এনবি নিউজ : বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘পুলিশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে নিকটাত্মীয়ের মতো দাঁড়িয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশ পুলিশ সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে।’
আইজিপি বলেন, ‘পুলিশ মানুষকে সম্মান করেছে, অকাতরে ভালোবেসেছে। যার ফলে যারা নানা কারণে পুলিশের সমালোচনা করতেন, তারাও আজ পুলিশের পক্ষে কথা বলছেন।’
আজ সোমবার সকালে রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বহিরাগত ক্যাডেট এসআই ব্যাচের এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন।
এ সময় ব্যক্তিগত স্বার্থ ও মোহের ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক মূলবোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।
বেনজীর আহমেদ নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা মেধা, যোগ্যতা, আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সর্বোত্তম ব্যবহার করে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তিকে সমুন্নত রাখবে।’
বর্তমান মহামারিতে যখন আত্মীয়-স্বজনও করোনা আক্রান্তদের ত্যাগ করে চলে গেছে, তখন পুলিশ সদস্যরা আত্মীয়ের মতো আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘চলমান ভয়াবহ অতিমারী থাকা সত্ত্বেও আমরা আমাদের প্রথাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
এ প্রাপ্তি পুলিশের জন্য বিশাল অর্জন দাবি করে আইজিপি বলেন, পুলিশের প্রতি মানুষের এই বিশ্বাস, আস্থা ও সম্মান যেকোনো মূল্যে আমাদের ধরে রাখতে হবে।’
আইজিপি বলেন, ‘জনগণের সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার বিভিন্ন আইনকে সংস্কারের মাধ্যমে যুগোপযোগী করেছে। জনগণকে আইনি সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সদস্যদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীসহ সব সেবাপ্রত্যাশী জনগণের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে।’
নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘পুলিশের চাকরি থেকে হয়তো অনেক কিছুই পাওয়া যাবে। বেতন-ভাতা, চাকরির মর্যাদাপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে। বিনিময়ে অবশ্যই সর্বোচ্চ ত্যাগ ও তিতিক্ষার মানসিকতা নিয়ে জনমানুষের কল্যাণ এবং তাদের সেবার পাশাপাশি দেশের ধারাবাহিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনোক্রমেই প্রতিকুল পরিবেশ কিংবা অশুভ শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করা যাবে না। বরং ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে প্রতিকুল পরিবেশের বিরুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে এবং অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে হবে।’
দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘অপরাধ ও কৌশল মোকাবিলায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষমতা অর্জন পুলিশের একটি মাইল ফলক। ফরেনসিক, ডিজিটাল ফরেনসিক, ডিএনএ পরীক্ষা, আইপিডিআর এনালাইসিস, সাইবার ক্রাইম, ফিন্যানসিয়াল ক্রাইম, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারী ও শিশু ডেক্স, বিট পুলিশিং, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এবং অন্যান্য আরও সেবা চালু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এসবের ফলে দেশের পুলিশ বিভাগ আরও উন্নত হচ্ছে।’
এর আগে আইজিপি ৩৮তম বহিরাগত ক্যাডেট এসআই-২০২০ ব্যাচের এক বছর মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। প্যারেডে ৫৭ জন নারীসহ মোট এক হাজার ২৩১ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। প্যারেড পরিদর্শন শেষে আইজিপি বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
প্রশিক্ষণে ছেলেদের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ ক্যাডেট নির্বাচিত হন তানভীর আহমদ। মেয়েদের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ ক্যাডেট নির্বাচিত হন নাসরিন সুলতানা জ্যোতি। এছাড়া একাডেমিক বিষে কামরুল হাসান, প্যারেড বিষয়ে অলক বিহারী গুণ, পিটি ও বাধা অতিক্রম বিষয়ে আবদুল কাদির খন্দকার এবং মাসকেট্রি বিষয়ে নাজমুস সাকিব শ্রেষ্ঠ ক্যাডেট নির্বাচিত হয়ে আইজিপির হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে পুলিশ একাডেমীর অধ্যক্ষ খন্দকার গোলাম ফারুক, পুনাক সভানেত্রী বেগম জীশান মীর্জাসহ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপিরা, পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা এবং আমন্ত্রিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।