এনবি নিউজ : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে দুই নারী শ্রমিকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অনেক হতাহতের আশংকা করছে পুলিশ ফায়ার সার্ভিস সূত্র। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় ওই কারখানায় আগুনের সূত্রপাত হয়। আজ শুক্রবার সকালে এই ইরেপার্ট এলখা পর্যন্ত আগুরন নিয়ন্ত্রনে আসেনি। ফায়ার সার্ভসের ১৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করছে। আশংকা ভেতরে এখনও অর্ধশতাধিক শ্রমিক আটকা পড়ে আছে।
জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম এনবি নিউজকে বলেন, “আগুনে৩ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।”
নিহতরা হলেন- সিলেট জেলার যতি সরকারের স্ত্রী স্বপ্না রানী (৩৪), দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার উত্তর সুবেদপুর গ্রামের মোরসালিন (২৮) এবং রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল নতুন বাজার এলাকার হারুন মিয়ার স্ত্রী মিনা আক্তার (৩৩)।
রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর মোরসালিনের মৃত্যু হয়, বাকিদুজন ঘটনাস্থলেই। মোরসালিনের বাবার নাম আনিসুর রহমান। এক ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড় ছিলেন।
এই ঘটনায় ২০ জন আহত হয়েছেন জানিয়ে পুলিশ সুপার জায়েদুল বলেন, তাদের উদ্ধার করে রাজধানীসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জুসসহ কোমল পানীয় তৈরির এ কারখানার আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট রাত ১০টায়ও কাজ করছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম এনবি নিউজকে বলেন,জানান, কারখানাটিতে বিকালে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের শিখা চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ছয়তলা ওই কারখানার নিচতলা, তিনতলা ও চারতলায় আগুন জ্বলতে থাকে।
খবর পেয়ে ডেমরা, কাঞ্চন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কারখানা ভবনের তৃতীয় তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে তা অন্য তলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। তখন ভবনের বিভিন্ন তলায় কর্মচারী ও কর্মকর্তারা আটকা পড়ে। কেউ কেউ প্রাণ বাঁচাতে লাফিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ নুসরাত এনবি নিউজকে বলেন, বলেন, তিন ও চারতলায় ১২ জন শ্রমিক আটকা পড়েছিলেন। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে আনে।
আগুন লাগার পর শ্রমিকদের দিকবিদিক ছুটোছুটি এবং মানুষের ভিড়ে মহাসড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
আগুন কীভাবে লাগল- সে বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত কিছু বলতে পারেননি।
কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, “গ্যাস লাইন লিকেজ কিংবা বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।”
আগুনে দগ্ধ ও ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত স্বপ্না, মানিক, আশরাফুল, সুমন, সজিব, মেহেদী, মুন্না, মাজেদা, রুমা, মনোয়ারা, নাদিয়া, আছমা, মারিয়া, রুজিনা, সুমা, শফিকুল, সুফিয়া, সুজিদা, পারুল, রওশন আরা, শ্যামলাকে রূপগঞ্জের কর্ণগোপ ইউএস-বাংলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আগুনে দগ্ধ ও ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত নাহিদ (২৩), মঞ্জুরুল ইসলাম (২৫), মহসীন হোসেন (৩২), আবু বক্কর সিদ্দিক(৪০), আমেনা বেগম (৩২) এবং ফাতেমা আক্তারকে (২৩) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহত আবু বকর বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর ভবন থেকে লাফ দিলে তারা আহত হন।
পুলিশ কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া এনবি নিউজকে বলেন, বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে আহত অবস্থায় যে ছয়জনকে আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়ার কারণে তিনজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
আগুনে কারখানাটির বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল, উৎপাদিত পণ্য নষ্ট হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরুপণ করা যায়নি।