাধীন ফিলিস্তিনের সীমানা নির্ধারণ করার শর্ত তাদের।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। হামাসের রাজনৈতিক শাখার এক নেতা বাসেম নাইম বৃহস্পতিবার সিএনএনকে বলেছেন, ‘যদি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন হয় তবে হামাস অস্ত্র ত্যাগে রাজি।’
বাসেম বলেন, ‘জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন, শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের অধিকার এবং আল কাসেম ব্রিগেডকে দেশটির ভবিষ্যৎ সেনাবাহিনী করার শর্তে এটা হতে পারে।’
হামাস বরাবরই দুই রাষ্ট্রনীতি সমাধান প্রত্যাখ্যান করে আসছে। ইসরায়েলকে নিশ্চিহ্ন করে পুরো ভূমিতে ফিলিস্থিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য। এর মধ্যে রয়েছে বর্তমান ইসরায়েল, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা।
প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা বাগুতি জানান, হামাসের এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে এটিকে অনেক বড় পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন তিনি।
বাগুতি বলেন, ‘এটা এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, ফিলিস্তিনিরা দখলদারিত্ব প্রতিরোধ করছেন কারণ এখানে দখলদারিত্ব বর্তমান। কিন্তু যদি দখলদারিত্ব না থাকে, প্রতিরোধেরও প্রয়োজন হবে না।’
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নেয় ইসরায়েল। এসব এলাকায় কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি বাস করেন।
জেরুজালেম ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড সিকিউরিটির প্রেসিডেন্ট ইফরাইম ইনবার অবশ্য মনে করেন, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের তাদের আদি বাড়ি ঘরে, যা বর্তমানে ইসরায়েলে অবস্থিত, ফেরত আসার শর্ত মেনে নিলে তা ইসরায়েল রাষ্ট্রের পতনের কারণ হবে। পশ্চিমাদের মনোযোগ আকর্ষণে হামাসের এ পদক্ষেপ বলে মত তার।
তিনি বলেন, ‘তারা দেখতে পাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি অনেক সমর্থন রয়েছে। এখন তারা দেখাতে চাচ্ছে তারা আসলে ভালো মানুষ আর ইসরায়েল হলো খারাপ এবং ইসরায়েল স্বাভাবিকভাবেই এ প্রস্তাবে না বলবে।’
ইফরাইম ইনবারের মতে, আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো হয়ত ইসরায়েলকে তাদের একটি সুযোগ দেয়ার কথা বলতে পারে। তবে ইসরায়েল হয়ত এটাকে পাত্তা দেবে না।
গত ৭ অক্টোবরের হামলার পর নেতানিয়াহু সরকার হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার শপথ নিয়েছে। হামাসের ওই হামরায় ইসরায়েলের প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। আড়াইশ জনকে অপহরণ করে হামাস যোদ্ধারা। এর মধ্যে কয়েকজন জিম্মিকে হামাস মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু ১৩৩ জনকে মুক্তির বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে।
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১৭টি দেশের প্রধানরা একটি বিরল যৌথ বিবৃতিতে হামাসকে জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এতে গাজায় অবিলম্বে এবং দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধ বিরতি সম্ভব হবে ফলে গাজাবাসীর দুর্ভোগের অবসান করতে সেখানে প্রচুর মানবিক সাহায্য সামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হবে।
গত বুধবার ইস্তাম্বুলে হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খালিল আল–হায়া বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, পশ্চিম তীর ও গাজা নিয়ে পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক প্রস্তাব অনুযায়ী শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হলে তারা প্রস্তাবে রাজি।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা দখল করে নেয়। আন্তর্জাতিক আইন ও বেশিরভাগ রাষ্ট্রের কাছেই এই অঞ্চলগুলো দখলকৃত বলে পরিচিত। এই এলাকাগুলো নিয়েই ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তাঁর দাবি, এতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
হামাস নেতা বাসেম নাইম জানান, প্রশাসনিক কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন এনে হামাস ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএনও) সঙ্গে যুক্ত হতেও আগ্রহী।
মুস্তাফা বাগুতি বলেন, হামাসের এ অবস্থান ২০০৭ সালের ঘটনাক্রমেকে মনে করিয়ে দেয় যখন তারা প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল ইউনিটি সরকার গঠন করেছিল। এতে এটাই নিশ্চিত হয় যে তারা ১৯৬৭ সালের সীমানা মেনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে।
অবশ্য এ বিষয়ে হামাস আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। ফলে বিদেশে থাকা তাদের কর্মকর্তারা যে বিষয়গুলো তুলে ধরছেন তা আদৌ গাজায় অবস্থান করা সশস্ত্র গোষ্ঠীটির মনের কথা কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বাসেম নাইম বলছেন, শর্ত পূরণ হলে হামাস অস্ত্র ত্যাগ করবে এটাই তাদের অবস্থান।