• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ অপরাহ্ন

এসএসসি আর এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তায়, উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও শিক্ষক

Avatar
সেন্ট্রাল ডেস্ক
আপডেটঃ : শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১ সংবাদটির পাঠক ১ জন

এ জে তপন : এবারের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার চাচ্ছে ন্যূনতম সিলেবাসের ওপর শ্রেণিকাজ শেষেই নেওয়া হবে পরীক্ষা। কিন্তু বাদ সাধছে করোনা। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে ধাপে ধাপে বাড়ছে লকডাউনসহ বিধিনিষেধ। সেই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছুটি বাড়ছে। এ অবস্থায় এই দুটি পাবলিক পরীক্ষা কবে নাগাদ নেওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারছেন না। তবে সরকার পরীক্ষা নেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করে রাখছে।

শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী প্রতিবছরের ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি এবং ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা হয়ে থাকে। এবার প্রায় ৪৪ লাখ শিক্ষার্থী এই দুটি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

এদিকে পরীক্ষা নিয়ে এই পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। টেনশনে আছেন শিক্ষক এবং শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারাও। বিশেষ করে উভয় সংকটে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একদিকে সমালোচনার শঙ্কায় বিগত এইচএসসি পরীক্ষার মতো এবারের পরীক্ষার্থীদের দেওয়া যাচ্ছে না ‘অটোপাশ’।

যে কারণে ক্লাস করিয়ে তাদের পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া আছে। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেও দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চিত যাত্রা অব্যাহত আছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এনবি নিউজকে বলেন, করোনায় বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অব্যাহত আছে। এরপরও আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে যে, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ন্যূনতম ৬০ এবং এইচএসসিতে ৮৪ দিন ক্লাসের পর পরীক্ষা নেওয়া হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে ছুটি বাড়াতে হচ্ছে।

এ অবস্থায় নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। আমাদের পক্ষেও বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে শিক্ষার্থীদের এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। যখনই শ্রেণিকাজ শুরু হবে তখন থেকে সরাসরি পদ্ধতিতে নির্ধারিত সংখ্যক ক্লাস শেষে দুই সপ্তাহ বিরতি দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গত দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বড় ক্ষতি হয়েছে লেখাপড়ার। শহরাঞ্চলে অনলাইনে বা দূরশিক্ষণে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া বিত্তশালীরা বাসায় প্রাইভেট টিউটরের কাছে সন্তানের পড়ালেখার ব্যবস্থা রেখেছেন।

কিন্তু গ্রামাঞ্চলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন বা টেলিভিশন পাঠদানের সুযোগ পায়নি। এ ক্ষেত্রে বেশি বঞ্চিত হয়েছে দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা। তাই লেখাপড়া করিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক।

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গত ১৫ মাসে এখন পর্যন্ত মোট তিন দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এ লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশনাও পাঠানো হয়। কিন্তু সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বগতি লাভ করায় প্রথম দুবারই উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। সর্বশেষ গত ২৬ মে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী।

সেদিন তিনি ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা বলেন। ওইদিন করোনা নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। আর বৃহস্পতিবার এই হার পাওয়া যায় ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা বুধবার ছিল ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ হচ্ছে-সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নেমে না এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যাবে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) এই নির্দেশনা দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আগে বড় শহরে সংক্রমণ বেশি ছিল। বর্তমানে মফস্বলে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেশি।

সংক্রমণের হার ৫-এর নিচে না নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেওয়ার বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ আছে। সে কারণে একটু অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কেননা ছাত্রছাত্রীদের ঝুঁকিতে ফেলা সমীচীন হবে না।

এদিকে এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এনবি নিউজকে বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি সংক্রান্ত বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে, সে কারণে এ নিয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চলাচলের ব্যাপারে ১৬ জুন পর্যন্ত বিধিনিষেধ আছে।

এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি এর চেয়েও বাড়বে কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দু-একদিনের মধ্যেই তা জানিয়ে দেওয়া হবে।

শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সরকার খুবই উদগ্রীব। যে কারণে সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেই অনলাইনে এই পরীক্ষা নেওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে পরামর্শ চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এ ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দেননি। কেননা সারা দেশে ৩ সহস্রাধিক কেন্দ্রে পরীক্ষা নিতে হবে। ২০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ঝুঁকি বাস্তবসম্মত নয় বলে তারা পরামর্শ দিয়েছেন।

ওই কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি এনবি নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভাগ বা অনুষদভিত্তিক পরীক্ষা হয়। সেখানে কয়েকশ পরীক্ষার্থী থাকে।

ক্ষেত্রবিশেষে ৬০-৭০ জনও পরীক্ষার্থী থাকে। তাদের পরীক্ষা নেওয়া যত সহজ, ২০-২২ লাখ পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে তত সহজ নয়। আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্র হাওর-চরাঞ্চলেও আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবার জন্য বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বা ওয়াইফাই নিশ্চিত করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তা ছাড়া কম্পিউটার বা ল্যাপটপও সবার নেই। তাই আমরা অনলাইনে পরীক্ষার কথা ভাবতে পারছি না। তবে যখনই খোলা যাবে তখন ক্লাস করিয়েই তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে না পারলেও সরকার পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে এসএসসি ও দাখিলের প্রশ্ন প্রণয়ন ও পরিশোধন শেষে মুদ্রণ কাজও শেষ করেছে।

বৃহস্পতিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজি প্রেসে ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নপত্র ট্রাংকজাত করার কাজ চলছে। অন্য বোর্ডের প্রশ্ন মুদ্রণও শেষ হয়েছে। এবার স্বাস্থ্যবিধির কারণে কেন্দ্র সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কোনো কেন্দ্রে আগে যে সংখ্যক পরীক্ষার্থীকে বসানো হতো এবারে সেখানে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশকে বসানো হবে। বাকিদের জন্য ভেন্যু কেন্দ্র (পার্শ্ববর্তী প্রতিষ্ঠানে) বাড়ানো হবে। ইতিপূর্বে এসব পরীক্ষার্থীর নির্বাচনী পরীক্ষা বাতিল করে তাদের ফরম পূরণের ব্যবস্থা করেছে সরকার।

ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম এনবি নিউজকে বলেন, এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে আমরা শতভাগ প্রস্তুত। এখন কাস্টমাইজড (পুনর্বিন্যাসকৃত) সিলেবাসের ওপর শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার অপেক্ষা। করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে এলে এই অপেক্ষার প্রহর হয়তো ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে।

তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এরপরও নানান কারণে যারা ফরম পূরণ করতে পারেনি, তাদেরও ব্যবস্থা করা হবে। কেউ পরীক্ষাবঞ্চিত হবে না।

উল্লেখ্য, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সরাসরি ক্লাস নেওয়ার লক্ষ্যে মূল সিলেবাস কাটছাঁট করা হয়েছে। ওই সিলেবাসের ২৫-৩৫ শতাংশ রেখে তৈরি করা হয়েছে কাস্টমাইজড সিলেবাস। এটি ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে পরীক্ষার প্রশ্ন কাঠামো ঠিক থাকবে।

এছাড়া আগামী বছরের (২০২২) শিক্ষার্থীদের সিলেবাসও পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। তাদের প্রশ্নকাঠামোতেও পরিবর্তন আসবে।

অন্যদিকে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতিও বোর্ডগুলো এগিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন বোর্ডে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শেষে পরিশোধনের কাজ চলছে। এসব শিক্ষার্থীর এখন পর্যন্ত অবশ্য ফরম পূরণের কাজ শুরু করেনি শিক্ষা বোর্ডগুলো।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  

নামাজের সময় সূচি

    Dhaka, Bangladesh
    বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
    ওয়াক্তসময়
    সুবহে সাদিকভোর ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ
    সূর্যোদয়ভোর ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ
    যোহরদুপুর ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ
    আছরবিকাল ২:৫০ অপরাহ্ণ
    মাগরিবসন্ধ্যা ৫:১১ অপরাহ্ণ
    এশা রাত ৬:৩০ অপরাহ্ণ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!