সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কোমরসমান উচ্চতার ব্যারিকেডের এক পাশে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শুভানুধ্যায়ীদের দিকে এগিয়ে যান মাখোঁ। সবুজ রঙের টি-শার্ট, সানগ্লাস ও মাস্ক পরা একজনের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। এ সময় লোকটিকে বলতে শোনা যায়, ‘মাখোঁনিয়ার পতন হোক’। এরপরই ডান হাত দিয়ে মুখোমুখি দাঁড়ানো মাখোঁর মুখে সজোরে চড় মারেন তিনি। ভিডিওতে সবুজ টি-শার্ট পরা ওই ব্যক্তিই দামিয়েন।
তাৎক্ষণিকভাবে ফরাসি প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের দুজন এগিয়ে গিয়ে দামিয়েনকে মাটিতে ফেলে দেন। আরেকজন মাখোঁকে সরিয়ে নেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই মাখোঁকে আবার সেখানে এসে ব্যারিকেডের অপর পাশের কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। ওই ঘটনায় আটক করা হয় দামিয়েনসহ মোট দুজনকে।
সরকারি কৌঁসুলিরা আদালতে দামিয়েনের বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে সহিংস কাজ’ সংঘটনের অভিযোগ আনেন। বলেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর দায়ে দামিয়েনের সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৪৫ হাজার ইউরো জরিমানা হতে পারত। অভিযুক্ত দামিয়েন ডানপন্থী রাজনীতির সমর্থক ও ফ্রান্সের ইয়েলো-ভেস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
থাপ্পড় খাওয়ার সেই ঘটনা নিয়ে সেদিনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্রে ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ আছে, তবে নির্বুদ্ধিতার সাথে সহিংসতা যুক্ত হলে তাকে প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। আমি বরাবরই সাধারণ মানুষের কাছাকাছি আসাটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। অনেক সময়ই তারা ক্ষোভ-হতাশা প্রকাশ করেন।
সেদিন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ আরও জানান, চলমান জনসংযোগ কর্মসূচিতে এ ঘটনা কোনো প্রভাব ফেলবে না। মঙ্গলবার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতেও সব দলের আইনপ্রণেতারা থাপ্পড়ের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
একইদিন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্যাসেক্স বলেন, দেশের প্রধানের ওপর হামলার অর্থ হল গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। গণতন্ত্রের অর্থ হল বিক্ষোভ, বিতর্ক, আর আলোচনার মাধ্যমে মতামত আদান-প্রদান। মতভেদ থাকতে পারে। সেটা জানানোর বৈধ উপায়ও আছে। কোনোভাবেই মৌখিকভাবে হেনস্তা বা শারীরিক আঘাত গ্রহণযোগ্য নয়।
দেশটির একটি বামপন্থী দলের আইনপ্রণেতা আদ্রিয়েন কোয়াটেনেন্স মনে করেন, যে হামলার শিকার হয়েছেন ম্যাক্রোঁ তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে যে কোনো সমস্যা আলোচনা আর ব্যালটের মাধ্যমে সমাধান করতে হয়। সহিংসতার মাধ্যমে নয়।